অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি একটি বা দুটি বাক্যে উত্তর দাও :
1. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ গ্রহণ করা কি বাধ্যতামূলক ?
👉 না , সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয় ।
2. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কী নেই ?
👉 সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সার্বভৌমিকতা নেই |
3. রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে যে কোনো একটি পার্থক্য উল্লেখ করো ।
👉 মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল । কিন্তু অন্যান্য সংগঠনগুলির উৎপত্তি নেহাতই স্বেচ্ছামূলক |
4. সংঘ কাকে বলে ?
👉 কোনো বিশেষ একটি বা কয়েকটি উদ্দেশ্যসাধনের জন্য কিছু সংখ্যক ব্যক্তি সংঘবদ্ধ হলে তাকে সংঘ বলা হয় |
5. রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করার প্রধান উপাদান কী ?
👉 রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করার প্রধান উপাদান হল সার্বভৌমত্ব ।
6. সংঘ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বপ্রধান পার্থক্যটি কী ?
👉 সংঘ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বপ্রধান পার্থক্য হল - সংঘের সার্বভৌমিকতা নেই , রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা আছে ।
7.রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো ।
👉 রাষ্ট্রও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য
আধুনিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে । প্রতিষ্টান হিসেবে রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য বা বৈশাদৃশ্য বিদ্যমান ।
সাদৃশ্য -
[ 1 ] সমাজবোধ : রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন — এ সবেরই সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সমাজবোধ থেকে ।
[ 2 ] সদস্যসংখ্যা : রাষ্ট্রের জনসমষ্টির মতো অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিরও নির্দিষ্ট সদস্য রয়েছে ।
[ 3 ] শৃঙ্খলা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় আইনকানুন মেনে চলতে বাধ্য হয় । একইভাবে সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠন প্রণীত নিয়মকানুন মেনে চলে ।
[ 4 ] পরিচালন পদ্ধতি : সরকার হল রাষ্ট্রের পরিচালক , তেমনই সামাজিক সংগঠনগুলি চালনা করেন পরিচালকমণ্ডলী ।
[ 5 ] কর্তব্য : নাগরিকরা যেভাবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগসুবিধা ও অধিকার ভোগের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করে , তেমনই সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠনের সুযোগসুবিধা ভোগের বিনিময়ে কয়েকটি নিদিষ্ট কর্তব্য পালন করে ।
[ 6 ] বিবর্তন সামাজিক বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় । একইভাবে অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিও সমাজবিবর্তনের ধারায় জন্ম লাভ করে ।
বৈসাদৃশ্য :-
বিষয় | রাষ্ট্র | সামাজিক সংগঠন |
---|---|---|
1. উৎপত্তি | উৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায় , মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল । | সামাজিক সংগঠনগুলির উৎপত্তি নেহাতই স্বেচ্ছামূলক । |
2. সদস্যগন | রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী প্রায় সব মানুষই রাষ্ট্রের সদস্য । রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক | কোনো ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারেন না । | সামাজিক সংগঠনের সদস্যসংখ্যা রাষ্ট্রের সদস্যসংখ্যার এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ । সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন । কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক সংগঠনের সদস্য হতে পারেন । |
3. উদ্দেশ্য | সর্বাঙ্গীণ জনকল্যাণের জন্য রাষ্ট্রকে বহুমুখী উদ্দেশ্য পূরণ করতে হয় । | সামাজিক সংগঠনগুলি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসাধনের জন্য গঠিত হয় । যেমন , কোনো ক্রীড়া সংগঠনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র খেলাধুলোর বিকাশ ঘটানো । |
4. আকৃতি | আকৃতির বিচারে রাষ্ট্র বিশাল | | রাষ্ট্রের তুলনায় সামাজিক সংগঠন ক্ষুদ্র । |
5 . ভূখন্ড | প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা থাকে , রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মপরিধি সেই সীমানার মধ্যে আবদ্ধ । | কোনো কোনো সামাজিক সংগঠনের কর্মপরিধি পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে । উদাহরণস্বরূপ , রামকৃস্ন মিশনের কথা বলা যায় |
6. স্থায়িত্ব | রাষ্ট্র চিরস্থায়ী প্রতিষ্ঠান , এর একটা সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা আছে | | সামাজিক সংগঠনগুলি ক্ষণস্থায়ী । |
7. সার্বভৌম ক্ষমতা | সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য , সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বলা যায় না । | সামাজিক সংগঠনগুলির ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রশ্ন অবাস্তব । |
8. অধীনতা | রাষ্ট্র কোনো সংগঠনের অধীনে থাকে না । | সামাজিক সংগঠনগুলি রাষ্ট্রের অধীন | যে - কোনো সংগঠনকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুনের প্রতি অনুগত থাকতে হয় | |
9. অনুমোদন | রাষ্ট্রের সৃষ্টি কোনো সামাজিক সংগঠনের অনুমোদন বা উদ্যোগের ওপর নির্ভর করে না । | রাষ্ট্রের অনুমোদন ও উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক সংগঠনগুলির জন্ম হয় । |
10. মানব জীবনে অভাব | রাষ্ট্র প্রধানত মানবজীবনের বাহ্যিক দিকটিকে নিয়ন্ত্রণ করে । | মানুষের অন্তজীবনের বিকাশে সামাজিক সংগঠনের প্রভাব অনেক বেশি গভীর | ম্যাকাইভার বলেছেন , পেনসিল কাটার জন্য কুঠার যেমন অনুপযুক্ত , ঠিক তেমনই মানুষের অন্তর্জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলির বিকাশে রাষ্ট্রও অনুপযুক্ত । |
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় , রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে মৌলিক প্রভেদ থাকলেও মানবজীবনের বিকাশে উভয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য । বার্কারের মতে , রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত , এরা একে অপরের পরিপূরক । |
---|
7.
>☀ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যায় কি ?
👉
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যায় কি না :-
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ রাষ্ট্রের মতো একটি প্রতিষ্ঠান হওয়ায়
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যাবে কি না সে সম্পর্কে প্রশ্ন
জাগে | জাতিপুঞ্জ রাষ্ট্র কি না সে সম্পর্কে মতামত দিতে হলে দেখা
দরকার রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে চারটি উপাদানের প্রয়োজন , যেমন—
জনসংখ্যা , নির্দিষ্ট ভূখণ্ড , সরকার ও সার্বভৌমিকতা , এগুলি
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের আছে কি না ।
[ 1 ] জনসংখ্যা : রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য জনসংখ্যা আবশ্যক
। কারণ , জনসংখ্যা ছাড়া রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না । কিন্তু
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সেই অর্থে জনসংখ্যা নেই । কারণ , জনগণনার
পরিসংখ্যানে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের জনসংখ্যার কোনো উল্লেখ নেই ।
জাতিপুঞ্জের কর্মচারী হিসেবে যাঁরা কাজ করেন তারাও অন্য দেশের
নাগরিক ।
[ 2 ] নির্দিষ্ট ভূখণ্ড : রাষ্ট্র গড়ে ওঠার দ্বিতীয়
অপরিহার্য উপাদান হল নির্দিষ্ট ভূখণ্ড । সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের
কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নেই । পৃথিবীর মানচিত্রে জাতিপুঞ্জের
অবস্থানের কোনো উল্লেখ নেই । জাতিপুঞ্জের কার্যাবলি পরিচালনার
জন্য জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার দফতরগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
অবস্থিত ।
[ 3 ] সরকার : রাষ্ট্র গঠনের জন্য তৃতীয় উপাদান হল সরকার
। সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না । কারণ রাষ্ট্রের
কার্যাবলি সরকারের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় । জাতিপুঞ্জের
কার্যাবলি পরিচালনার জন্য মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি পরিচালকমণ্ডলী
আছে । অনেকে জাতিপুঞ্জের এই পরিচালকমণ্ডলীকেই সরকার বলে অভিহিত
করেন ।
[ 4 ] সার্বভৌমিকতা : রাষ্ট্র গঠনের জন্য সর্বাপেক্ষা
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সার্বভৌমিকতা । সার্বভৌমিকতা ছাড়া কোনো
রাষ্ট্র কল্পনাই করা যায় না । সার্বভৌমিকতা বলতে রাষ্ট্রের
চূড়ান্ত , অপ্রতিহত ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাকে বোঝায় | সম্মিলিত
জাতিপুঞ্জ হল কতকগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংগঠন । জাতিপুঞ্জ তার
সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে কোনো নির্দেশ দিতে পারে না , কেবল অনুরোধ করে
| সদস্যরাষ্ট্রগুলি সেই অনুরোধ মানতেও পারে , নাও মানতে পারে ।
সুতরাং , সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সার্বভৌমিকতা নেই ।
মূল্যায়ন :
উপরের বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে , কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র
বলে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যে চারটি উপাদান আবশ্যক তার মধ্যে
জাতিপুঞ্জের একটি উপাদান , অর্থাৎ সরকার আছে, অন্য তিনটি উপাদান,
যথা - জনসংখ্যা, নিদিষ্ট ভূখন্ড ও সার্বভৌমিকতা নেই । সুতরাং,
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ রাষ্ট্র নয় ।
|
---|