উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । পাঠক নাম করণের সাহায্যে পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে ধারণা
লাভ করে । নামকরণ কখনও চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনও ঘটনাকেন্দ্রিক, আবার কখনও - বা
ব্যঞ্জনাধর্মীও হয়ে থাকে । এখন ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির নামকরণ কতটা সার্থক
ও যুক্তিযুক্ত সেটাই আমাদের বিচার্য বিষয় ।
এই কবিতায় কবি তার ভালোবাসার জনকে অপেক্ষমান রেখে বহুদুরে চলে যান
। কবির সেই প্রিয়জনের অপেক্ষা অন্তহীন । সে জানেই না যে, তার প্রিয়তম আর ফিরে
আসবে না প্রিয়তমের স্মৃতি বুকে নিয়ে অতৃপ্ত প্রিয়া অপেক্ষা করতে থাকে । অথচ
দৈনন্দিন জীবন থেমে থাকে না । ক্রমে দীর্ঘ অদর্শনজনিত বেদনার ফলে সময়গুলো তার
মাথার ওপরে পাথরের মতো ভারী হয়ে চেপে বসে ।
এরপর ভয়ংকর যুদ্ধে ঘরবাড়ি, জনপদ ধ্বংস হতে থাকে,এমনকি শিশুরা
পর্যন্ত খুন হয় কিন্তু সেই অপেক্ষমান মেয়েটির মৃত্যু হয় না । যুদ্ধের ফলে
সমতলসহ দেবালয়, কবির স্বপ্নের বাড়ি, বারান্দা, গাছ, ঝুলন্ত বিছানা সব চূর্ণ
হয়ে জ্বলে যায় । শহর জ্বলে - পুড়ে বিনষ্ট হয়, চারদিকে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা,
দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের কালো দাগ ।
অথচ, এত সবের মধ্যেও মেয়েটি তার ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস রেখে
ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যায় । কবি যেন বোঝাতে চান মানুষের অন্তরের অপেক্ষা ও
স্বপ্নের বিনাশ নেই । আর সেই অধরা স্বপ্নের অন্বেষণে দুঃখিত হৃদয়ের আর্তি ও
আকুতিতেই লুকিয়ে থাকে জীবনের গভীর অর্থবহতা । এভাবেই “অসুখী একজন” এই
ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণটি তাৎপর্যবাহী ও যথাযথ হয়ে ওঠে ।