Class12 ভারতের জনবসতির ঘনত্ব বা জনঘনত্ম সম্পূর্ন অধ্যায়


ভারতের জনবসতির ঘনত্ব বা জনঘনত্ম

( Very low density population region )


 সংজ্ঞা :  কোনো নিদিষ্ট স্থানে কতক গুলি নিদিষ্ট সুযোগ - সুবিধার ভিত্তিতে একধিক মানুষের যে, সম্মিলিত স্থায়ী আবাসকাল গড়ে ওঠে সেই স্থানকে জনবসতি বলা হয় । জনবসতি শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল - Settlement যা গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভুত ।


 বৈশিষ্ট : জনবসতি সম্পর্কে যত বলা যায় ততোই কম । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্যগুলি হল - 

          ( 1 ) জনবসতি হল প্রকৃতি প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করার আশ্রয় স্থল ।

          ( 2 ) জনবসতির মধ্যকাল আদিবসীদের  মধ্যে নিদিষ্ট সংস্কৃতি ও সমধিকার লক্ষ করা যায় ।

          ( 3 ) নিদিষ্ট জনবসতিতে মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় স্বাধিন ভাবে বসবাস করতে পারে ।

          ( 4 ) একটি বসতি মানুষকে নিরপত্তা প্রদান করে, ইত্যাদি ।


 জনবসতির শ্রেনি বিভাগ :- 

     বিভিন্ন বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে মানুষের বসতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা -

বৈশিষ্ট বা ভিত্তি শ্রেণি বিভাগ উদাহরন
 ১. কর্মধারা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে  ( i ) গ্রামীন বসতি
 ( ii ) পৌরবসতি
 ( i ) পশ্চিম বঙ্গের গ্রাম সমূহ
 ( ii ) কলকাতা নগর
 ২. স্থায়িত্বের ভিত্তিতে  ( i ) স্থায়ী বসতি
 ( ii ) অস্থায়ী বসতি
 ( i ) কৃষিনির্ভর গ্রাম
 ( ii ) এক্সিমোদের বসতি বা যাযাবর বসতি
 ৩. আয়তনের ভিত্তিতে  ( i ) ক্ষুদ্র গ্রাম বা হ্যামলেট
 ( ii ) গ্রাম
 ( iii ) শহর
 ( iv ) নগর
 ( i ) পূর্বতন কুমোর টুলি
 ( ii ) পশ্চিম বঙ্গের গ্রাম
 ( iii ) শিলিগুড়ি, হাওড়া
 ( iv ) কলকাতা, মুম্বাই
 ৪. বয়স ভিত্তিক অনুসারে  ( i ) প্রাচীন যুগের বসতি
 ( ii ) মধ্যযুগের বসতি
 ( iii ) আধুনিক যুগের বসতি
 ( i ) হরপ্পা
 ( ii ) দিল্লি, আগ্রা
 ( iii ) চন্ডীগড়, ভুবনেশ্বর
 ৫. অবস্থানের ভিত্তিতে  ( i ) জলাশয় বসতি
 ( ii ) পাহাড়ি অঞ্ছলের বসতি
 ( iii ) সমভূমি অঞ্ছলের বসতি
 ( i )নদী কেন্দ্রিক বসতি
 (ii ) দার্জিলিং
 ( iii ) গাঙ্গেয় সমভূমি


 গ্রামীণ জনবসতির সংজ্ঞা :  ভৌগলিকদের মতে কৃষি জমি, তৃণ ভূমি, উন্মুক্ত খোলামেলা ও বৃস্তিত জায়গায় গোষ্টিবদ্ধ বা বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে ওঠা বসতিকে গ্রামীণ জনবসতি বলে । এই বসতির অধিবাসীদের প্রধান কাজ কৃষা কাজ, পশুপালন, মৎস শিকার, বনজ দ্রব্য সংগ্রহ প্রভৃতি । এরা অতি সাধারন প্রকৃতির হয়ে থাকে ।

 বৈশিষ্ট :  
        ( 1 ) বসতি এলাকার জনসংখ্যা ৫০০০ -এর কম হবে ।
         ( 2 ) জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিমিতে ৩৮৬ জনেরও কম হবে ।
         ( 3 ) অধিবাসীদের ৭৫% কৃষি ও অন্যান্য কৃষি ভিত্তিক কাজে নিযুক্ত থাকবে 
         ( 4 ) গ্রামীণ বসতির আয়তন তুলনা মূলক ছোটো ।
         ( 5 ) গ্রামীণ বসতির জীবন ধারার মান অনুন্নত প্রকৃতির ।
         ( 6 ) এই বসতির অধিবাসীদের মধ্যে সমমানুষিকতা ও ঐক্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।


 পৌর বসতির সংজ্ঞা :   লাতিন শব্দ orbis বা গ্রিক শব্দ Gorov থেকে ইংরাজীর Urvan শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে । যির অর্থ হল 'পৌর' । অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ভিত্তিতে সঙ্গবদ্ধ ভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধার ওপর ভিত্তি করে যে গোষ্ঠি বদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে তাকে পৌর বসতি বলা হয় । এই পৌর বসতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন - ভারতে, 'সিটি', সুইডেনে, 'স্টাডেন' প্রভৃতি ।

   বৈশিষ্ট : 

         ( 1 ) এই পৌরবসতির জন সংখ্যার পরিমান ৫০০০ হাজারেরও বেশি ।

         ( 2 ) প্রতিবর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব পরিমান ৩৮৬ বেশি ।

         ( 3 ) ৭৫% বেশি জনগন কৃষিকাজে নিযুক্ত থাকবে না 

         ( 4 ) গ্রামীণ বসতির জনগন তুলনামূলক বেশি ।

         ( 5 ) এই বসতির অধিবাসীদের মান উন্নত ধরনের ।

         ( 6 ) এই বসতির অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক, মানসিক ক্ষেত্রে বৈচিত্র প্রচুর ।


 গোষ্ঠিবদ্ধ বসতির সংজ্ঞা :  ভূপৃষ্ঠের কোনো নিদিষ্ট স্থানে কতকগুলি নিদিষ্ট সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে একধিক মানুষের জন্য যে সম্মিলিত আবাস স্থল গড়ে ওঠে তাকে গোষ্ঠিবদ্ধ বসতি বা পিন্ডাকৃতি বসতিও বলে । গোষ্ঠিবদ্ধ বসতি গ্রমীণ ও পৌর উভয়ই হতে পারে । পৃথিবীর সর্বত্র এই বসতির সংখ্যা বেশি । যেমন - গাঙ্গেয় সমভূমি বসতি অঞ্ছল ।

  বৈশিষ্ট :

         ( 1 ) গোষ্ঠিবদ্ধ বসতির বসতির প্রতিটি বাড়ির দূরত্ব যথেষ্ট কম ।

         ( 2 ) এরূপ বসত বাড়িগুলির একত্র সমাবশ লক্ষ করা যায় ।

         ( 3 ) অধিবাসীদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক্য গড়ে ওঠে ।

          ( 4 ) এরূপ বসতিতে নিবিড় কৃষি পদ্ধতির প্রধান্য অধিক লক্ষনীয় ।

          ( 5 ) শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা এবং দোকান - বাজার প্রভৃতি অর্থনীতি এরূপ বসতিতে লক্ষ করা যায় । 

          ( 6 ) এরূপ বসতিতে পরিবহনের সু-বন্দোবস্ত থাকে ।


 বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতি :  ভূপৃষ্টের কোনো স্থানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও অর্থসামাজিক কারনে একটি বা কয়েকটি পরিবার, অন্য একটি পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করে, সেই বসতিগুলাকে বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতি ভলে । যেমন - পার্বত্য বা মালভূমি অঞ্ছলে এরূপ বসতি লক্ষ করা যায় ।

  বৈশিষ্ট :

          ( 1 ) এই বসতির বাড়িগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব যথেষ্ট বেশি ।

          ( 2 ) এই বসতিতে বসত বাড়িগুলি বিক্ষিপ্ত অবস্থানে দেখা যায় ।

          ( 3 ) এই বিক্ষিপ্র বা বিচ্ছিন্ন বসতির অধিবাসীদের সামাজিক যোগাযোগের সুবিধা অনেকটা কম ।

           ( 4 ) এই বসতির বাড়িগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি থাকায় নিরাপত্তা যথেষ্ট কম ।

           ( 5 ) এই বসতিতে শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতির সুযোগ সবিধা যথেষ্ট কম ।


  রৈখিক বসতি :  প্রাকৃতিক বা সামাজিক কারনে নদী, খাল, রেলল পথ, সড়ক পথ, প্রভৃতির সমান্তরালে সারাবদ্ধ ভাভে বসতি সৃষ্টি হলে, সেই বসতি গুলিকে  রৈখিক বসতি বলে ।

   বৈশিষ্ট :

         ( 1 ) সড়ক পথ, রেল পথ, নদী বা খালের সমান্তরালে এই বসত বাড়ি গুলির অবস্থান ।

         ( 2 ) এই ধরনের বসত বাড়িগুলি শহরাঞ্ছলের কাছাকাছি বা শহরের কিছুটা দূরে গড়ে উঠতে দেখা যায় ।

         ( 3 ) এই ধরনের বসত বাড়িগুলিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকে ।

         ( 4 ) অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে ।

         ( 5 ) সাধারনত ঘাস জমিকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে ।


  ☀ জনগননা অনুযায়ী বা জনসংখ্যার আয়তন অনুযায়ী পৌর বসতির শ্রেণিবিভাগ -

পৌর বসতির প্রকার ভেদ জনসংখ্যা উদাহরন
 প্রথম শ্রেণির পৌরবসতি  ১ লক্ষ বা তার বেশি জনগন  মুম্বাই, কলকাতা
 দ্বতীয় শ্রেণির পৌরবসতি  ৫০ হাজার জন থেকে ৯৯৯৯৯ জন  রানপুর হাট
 তৃতীয় শ্রেণির পৌরবসতি  ২০ হাজার থেকে ৪৯৯৯৯ জন  কোচবিহার
 চতুর্থ শ্রেণির পৌরবসতি  ১০ হাজার জন থেকে ১৯৯৯৯ জন  শিঙ্গুর
 পঞ্ছম শ্রেণির পৌরবসতি  ৫০০০ জন থেকে ৯৯৯৯ জন  নবগ্রাম
 ষষ্ঠ শ্রেণির পৌরবসতি  ৫০০০ জনেরওকম  বিষ্নু পুর


 মহানগরের বৈশিষ্ট : 

        ( 1 ) মহানগরের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ বা তার বেশি হয় । তাই মহানগরকে মিলিয়ন প্লাস সিটিজ বলা হয় ।
        ( 2 )এখানে আঞ্ছলিক শিল্প ও পাইকারি ব্যবসায় বহুল স্বাধীনতা আছে ।
        ( 3 ) লুই বামফোর্ডের মতে মহানগর হল শহর বিবর্তনের সর্বচ্চ পর্যায় ।
       ( 4 ) মহানগরে দেশিয় মানুষ ছাড়াও বিদেশি মানুষ বসবাস করে ।
       ( 5 ) মহানগর আর্থিক দিক থেকে খুবই উন্নত ।
       ( 6 ) মহানগর শহর মুখী পরিব্রাজনের কেন্দ্রমুখী ।

  CBD :  central business district বা কেন্দিয় বানির্জ্যিক এলাকা । নগর বা শহরের কেন্দ্র মূলক ত্ঋতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিন ভাবে জড়িত এলাকাকে CBD কেন্দ্রিক এলাকা বলে ।

 রারবান :  C. J. Galpin সর্বপ্রথম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রামীন পৌর বসতির মিশ্রিত  রূপকে প্রকাশ করার জন্য এই রারবান শব্দটি ব্যবহার করেন । ধগরের সীমানার বেশ কিছু দূর পর্যন্ত পৌরবসতি ও কৃষিজমি এমন মিশ্র অবস্থায় থাকে যে, ওই এলাকটিকে সম্পূর্ন ভাবে গ্রাম বা শহর বলা যাবে না । তাই একে গ্রাম-পৌর উপকন্ঠ বা রারাবান বলে । 


Next Page 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.