
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
৫৬. নিক বিন্দু কী?
উঃ নদীর পুরানো মৃদু ঢালের যে বিন্দু থেকে নতুন খাড়া ঢাল শুরু হয়, তাকে নিক বিন্দু বলে।
৫৭. খরস্রোত কাকে বলে?
উঃ বেশি ঢাল বিশিষ্ট জলপ্রপাতকে খরস্রোত বলে।
৫৮. কাসকেড কী?
উঃ ধাপে ধাপে নেমে আসা জলপ্রপাতের নাম কাসকেড।
৫৯. ক্যাটার্যাক্ট কী?
উঃ বিপুল পরিমাণ জলবিশিষ্ট জলপ্রপাত ক্যাটারাক্ট নামে পরিচিত।
৬০. মন্থকূপ কাকে বলে?
উঃ জলপ্রপাতের পাদদেশে নদীর জল অনেক সময় ঘূরপাক খেয়ে আবর্তিত হতে থাকে। ফলে জলের মধ্যস্থিত শিলাখণ্ডের ঘর্ষণে নদীগর্ভে গোলাকার গর্ত সৃষ্টি হয়। একে মন্থকূপ বলে।
৬১. প্রপাতকূপ কাকে বলে?
উঃ জলপ্রপাতের জলের সঙ্গে পতিত বড়ো শিলাখণ্ডের আঘাতে সৃষ্ট বিশালাকার হাঁড়ির মতো গর্তের নাম প্রপাতকূপ।
৬২. গাঠনিক শিলাধাপ কী?
উঃ কঠিন ও কোমল শিলা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে, বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে নদী উপত্যকার পার্শ্বদেশে বিভিন্ন ধাপের সৃষ্টি হয়। একে গাঠনিক শিলাধাপ বলে।
৬৩. সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট চারটি ভূমিরূপের নাম লেখো।
উঃ সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল – পলল ব্যজনী, মিয়েণ্ডার, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, বদ্বীপ ইত্যাদি।
৬৪. পলল শঙ্কু কাকে বলে?
উঃ পার্বত্য অঞ্চল থেকে নদী সমভূমিতে প্রবেশ করলে ভূমির ঢাল হঠাৎ খুব কমে যায়। তখন নদীর বহন ক্ষমতা থাকে না। ফলে নদীবাহিত পদার্থের সঞ্চয় শুরু হয়। পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে পলল শঙ্কু বলে।
৬৫. পলল ব্যজনী কাকে বলে?
উঃ পলল শঙ্কুর উপর দিয়ে নদীর প্রবাহ বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলে পলল শঙ্কু অর্ধ গোলাকার রূপ নেয়। একে পলল ব্যজনী বলে।
৬৬. পলল পাখা কাকে বলে?
উঃ হাত পাখার মতো দেখতে পলল ব্যজনীকে পলল পাখা বলে।
৬৭. মিয়েন্ডার কী?
উঃ সমভূমিতে নদীর বেগ অত্যন্ত কম থাকে বলে বাধা পেলেই নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বাঁকের যে অংশে জলস্রোত ধাক্কা খায় সেখানে ক্ষয় হয় এবং বিপরীত অংশে বাঁকের ভিতরের দিকে পলল সঞ্চিত হয়। একে পয়েণ্টবার বা বিন্দুবার বলে। বিন্দুবার ক্রমশ প্রসারিত হয়। এইভাবে ক্রমশ নদীতে অনেক বাঁকের সৃষ্টি হয় একে মিয়েণ্ডার বলে।
৬৮. নদীচর বা চরা কাকে বলে?
উঃ বহন ক্ষমতা না থাকলে নদীবাহিত পদার্থসমূহ নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে যে চড়ার সৃষ্টি করে তাকে নদীচর বা চরা বলে।
৬৯. ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ কোনটি?
উঃ ব্রহ্মপুত্র নদের মাজুলী দ্বীপ।
৭০. বিনুনি নদীপ্রবাহ কাকে বলে? এটি কোথায় দেখা যায়?
উঃ নদীগর্ভে অনেক চর ও দ্বীপ সৃষ্টি হলে নদীর প্রবাহ বহু শাখায় বিভক্ত হয়ে এঁকে বেঁকে চলে এবং বিনুনীর আকার ধারণ করে। এরূপ প্রবাহকে বিনুনী প্রবাহ বলে। তিস্তা নদীতে এই প্রবাহ দেখা যায়।
৭১. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে? এটি কোথায় দেখা যায়?
উঃ একটি নদীখাতের দুটি সন্নিহিত বাঁকের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ অংশ পার্শ্বক্ষয়ের ফলে কখনও কখনও যুক্ত হয়। তখন নদী সোজা প্রবাহিত হয়। তখন পরিত্যক্ত বাঁকটি হ্রদের মতো অবস্থান করে। এদের অশ্বের ক্ষুরের মতো দেখতে বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। গাঙ্গেয় সমভূমিতে এই হ্রদ দেখা যায়।
৭২. প্লাবন সমভূমি কাকে বলে?
উঃ বর্ষাকালে বন্যার জল স্বাভাবিক বাঁধ অতিক্রম করে বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত করে। বন্যার জল অপসারিত হলে প্লাবিত অঞ্চলে পলি জমা হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
৭৩. পলি সমভূমি কাকে বলে?
উঃ নদীর মধ্যগতিতে জলের পরিমাণ বাড়লে (উপনদীর মিশ্রণে) এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটলে নদীখাত অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে পারে না। দুই কূল ছাপিয়ে নদী প্লাবন ঘটায়, উপত্যকার পলি, প্লাবন ভূমিতে ছড়িয়ে সৃষ্টি করে প্লাবন সমভূমি।
৭৪. ব-দ্বীপ সমভূমি কাকে বলে?
উঃ মোহনার কাছে পৌঁছে নদী একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই শাখাগুলির মাঝে পলি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তা দেখতে অনেকটা মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’-অক্ষরের মতো হয়। তাই এই সমভূমিকে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে।
৭৫. ব-দ্বীপ কাকে বলে?
উঃ নিম্নগতির শেষ পর্যায়ে নদী যেখানে সাগর বা হ্রদের সঙ্গে মিলিত হয় সেখানে নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়। এই সঞ্চিত পলির আকার মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ অক্ষর এর মতো হয় বলে একে বদ্বীপ বলে।
৭৬. পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ কোনটি?
উঃ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলিত বদ্বীপ।
৭৭. খাঁড়ি কী?
উঃ বদ্বীপ সমভূমি অঙচলের কোথাও কোথাও সংকীর্ণ নদীর মতো গভীর নালা দেখা যায়। এগুলি সমুদ্রের জলের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। জোয়ারের সময় এই নালাগুলি জলে ভরে যায়। সুন্দরবন অঞ্চলে এইরূপ নালাকে খাঁড়ি বলে।
৭৮. ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশগুলি উল্লেখ করো।
উঃ ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশগুলি হল –
১) মোহনায় নদীর মৃদুঢাল সমুদ্রের সাথে মিশতে হবে।
২) সমুদ্র জলে লবণতার আধিক্য থাকলে দ্রুতহারে পলি অধঃক্ষিপ্ত হবে।
৩) মধ্য ও নিম্নগতির দৈর্ঘ্য বেশি হলে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
৪) ধারন অববাহিকায় ক্ষয় বেশি হলে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
৫) মোহনায় জোয়ার ভাঁটার তীব্রতা কম হতে হবে।
৭৯. প্রকৃতি অনুযায়ী ব-দ্বীপ কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ চার প্রকার। যথা –
১) ত্রিকোণাকৃতি
২) হুকাকৃতি
৩) পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ
৪) ধনুকাকৃতি বদ্বীপ।
৮০. হুকাকৃতি ব-দ্বীপ কোথায় দেখা যায়?
উঃ নীল নদের বদ্বীপ।
৮১. পাখির পায়ের মত ব-দ্বীপ কোথায় দেখা যায়?
উঃ মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ।
৮২. ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ সিন্ধুনদের বদ্বীপ।
৮৩. সুন্দরবনে কী জাতীয় অরণ্য দেখা যায়?
উঃ ম্যানগ্রোভ জাতীয় অরণ্য।
৮৪. সুন্দরবন নামকরণের কারণ কী?
উঃ সুন্দরী নামক উদ্ভিদের প্রাধান্যের জন্য এই বনের নামকরণ হয় সুন্দরবন।
৮৫. সুন্দরবনের তিনটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপের নাম লেখো।
উঃ সুন্দরবনের তিনটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপ হল – ঘোড়ামারা, লোহাচড়া ও নিউমুর দ্বীপ।
৮৬. পলি, কাদা প্রভৃতি হালকা পদার্থ কীভাবে বাহিত হয়?
উঃ ভাসমান প্রক্রিয়ায় বহন করে।
৮৭. নদীর গতিপথে সৃষ্ট পৃথিবীর বৃহত্তম চর বা দ্বীপ কোনটি?
উঃ অসম সমভূমিতে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে মাজুলি দ্বীপ।
৮৮. পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীটির নাম কী?
উঃ নীলনদ।
৮৯. দোয়াব কী?
উঃ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে দোয়াব বলে।
৯০. দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদীর নাম কী? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ গোদাবরী। দৈর্ঘ্য – ১৪৬৫ কিমি।
৯১. পৃথিবীর দীর্ঘতম খাড়িটি কোথায় আছে? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ ওব নদীর মোহনায়। দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৮৫ কিমি এবং প্রস্থ প্রায় ৮০ কিমি।
৯২. পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপটির নাম কী?
উঃ গঙ্গা নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা ব-দ্বীপ।
৯৩. নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি ভূমিরূপের নাম লেখ।
উঃ ইংরেজি I আকৃতির উপত্যকা, ইংরেজি V আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত প্রভৃতি।
৯৪. পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর নাম কী? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ নীলনদ। দৈর্ঘ্য – ৬৬৩২ কিমি।
৯৫. ভারতের দীর্ঘতম নদীর নাম কী? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ গঙ্গা। দৈর্ঘ্য – ২৫১০ কিমি।
৯৬. নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি ভূমিরূপের নাম লেখ।
উঃ ব-দ্বীপ, চর, মিয়েন্ডার, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি।
৯৭. আহরণ ক্ষেত্র কাকে বলে?
উঃ একটি নদী এবং তার বিভিন্ন উপনদী সমূহ যে সব অঞ্চলের জল সংগ্রহ করে সেইসব অঞ্চলকে একসঙ্গে প্রধান নদীটির আহরণ ক্ষেত্র বলে।
৯৮. কিউসেক কী?
উঃ নদীর একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয় তাকেই বলে কিউসেক। সুতরাং নদীপ্রবাহ পরিমাপের একককে বলে কিউসেক।
৯৯. মন্থকূপ কী?
উঃ পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত বড় বড় পাথর ও নদীখাতের সংঘর্ষের ফলে নদীর বুকে মাঝে মাঝে গর্ত সৃষ্টি হয়, এগুলিকে বলে মন্থকূপ।
১০০. ভারতের একটি আদর্শ নদীর নাম লেখ।
উঃ গঙ্গা।
১০১. উপনদী কাকে বলে?
উঃ প্রধান নদীর গতিপথে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অনেক ছোট ছোট নদী এসে প্রধান নদীতে মেশে, এদের উপনদী বলে। যেমন- গঙ্গার উপনদী যমুনা।
১০২. নদীর গতিপথের কোন অংশে সঞ্চয়কার্য বেশি হয়?
উঃ তৃতীয় অংশ অর্থাৎ নিম্নগতিতে।
১০৩. গঙ্গা নদীর পার্বত্য প্রবাহ কতদূর বিস্তৃত?
উঃ গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত।
১০৪. নদীপ্রবাহ পরিমাপের একককে কী বলে?
উঃ কিউসেক।
১০৫. পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রধান কাজ কী?
উঃ ক্ষয়কার্য।
১০৬. নদীখাত খুব সঙ্কীর্ণ ও গভীর হলে তাকে কী বলে?
উঃ গিরিখাত।
১০৭. নদীর গতিপথ খুব আঁকাবাঁকা হলে তাকে কী বলে?
উঃ আঁকা-বাঁকা গতিপথ বা মিয়েণ্ডার।
১০৮. নদীর কোন প্রবাহে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?
উঃ পার্বত্য প্রভাবে।
১০৯. নদী মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠার দুটি কারণ লেখো।
উঃ নদী মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠার কারণগুলি হল –
১) নদী যখন সাগরে পড়ে তখন নদীর স্রোতের বেগ অনেক কমে যায়। অন্যদিকে সাগরের জোয়ারের জল নদীতে প্রবেশ করে। তখন মোহনায় নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়।
২) প্রথম অবস্থায় এই অংশ নীচু ও জলাময় থাকে। সঞ্চিত পলি দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নদী প্রথমে বিভিন্ন শাখায় ও পরবর্তীকালে উপশাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। শাখা নদীর মধ্যবর্তী স্থানেও পলি সঙচয় হয়।
৩) বহু বছর ধরে সঙচিত পলি উঁচু হয়ে বদ্বীপ গঠন করে।
৪) শাখানদীগুলো প্রায়ই পথ পরিবর্তন করে পলি সঞ্চয় ও বদ্বীপ গঠনের কাজ ত্বরাণ্বিত করে।
১১০. নদীর স্বাভাবিক বাঁধের গুরুত্ব কী?
উঃ নদীর স্বাভাবিক বাঁধ প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়। এই বাঁধ স্বাভাবিক অবস্থায় নদীর জলকে নদীখাতের মধ্যে আটকে রাখে, ফলে বন্যা হয় না। অবশ্য নদীর জল বহুগুণ বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিক বাঁধ অতিক্রম করে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।