ভারতের জনবসতির ঘনত্ব বা জনঘনত্ম
( Very low density population region )
সংজ্ঞা : কোনো নিদিষ্ট স্থানে কতক গুলি নিদিষ্ট সুযোগ - সুবিধার ভিত্তিতে একধিক মানুষের যে, সম্মিলিত স্থায়ী আবাসকাল গড়ে ওঠে সেই স্থানকে জনবসতি বলা হয় । জনবসতি শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল - Settlement যা গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভুত ।
বৈশিষ্ট : জনবসতি সম্পর্কে যত বলা যায় ততোই কম । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্যগুলি হল -
( 1 ) জনবসতি হল প্রকৃতি প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করার আশ্রয় স্থল ।
( 2 ) জনবসতির মধ্যকাল আদিবসীদের মধ্যে নিদিষ্ট সংস্কৃতি ও সমধিকার লক্ষ করা যায় ।
( 3 ) নিদিষ্ট জনবসতিতে মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় স্বাধিন ভাবে বসবাস করতে পারে ।
( 4 ) একটি বসতি মানুষকে নিরপত্তা প্রদান করে, ইত্যাদি ।
জনবসতির শ্রেনি বিভাগ :-
বিভিন্ন বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে মানুষের বসতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা -
বৈশিষ্ট বা ভিত্তি | শ্রেণি বিভাগ | উদাহরন |
---|---|---|
১. কর্মধারা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে |
( i ) গ্রামীন বসতি ( ii ) পৌরবসতি |
( i ) পশ্চিম বঙ্গের গ্রাম সমূহ ( ii ) কলকাতা নগর |
২. স্থায়িত্বের ভিত্তিতে |
( i ) স্থায়ী বসতি ( ii ) অস্থায়ী বসতি |
( i ) কৃষিনির্ভর গ্রাম ( ii ) এক্সিমোদের বসতি বা যাযাবর বসতি |
৩. আয়তনের ভিত্তিতে |
( i ) ক্ষুদ্র গ্রাম বা হ্যামলেট ( ii ) গ্রাম ( iii ) শহর ( iv ) নগর |
( i ) পূর্বতন কুমোর টুলি ( ii ) পশ্চিম বঙ্গের গ্রাম ( iii ) শিলিগুড়ি, হাওড়া ( iv ) কলকাতা, মুম্বাই |
৪. বয়স ভিত্তিক অনুসারে |
( i ) প্রাচীন যুগের বসতি ( ii ) মধ্যযুগের বসতি ( iii ) আধুনিক যুগের বসতি |
( i ) হরপ্পা ( ii ) দিল্লি, আগ্রা ( iii ) চন্ডীগড়, ভুবনেশ্বর |
৫. অবস্থানের ভিত্তিতে |
( i ) জলাশয় বসতি ( ii ) পাহাড়ি অঞ্ছলের বসতি ( iii ) সমভূমি অঞ্ছলের বসতি |
( i )নদী কেন্দ্রিক বসতি (ii ) দার্জিলিং ( iii ) গাঙ্গেয় সমভূমি |
পৌর বসতির সংজ্ঞা : লাতিন শব্দ orbis বা গ্রিক শব্দ Gorov থেকে ইংরাজীর Urvan শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে । যির অর্থ হল 'পৌর' । অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ভিত্তিতে সঙ্গবদ্ধ ভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধার ওপর ভিত্তি করে যে গোষ্ঠি বদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে তাকে পৌর বসতি বলা হয় । এই পৌর বসতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন - ভারতে, 'সিটি', সুইডেনে, 'স্টাডেন' প্রভৃতি ।
বৈশিষ্ট :
( 1 ) এই পৌরবসতির জন সংখ্যার পরিমান ৫০০০ হাজারেরও বেশি ।
( 2 ) প্রতিবর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব পরিমান ৩৮৬ বেশি ।
( 3 ) ৭৫% বেশি জনগন কৃষিকাজে নিযুক্ত থাকবে না
( 4 ) গ্রামীণ বসতির জনগন তুলনামূলক বেশি ।
( 5 ) এই বসতির অধিবাসীদের মান উন্নত ধরনের ।
( 6 ) এই বসতির অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক, মানসিক ক্ষেত্রে বৈচিত্র প্রচুর ।
গোষ্ঠিবদ্ধ বসতির সংজ্ঞা : ভূপৃষ্ঠের কোনো নিদিষ্ট স্থানে কতকগুলি নিদিষ্ট সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে একধিক মানুষের জন্য যে সম্মিলিত আবাস স্থল গড়ে ওঠে তাকে গোষ্ঠিবদ্ধ বসতি বা পিন্ডাকৃতি বসতিও বলে । গোষ্ঠিবদ্ধ বসতি গ্রমীণ ও পৌর উভয়ই হতে পারে । পৃথিবীর সর্বত্র এই বসতির সংখ্যা বেশি । যেমন - গাঙ্গেয় সমভূমি বসতি অঞ্ছল ।
বৈশিষ্ট :
( 1 ) গোষ্ঠিবদ্ধ বসতির বসতির প্রতিটি বাড়ির দূরত্ব যথেষ্ট কম ।
( 2 ) এরূপ বসত বাড়িগুলির একত্র সমাবশ লক্ষ করা যায় ।
( 3 ) অধিবাসীদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক্য গড়ে ওঠে ।
( 4 ) এরূপ বসতিতে নিবিড় কৃষি পদ্ধতির প্রধান্য অধিক লক্ষনীয় ।
( 5 ) শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা এবং দোকান - বাজার প্রভৃতি অর্থনীতি এরূপ বসতিতে লক্ষ করা যায় ।
( 6 ) এরূপ বসতিতে পরিবহনের সু-বন্দোবস্ত থাকে ।
বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতি : ভূপৃষ্টের কোনো স্থানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও অর্থসামাজিক কারনে একটি বা কয়েকটি পরিবার, অন্য একটি পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করে, সেই বসতিগুলাকে বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতি ভলে । যেমন - পার্বত্য বা মালভূমি অঞ্ছলে এরূপ বসতি লক্ষ করা যায় ।
বৈশিষ্ট :
( 1 ) এই বসতির বাড়িগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব যথেষ্ট বেশি ।
( 2 ) এই বসতিতে বসত বাড়িগুলি বিক্ষিপ্ত অবস্থানে দেখা যায় ।
( 3 ) এই বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতির অধিবাসীদের সামাজিক যোগাযোগের সুবিধা অনেকটা কম ।
( 4 ) এই বসতির বাড়িগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি থাকায় নিরাপত্তা যথেষ্ট কম ।
( 5 ) এই বসতিতে শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতির সুযোগ সবিধা যথেষ্ট কম ।
রৈখিক বসতি : প্রাকৃতিক বা সামাজিক কারনে নদী, খাল, রেলল পথ, সড়ক পথ, প্রভৃতির সমান্তরালে সারাবদ্ধ ভাভে বসতি সৃষ্টি হলে, সেই বসতি গুলিকে রৈখিক বসতি বলে ।
বৈশিষ্ট :
( 1 ) সড়ক পথ, রেল পথ, নদী বা খালের সমান্তরালে এই বসত বাড়ি গুলির অবস্থান ।
( 2 ) এই ধরনের বসত বাড়িগুলি শহরাঞ্ছলের কাছাকাছি বা শহরের কিছুটা দূরে গড়ে উঠতে দেখা যায় ।
( 3 ) এই ধরনের বসত বাড়িগুলিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকে ।
( 4 ) অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে ।
( 5 ) সাধারনত ঘাস জমিকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে ।
☀ জনগননা অনুযায়ী বা জনসংখ্যার আয়তন অনুযায়ী পৌর বসতির শ্রেণিবিভাগ -
পৌর বসতির প্রকার ভেদ | জনসংখ্যা | উদাহরন |
---|---|---|
প্রথম শ্রেণির পৌরবসতি | ১ লক্ষ বা তার বেশি জনগন | মুম্বাই, কলকাতা |
দ্বতীয় শ্রেণির পৌরবসতি | ৫০ হাজার জন থেকে ৯৯৯৯৯ জন | রানপুর হাট |
তৃতীয় শ্রেণির পৌরবসতি | ২০ হাজার থেকে ৪৯৯৯৯ জন | কোচবিহার |
চতুর্থ শ্রেণির পৌরবসতি | ১০ হাজার জন থেকে ১৯৯৯৯ জন | শিঙ্গুর |
পঞ্ছম শ্রেণির পৌরবসতি | ৫০০০ জন থেকে ৯৯৯৯ জন | নবগ্রাম |
ষষ্ঠ শ্রেণির পৌরবসতি | ৫০০০ জনেরওকম | বিষ্নু পুর |
মহানগরের বৈশিষ্ট :