প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব কতখানি ছিল ?
Ans. প্রাচীন ভারতের উপাদান গুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । সেগুলি হল
– ১. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, ২. সাহিত্যিক উপাদান । আলোচনার সুবিদার্থে
প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে । যথা – (i)
লিপি/লেখ, (ii) মুদ্রা, (iii) স্থাপত্য ভাষ্কর্য্য । এই সব উপাদান গুলি থেকে
ভারতের অনেক প্রাচীন অজানা তথ্য সম্পর্কে জানা যায় ।
লেখ মালা প্রাচীন ভারত রচনার একটি উৎকৃষ্ট উপাদান
হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে । বস্তুত প্রাচীন ভারতের লুপ্ত ইতিহাস যতটা উদ্ধার করা
সম্ভব হয়েছে, তার বেশির ভাগের জন্য আমরা লেখ মালার কাছে ঋনি । কালের
প্রভাবে সাহিত্যিক উপাদানে পরিবর্তন এলেও লিপির ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়েনি ।
এই লিপি গুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । যেমন - স্তম্ভ লিপি, শিলা লিপি, তাম্র
লিপি ।
লিপি মালা সংক্রান্ত আলোচনা বোঝার সুবিদার্থে দু-টি শ্রেণীতে ভাগ
করা হয়েছে । ক.দেশীয় লিপি, খ. বৈদেশিক বা বিদেশী লিপি ।
ক. দেশীয় লিপি :-
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের সিন্ধু লিপি পাঠ্য আজও সম্ভব হয়নি ।
১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার জেমস প্রিন্সেপ অশোকের শিলা লিপি পাঠোদ্ধার করেছিলেন ।
আবার, অনেকে মনে করেন তাম্র লিপি হল ভারতের প্রচীনতম লিপি । এই লিপি গুলি থেকে প্রাচীন ভারতের অনেক ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে । সমুদ্র গুপ্তের ‘সভাকবি’, হরিষেন রচিত ‘এলাহাবাদ প্রসুস্তি’, সাতকর্ণী রচিত ‘প নাসিক প্রসুস্তি’, দ্বিতীয় চালুক্য রাজ রচিত ‘রবি কীর্তি আইহোল প্রসুস্তি’ প্রভৃতি । এই সব বিভিন্ন লেখ মালা থেকে বিভিন্ন রাজাদের রাজ্য জয়, এবং তাঁদের বহু কীতৃত্ব সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় । এছাড়া ধার্মিক বিশ্বাস ধর্মীয় দিক সম্পর্কেও প্রভূত পূর্ণ ঐতিহাসি ঘটনা জানতে পারা যায় ।
খ. বৈদেশিক বা বিদেশী লিপি :-
বহিঃ ভারতের কিছু শিলা লিপি ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ন । এশিয়ার শিলা লিপিতে পাওয়া আর্যদের ভারত আগমন এবং মেশোপটেমিয়া, ব্যবিলনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে বহু প্রাচীন মূল্যবান তথ্য জানা যায় ।
লিপির গুরুত্ব :-
A. দীর্ঘ্য স্থায়ী লিপি : শিলা বা ধাতু খন্ডে গঠিত ধাতুগুলি নষ্ট হয়ে যায় না ।
B. অপরিবর্তিত লিপি : ঐতিহাসিক উপাদান গুলির মধ্যে লিপির পরিবর্তন হয় না ।
C. রাজ্য সীমানা : লিপি প্রাপ্তির স্থান থেকে বিভিন্ন রাজার রাজ্যের সীমানা জানা যায় ।
D. সময়কাল : লিপি মালা থেকে সেই যুগের সময়ের বর্ণনা বা অনুমান করা যায় ।
E. বিশ্বাস- যোগ্যতা : লিপির তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে অন্যান্য ঐতিহাসিক উপাদান তত্ত্বের বিশ্বাস - যোগ্যতা বিচার করা যায় ।
F. শাসন নীতি : এছাড়া লিপি থেকে রাজার শাসন, রাজস্ব, ভূমিদাস, শিল্প প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় ।
মুদ্রার গুরুত্ব :-
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের রচনার উপাদান হলো মুদ্রা । এই সময় সোনা, রুপো, তামা, সীসা প্রভৃতি ধাতুর মুদ্রা নির্মিত হতো ।
ভারতের ৩০ জন ব্যাকটেরিও গ্রিক রাজার পরিচয় জানার একমাত্র উপাদান হলো মুদ্রা । শিখ, কুষান -দের ইতিহাস জানার জন্য সর্ন মুদ্রার উপর সর্বাধিক নির্ভর করতে হয় । সাতবাহন রাজাদের মুদ্রা, পাল রাজাদের মুদ্রায, ছাড়াও মৌর্য, গুপ্ত প্রভৃতি যুগের ইতিহাস জানতে হলে সেই সময়কার মুদ্রার উপর নির্ভর করতে হয় ।
A. রাজ বংশের পরিচয় : মুদ্রা থেকে রাজা বা রাজবংশের নাম, বংশ পরিচয়, রাজত্বকাল প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় ।
B. সিংহাসন আরোহন কাল : মুদ্রায় উল্লেখিত তারিখ থেকে রাজার সিংহাসন আরোহন কাল থেকে শুরু করে অন্যান্য স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় ।
C. ধর্ম বিশ্বাস : মুদ্রায় ব্যবহৃত দেব - দেবীর মূর্তি থেকে ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মের পরিচয় পাওয়া যায় ।
D. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : মুদ্রায় ব্যবহৃত ধাতুর সাল থেকে সেই যুগের অর্থনীতিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় ।
মূল্যায়ন :- অবশেষে বলা যেতে পারে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব অসামান্য । প্রাচীন যুগের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে সেই যুগের সমাজৃজীবন, কৃষি ব্যবস্থা, ধর্ম বিশ্বাস, প্রভৃতি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় ।