মৃত্তিকা পরিলেখ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। মৃত্তিকা স্তর বা হরাইজন এবং পরিলেখ বা প্রােফাইলের তুলনা করাে।


 ☀ মৃত্তিকা পরিলেখ কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। মৃত্তিকা স্তর বা হরাইজন এবং পরিলেখ বা প্রােফাইলের তুলনা করাে।




 👉 মাটি গঠনের নিয়ন্ত্রক ও প্রক্রিয়া সমূহের প্রভাবে সৃষ্ট এবং ভূপৃষ্টের সঙ্গে অনুভূমিক ভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যুক্ত এক- একটি পাতলা অথচ সুস্পষ্ট স্তর, যা মাটির উপরের স্তর থেকে নীচে আদী শীলা পর্যন্ত বিস্তৃত সুগঠিত স্তরকে, মৃত্তিকা স্তর বা হেরাজন বলে ।

         মাটির ওপরের স্তর থেকে আদী স্তর পর্যন্ত মোট তিনটি স্তর রয়েছে । যথাক্রমে স্তর গুলি হল – ‘A’  ও  ‘B’  এবং  ‘C’

       মাটির ওপরের স্তর থেকে নীচে আদী শীলা স্তর পর্যন্ত সুগঠিত মাটির লম্বচ্ছেদকে, মাটির স্তরায়ন বা স্তর বিন্যাস বা মাটির প্রোফাইলও বলা হয় । এই মৃত্তিকা পরিলেখের গভীরতা কয়েক সেমি থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হয় ।

   মৃত্তিকা বিজ্ঞানি রুশ ডকুচায়েভ সর্বপ্রথম মাটির পরিলেখের ধারনা দেন । মৃত্তিকার পরিলেখ সাধারনত দু-ই প্রকার । যথা – ( I ) আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখ, ( ii ) অসম্পূর্ণ মৃত্তিকা পরিলেখ বা কর্তিত পরিলেখ ।

একটি আদর্শ মৃত্তিকার পরিলেখের প্রধানত পাঁচটি স্তর দেখা যায় । দুই  বা ততোধিক স্তর বিভক্ত । মৃত্তিকার প্রধান প্রধান স্তরগুলি হল – ক. “O” ,খ. “A” ,গ. “B” ,ঘ. “C” ,ঙ. “D/R” 


ক. “O” স্তর বা জৈবিক স্তর :-

মৃত্তিকার পরিলেখের সবচেয়ে উপরের স্তর হল “O” স্তর । “A” স্তরের উপরে এই স্তরের অবস্থান । এই স্তরটি বিয়োজিত বা অর্ধোবিয়োজিত জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত । জৈব পদার্থের অধিক্যের জন্য এই স্তরের রং গাঢ় বাদামি বর্নের হয় । বানানঞ্ছলের তৃণভূমি অঞ্ছলে এই স্তর বৃত্ত মান । 

  এই “O” স্তর বা জৈবিক স্তর আবার দুটি উপ স্তরে বিভক্ত । যথা – A0/O1 উপস্তর, এবং A0/O2


 খ. “A” স্তর :-

মৃত্তিকা পরিলেখের দ্বিতীয় স্তর বা “O” স্তর এবং “A” স্তরের মাঝে খনিজ পদার্থ যুক্ত ও জৈব পদার্থ যুক্ত স্তরকে “A” স্তর বলে ।উপরের স্তর থেকে সমস্ত খনিজ, জৈব পদার্থ এই স্তরে প্রসারিত হয় ।এই স্তর সূক্ষ্ সূক্ষ্ মাটি কনা দ্বারা গঠিত । এই স্তরে খনিজ পদার্থের পরিমান বেশির থাকায় এই স্তরটি উর্বর । এই স্তর থেকে দ্রবীভূত রাসায়নিক পদার্থ, খনিজ জৈব পদার্থ নীচের স্তরে নেমে যায় । তাই এই স্তরটিকে এলুভিয়েশন স্তর বলে । এই স্তরের মাটির ওপরের অংশ খুবিই আলগা প্রকৃতির হয়, এবং গাছপালা জন্থাতে সাহায্য করে । এই স্তর তিনটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা – “A1 “ ও “A2 “ এবং “A3


 গ. “B” স্তর :-

‘A’ স্তর ও ‘C’ স্তরের মাঝে খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ স্তরটিকে “B” স্তর বলে । এই স্তরটি মৃত্তিকা পরিলেখের তৃতীয় স্তর । এই স্তর থেকে অপসারিত খনিজ পদার্থ জলের মাধ্যমে চুঁইয়ে “B” স্তরে এসে সঞ্ছিত হয় । এই স্তরটিকে ইলুভিয়াল স্তর বলে । এই স্তরট “A” ও “C” স্তরের মাঝে অবস্থান করায় একে আন্তঃমৃত্তিকা স্তর বলে, এই স্তর মাটির পুষ্টি মৌলের ভান্ডার । এই মৃত্তিকার রং কালো । এই স্তরটি তিনটি উপস্তরে বিভক্ত । যথাক্রমে স্তরগুলি হল – “B1 “ ও “B2 “ এবং “B3 “


ঘ. “C” স্তর :-

   সাধারনত মাটির নীচের স্তরটি হল এই “C” স্তর । “B” স্তর এবং আদীশীলার নীচে অবস্থান করেছে এই স্তরটি । এই স্তরে জৈব পদার্থের পরিমান কম থাকে বলে এই মাটির উর্বর ক্ষমতা খুবই কম । এই স্তর মাটির মধ্য সংযোগ রক্ষা করে, এই স্তর দুটি স্তর দ্বারা বিভক্ত । যথা – “C1 “ ও “C2 “


ঙ. “D” স্তর :-

    ‘C’ স্তরের নীচে আদীশীলা দ্রারা গঠিত এই “D” স্তর । এই স্তরটিকে আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রে “R” স্তর বলা হয় ।


 "এই অধ্যায়ের আরোও প্রশ্ন নীচে দেওয়া হলো"

    মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট আলোচনা করো


  •  চার্নোজেম মাটি ও পডসল মাটির মধ্যে পার্থক্য


  •  পেডালফার মাটি ও পেডোক্যাল মাটির মধ্যে পার্থক্য


  •  এলুভিয়েশন স্তর ও ইলুভিয়েশন স্তরের মধ্যে পার্থক্য



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.