class 12 history quite a big question suggestion 2022


   নিম্নলিখিত যেকোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও ।



 1 ) অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলোচনা করো ।

 👉 কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা নীচে আলোচনা করো হলো ।

  কিংবদন্তির ভূমিকা :-

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য কিংবদন্তি চরিত্র ও ঘটনাগুলি ছড়িয়ে আছে । শ্রীকৃষ্ণ , হারকিউলিস প্রমুখ কিংবদন্তিচরিত্রের সঙ্গে বহু কল্পকাহিনী মিশে থাকলে বাস্তবে এই সব চরিত্র যে জীবিত ছিলেন এবং তাদের জীবনে সংঘটিত কিছু কিছু ঘটনার বাস্তব অস্তিত্ব ছিল তা ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন ।

   ( ক ) ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্রঃ বিভিন্ন কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সভ্যতার নিরুপন করা সম্ভব হয় । উদাহরণস্বরূপ সীতার কোট বেহুলার বাসরঘর অরুনধাপ ঢিবি টুঙ্গির শহর ঢিবি প্রভৃতি স্থানে যথাক্রমে 1968 এবং 1972 খ্রিস্টাব্দে এবং অন্যান্য স্থানগুলিতে 1978 খ্রিস্টাব্দে পরীক্ষামূলক ভাবে খনন কার্য চালিয়ে প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ।

   ( খ ) আনন্দ দানঃ কিংবদন্তীর ঘটনাগুলি অতীতকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে লোকসমাজকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন । কিংবদন্তিতে আনন্দদায়ক উপাদান আছে বলেই এগুলি বংশপরম্পরায় বর্তমানকালে এসে পৌঁছেছে । সেই সূত্রেই কিংবদন্তীর মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র বর্তমানে আমরা জানতে পারি ।

   ( গ ) শিক্ষাদানঃ বর্তমানকালের মানুষকে কিংবদন্তির ঘটনাগুলি অতীতের নৈতিকতা বীরত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে । এগুলি থেকে বর্তমান কালের মানুষ নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং জীবনে চলার পথে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে ।

  ( ঘ ) ঐতিহাসিক ভিত্তিঃ কিংবদন্তীর কাহিনী রূপকথার কাহিনীর মত সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয় । বহু ক্ষেত্রে কিংবদন্তির কাহিনীগুলির বাস্তব ভিত্তি আছে । বাংলার কিংবদন্তি চরিত্র হাতের কালীপুজোর ভিত্তিতে আজ একটি কালী মন্দিরকে চিহ্নিত করা হয় ।


   স্মৃতিকথার ভূমিকা :-

        আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রধান বিভাগ হলো স্মৃতিকথা । অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোন ব্যক্তি পরবর্তীকালে তার স্মৃতিকথা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারে । এরূপ কাহিনী সাধারণভাবে স্মৃতিকথা নামে পরিচিত । স্মৃতিকথার গুরুত্বঃ স্মৃতিকথামূলক বিবরণ গুলি যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে , এই গুরুত্ব গুলি হল -

   ( ক ) গুনিজনের বিবরণঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটি কথাগুলি গুনী ব্যক্তিরা রচনা করেন । কলে তাতে অবান্তর পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জিত ঘটনার প্রবেশ রাস্তায় এবং এগুলি থেকে অতীতের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনা তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায় । উন 946 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার দাঙ্গার ঘটনাবলি বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিকথায় পাওয়া যায় ।

   ( খ ) প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণঃ বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বিবরণ তাদের স্মৃতিকথাগুলিতে আলোচনা করেন । হলে উক্ত বিবরণে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা অনেক বেশি থাকে ।

   ( গ ) ঐতিহাসিক রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বঃ বিভিন্ন স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে । 1971 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তান বাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের উপর পাক সামরিক বাহিনীর নিশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল । তার উত্তর গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হলো স্মৃতিকথা গুলি ।

   ( ঘ ) নিজস্ব অনুভূতির প্রকাশঃ বক্তা বা লেখক তার স্মৃতি কথাই যে কাহিনী বা ঘটনার বিবরণ দেন তা ঘটনার সমসাময়িককালে তার মনে কিরূপ প্রভাব ফেলেছিল তিনি কি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই ঘটনার সমসাময়িক পরিস্থিতি কিভাবে পাল্টে যেতে দেখেছেন তা তার স্মৃতিকথা আলোচনায় উঠে আসে ।


 2 ) পেশাদারী ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

 👉 পেশাদারি দক্ষতা নিয়ে যখন কোন ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনা করে থাকেন, তখন সেই ইতিহাসকেই সাধারন ভাবে পেশাদারি ইতিহাস বলা হয়। এখানে পেশাদারি দক্ষতা মানে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তথ্যের বিচার বিশ্লেষণ করাকে বোঝায় ।


 3 ) পেশাদারী ইতিহাসের সঙ্গে অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য সংক্ষেপে লেখ ।

 👉 

পেশাদারী ইতিহাস অপেশাদারী ইতিহাস
A. প্রকৃতপক্ষে উনবিংশ শতকের শেষ দিকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিহাস চর্চার কাজ পেশাদারি ভিত্তিতে শুরু হয় ।

a. অপেশাদারি ইতিহাস চর্চা উনিশ শতকের অনেক আগেই অর্থাৎ প্রাচীন কাল থেকেই শুরু হয়েছে বলা যায় । 
B. পেশাদারি ইতিহাস চর্চায় আর্থিক সম্পর্কের বিষয়টি ছড়িয়ে থাকে । পেশাদারি ইতিহাস চর্চার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তা মেলে । পাশাপাশি এই ধরনের ইতিহাস চর্চায় ইতিহাসবিদ ব্যক্তিগতভাবেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পান ।

b. অপেশাদারি ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে সাধারণত সরকারি আর্থিক সহায়তা মেলে না । ইতিহাসবিদ বা গবেষকগণ নিজের আর্থিক ব্যয়ে ইতিহাস চর্চা বা গবেষণার কাজ করে থাকেন ।
C. পেশাদারি ইতিহাসবিদগণ তাদের গবেষণার কাজে খুব উন্নত মানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। c. অপেশাদারি ইতিহাস চর্চায় সাধারণত স্থানীয় তথ্যাদি, ক্ষেত্রসমীক্ষা প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
D. পেশাদারি ইতিহাস চর্চা হল একটি সর্বক্ষণের কাজ। গবেষক বা ইতিহাসবিদগণ তাদের প্রধান পেশা হিসেবে ইতিহাস চর্চার কাজ করে থাকেন। d. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদারি ইতিহাস চর্চায় গবেষকগণ তাদের ইতিহাস চর্চার কাজটিকে একটি আংশিক সময়ের কাজ হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
E. বর্তমানকালে অধিকাংশ বড়াে ধরনের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস চর্চা পেশাদারি ইতিহাসবিদগণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে এই জাতি বা রাষ্ট্রের এমনকি সভ্যতার উত্থান, পতন, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্মনীতিসহ বিভিন্ন দিকগুলির ওপর আলােকপাত করা হয়।

e. বর্তমানকালে অপেশাদারি ইতিহাস চর্চা তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র পেক্ষাপটে হয়ে থাকে।


 4 ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো ? এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য লেখো ।

 👉 চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি - রাজস্ব ব্যবস্থা । লর্ড কর্ণওয়ালিস ১৭৯৩ সালে বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর - পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে চালু করা হয় ।

 চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল :-

  A. সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি ঃ  এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজদের অনুগ্রহপুষ্ট একটি নতুন অভিজাত শ্রেণি তৈরি করা যারা তাদের সমর্থক হিসাবে কাজ করবে ।

  B. আয় সুনিশ্চিত করা ঃ  কোম্পানি আশা করেছিল , চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োমিতভাবে সঠিক হারে রাজস্ব পাবে । ফলে তাদের আয়ের অনিশ্চয়তা দূর হবে ।

  C. বাজেট তৈরির সুবিধা ঃ  আয় সুনিশ্চিত হলে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরির কাজ সহজ হবে । D. দেশের সমৃদ্ধি । জমিদার জমির ওপর স্থায়ী অধিকার পেলে কৃষির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করবেন । এতে দেশের সমৃদ্ধি বাড়বে এবং পরোক্ষে কোম্পানির লাভ হবে প্রভৃতি ।

  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তাবলি :-

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি লক্ষ্য করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে আসবে ।

  ১. জমিদার - তালুকদাররা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগদখল করতে পারবে ।

  ২. জমিদার ইচ্ছামত জমি দান , বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবে ।

  ৩. ভূমিরাজস্বের পরমাণ ১৭৯৩ সালের হারেই নির্ধারিত হবে ।

  ৪. নির্ধারিত রাজস্বের শতকরা ৯০ ভাগ সরকার ও ১০ ভাগ জমিদার পাবেন ।

  ৫. সূর্যাস্ত আইন অনুসারে জমিদাররা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে ।

  ৬. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব মেটাতে ব্যর্থ হলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে ।

  ৭. ভবিষ্যতে খরা , বন্যা , মহামারি বা অন্য কোনো প্রকৃতিক বিপর্যয়েও রাজস্ব মকুব করা হবে না ।

   সুফল :-   চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল সম্পর্কে ঐতিহাসিক মার্শম্যান বলেছেন , It was a bold , brave and wise measure . এই ব্যবস্থার সুফলগুলি হল -

   A. সুনির্দিষ্ট আয় - এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয় । সরকারের নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয় । ফলে সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরি সহজ হয় ।

   B. উৎখাতের আশঙ্কার অবসান -  কৃষকের রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হয় । ফলে তারা ইজারাদারদের শোষণ এবং জমি থেকে উৎখাতের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায় ।

   C. কৃষির উন্নতি -  জমির উপর জমিদারের স্বত্ব বা অধিকার সুনিশ্চিত হওয়ায় তারা জমি ও কৃষির উন্নতিতে যত্নবান হন ।

   কুফল :-  ঐতিহাসিক হোমস বলেছেন , চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল একটি দুঃখজনক ভুল । প্রকৃতপক্ষে , এই বন্দোবস্তের সুফল অপেক্ষা কুফলই বেশি ছিল ।

    A ) কৃষকদের উচ্ছেদ । এই বন্দোবস্তে জমিদার জমির মালিকানা পায় , কৃষকরা নয় । ফলে , বেশি রাজস্বের আশায় জমিদার চাষিকে ঘনঘন জমি থেকে উৎখাত করত । এজন্য " পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা কৃষকরা জমিদারের ভাড়াটে মজুরে পরিণত হয় ।

   B) রাজস্বের হার বেশি । জমি জরিপ ( জমির গুণাগুণ ) না করেই রাজস্বের পরিমাণ ধার্য করা হয় । ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজস্বের হার বেশি হয়ে যায় ।

   C ) জমির উন্নতি ব্যহত । চাষিরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তারা জমির উন্নতির বিশেষ চেষ্টা করত না । জমিদাররাও জমির উন্নতির চেয়ে নিজেদের বিলাসব্যসনে বেশি অর্থ ব্যয় করত বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন ।


    মূল্যায়ন :-

         সুতরাং দেখা যাচ্ছে , বাংলা তথা ভারতের আর্থ - সামাজিক ইতিহাসের উপর বিশেষত কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছিল । এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক তারা চাঁদ যথার্থই বলেছেন , - “ The settlement destroyed the old village community , changed the property relations , created new social classes and caused a social revolution in the Indian countryside . '


 5 ) চীনের ওপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তি গুলি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

 👉 নানকিং - এর অসম চুক্তি :-  প্রথম আফিমের যুদ্ধে চিন পরাস্ত হয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে নানকিং এর অসম সন্ধি ২৯ শে আগস্ট ৮৪২ খ্রিঃ স্বাক্ষরে বাধ্য হয় । এই সন্ধির দ্বারা ক্যান্টন , সাংহাই , অ্যায়ম , ফুচাও , নিংগপো চিনের এই পাচটি বন্দর ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য খুলে দেওয়া হয় । এই বন্দরগুলোতে উইরোপীয়রা নিজ নিজ কনসাল নিয়োগের অধিকার পায় । হংকং বন্দর চিরকালের জন্য ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷

  বগ -এর অসম চুক্তি :- ব্রিটিশ সরকার চিনের ওপর নানকিং এর অসমচুক্তি চাপানোর কিছুকাল পর বগ এর সন্ধি ৮ অক্টোবর , ৮৪৩ খ্রিঃ নামে অপর একটি অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয় । এই সন্ধির দ্বারা ব্রিটেন চিনে কিছু অতিরাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করে । এই চুক্তির ফলে বন্দরগুলিতে বসবাসকারী চিনা ও ব্রিটিশ সব অধিবাসীদের ওপর চিনের আইন ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনের অধিকার লুপ্ত হয়ে ব্রিটিশ আইনও বিচার ব্যবস্থার অধীনে আসে ।

  ওয়াংঘিয়ার অসম চুক্তি :-  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮৪৪ খ্রিঃ ৩ জুলাই চিনের ওপর ওয়াংঘিয়ার অসমচুি চাপিয়ে দেয় । এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনে বিভিন্ন অতিরাষ্ট্রিক সুবিধা লাভ করে । 

হোয়ামপোয়া - র অসম চুক্তি :-  ফ্রান্সে ৮৪৪ খ্রিঃ ২৪ অক্টোবর চিনের ওপর হোয়ামপোয়ার অসমচুক্তি চাপিয়ে দেয় ৷ ফরাসি বণিকদের জন্য চিনের নতুন পাঁচটি বন্দর খুলে দেওয়া হয় । ফরাসি নাগরিকদের অতিরাষ্ট্রিক সুবিধে দেওয়া হয় । চিন ও ফরাসি বণিকদের মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক নির্দিষ্ট হয় ।

  আইগুন - এর সন্ধি :-  ১৮৫৬ চিনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধ শুরু হয় । রাশিয়া এই অবস্থায় আইগুন - এর সন্ধি চাপিয়ে দেয় । ২৮ মে , ৮৫৮ খ্রিঃ চিনের উত্তরাংশে বেশ কিছু ভূ - খন্ড রাশিয়া নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে । চিনের আমুর , উসুরি , সংঘুরা জিয়া , নদীতে একমাত্র রাশিয়া ও চিনের নৌ চলাচল স্বীকৃত হয় ।

  তিয়েনসিয়েনের অসম চুক্তি :-  দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তিয়েনসিয়েনের অসমচুক্তি চাপিয়ে দেয় ৷ ১৮৫৮ খ্রিঃ এর ফলে চিন সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় । বিদেশি বণিকদের জন্য চিনের আরও টি বন্দর খুলে দেওয়া হয় ৷ ( রাজধানী পিকিং - এ বিদেশি দূতাবাসের স্থাপনা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৷ পিকিং এর সন্ধি – ৮৮৬০ খ্রিঃ চিন এই সন্ধি স্বাক্ষর করে ৷ 

  শিমোনো সেকির সন্ধি :-  কোরিয়াকে কেন্দ্র করে ১৮৯৪-৯৫ খ্রিঃ চিপ জাপান যুদ্ধ শুরু হলে চিন পরাস্ত হয় ও জাপানের সঙ্গে শিমোনোসেকির সন্ধি করে । এর শর্তাবলিতে কোরিয়াকে চিন স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয় ৷ চিনের কাছ থেকে জাপান পেস্কাডোরেস , তাইওয়ান , লিয়াওটুং উপদ্বীপ ও পোর্ট আর্থার লাভ করে ।

  বক্সার প্রোটোকল :-  ১৮৯৯-৯০ খ্রিঃ মধ্যে চিনে বিদেশি শক্তিদের নির্যাতন , শোষণ ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে আই - হো - চুয়ান নামে এক গুপ্ত সমিতি বক্সার বিদ্রোহ করে । কিন্তু আটটি বিদেশি দেশের সম্মিলিত বাহিনী মিলিতভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে এবং ৯০ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর টি বিদেশি শক্তি বক্সার প্রোটোকল নামে এক চুক্তির মাধ্যমে চিনের ওপর বিভিন্ন কঠোরনীতি চাপিয়ে দেয় ৷

       বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী ২ জন রাজপুরুষের প্রাণদণ্ডসহ শতাধিকের শাস্তি হয় । বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয় ৷


 6 ) বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি আলোচনা করো ।

 👉  উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে ।

   ( 1 ) তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতিতে রামমোহন রায় এক চিঠিতে আলেকজান্ডার ডাফ কে লিখেছিলেন " আমি ভাবতে শুরু করেছি যে ইউরোপের রেনেসাঁর মতো কিছু একটা ভারতেও ঘটতে চলেছে " । রামমোহনের মতোই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , কেশব চন্দ্র সেন , বিপিনচন্দ্র পাল , অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ গণ উনিশ শতকের বাংলায় মানসিক ও সামাজিক স্ফুরণকে নবজাগরণ বলেই আখ্যা দিয়েছেন ।

  ( 2 ) ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তার ' হিস্টি অফ বেঙ্গল গ্রন্থে ' বাংলাকে নবজাগরণের পীঠস্থান বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেছেন কনস্ট্যান্টি নোপোল পতনের পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল উনিশ শতকের বাংলাতেও তিনি সেই অবস্থা লক্ষ করছেন । তার মতে বাংলার নবজাগরণ ছিল অনেক বেশি গভীর এবং বৈপ্লবিক ।

 ( 3 ) অধ্যাপক সুসোভন সরকার বলেছেন । বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ শাসনের বুর্জুয়া অর্থনীতি ও আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব অনুভব হয় ।


 7 ) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । এই আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

 👉 ভূমিকা :- 

       ক্রিপস প্রস্তাব ব্যার্থ হলে ভারতীয়দের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম নেয় এবং ভারত ছাড়ো আন্দলনের প্রেক্ষাপট রচনা করে । ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল গান্ধিজি হরিজন পত্রিকায় প্রথমে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরিকল্পনা পেশ করেন । এরপর কংগ্রেস কার্য নির্বাচক সমিতি ৯৪২ খ্রি : ৪ জুলাই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন । শেষপর্যন্ত ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যার্থ হলেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না ।

  সর্বস্তরের মানুষের যোগদানঃ- ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক , শ্রমিক , নারী , পুরুষ , ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে সরকারের বিরোধিতায় গন - আন্দোলনে অংশ নেয় ।

  কংগ্রেসের মযার্দা পুনঃপ্রতিষ্ঠাঃ- এই আন্দোলন থেকে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস । আদোলন কালে মহাত্মা গান্ধির অনশন জনগনের হৃদয়ে কংগ্রেসের মর্যদাকে পুনরায় অধিষ্ঠিত করে কংগ্রেস নেতাদের দুঃখবরন ও আত্মত্যাগ দেখে জনগন আপ্লুত হয় ৷ ফলে জনমানসে কংগ্রেসের প্রভাব ব্যাপক ও সর্বাত্মক হয় ৷

  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসারঃ- মুসলিম লিগ এই আন্দোলনে যোগ না দিলেও উত্তর প্রদেশ , বিহার , চট্রাগ্রাম প্রভৃতি স্থানের মুসলিম এই আন্দলনে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে অংশ নেয় । এসময় কোনো সম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি । তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও হিন্দু - মুসলিম ঐক্য ছিল এই আন্দলনের এক বিশাল সম্পদ ।

  স্বাধীনতার সংকল্পঃ- ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় । ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতীয়দের ক্ষোভ ও তা থেকে মুক্তির জন্য তারা সব ধরনের ত্যাগ , অত্যাচার , লাঞ্ছনা এমনকি মৃত্যুবরনেও প্রস্তুত ছিল ।

   মহিলাদের অংশগ্রহণঃ- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত জুড়ে শুরু হয় ব্রিটিশ বিরোধী ভারত ছাড়ো আন্দোলন ।

       এই আন্দোলনে নারীরা বিপুল ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিল ।

  অংশগ্রহনের প্রকৃতিঃ- ভারত ছাড়ো আন্দলনে শহরের নারিদের পাশাপাশি গ্রামের নারিরাও সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেছিল । শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত নারীরা প্রকাশ্যে এই আন্দোলনে অংশ নেয় ৷ বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক পরিবারের নারীরাও এই আন্দোলনে যোগ দেন ।

নেতৃত্বঃ- ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীরা সামনের সারিতে দাড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । মেদিনীপুরের তমলুক থানা দখলে নেতৃত্ব দেন মাতঙ্গিনী হাজরা ।

 গুরুত্বঃ- ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অংশ গ্রহন সমগ্রনারী সমাজকে স্বাধীনতা লাভে আগ্রহী করে তোলে ।

  উপসংহার :- অবশেষে বলা যায় যে, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সর্বস্তরের নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরাও যোগদান করেন ও গান্ধীজী অনশনে বসেন । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে এই আন্দোলন আরোও তীব্র রূপ ধারন করে ।


 8 ) ভারতের মুক্তি সংগ্রামে নেতাজী ও আজাদ হীন ফৌজ এর ভূমিকা বর্ণনা করো ।

 👉 নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ও ভূমিকা :-

        1930 খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন । 1931 খ্রিস্টাব্দে তিনি AITUC- এর সভাপতি হন । জামশেদপুরের টিস্কোর লেবার অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি নির্বাচিত হন । জেলে বন্দী অবস্থায় তিনি কলকাতার মেয়র হন । 1933 খ্রিস্টাব্দের মার্চে তিনি ভিয়েনা যান । তিনি অস্ট্রিয়া ইন্ডিয়া সোসাইটি স্থাপন করেন । 1935 খ্রিস্টাব্দে তিনি " ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল " নামে গ্রন্থটি লেখেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে ফেরেন । 1937 খ্রিষ্টাব্দে তাকে শর্তাধীন মুক্তি দেওয়া হয় । 1938 খ্রিস্টাব্দে তিনি হরিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি হন । 1938 খ্রিস্টাব্দে তিনি ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন ও জহরলাল নেহেরু কে প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন ।

  ফরওয়ার্ড ব্লক :-

        1939 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হতে চাইলে গান্ধীজী পট্টভি সীতারামাইয়াকে প্রার্থী করেন । কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র 1850 টি ও সীতারামাইয়া 1377 টি ভোট পায় । নেতাজি জয় লাভ করেন 203 ভোটে । 1939 খ্রিস্টাব্দে 3 মে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক " নামে একটি নতুন দল গঠন করেন , সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি ও সর্দার শার্দুল সিং সহ সভাপতি হন । এছাড়া অন্যান্যরা ছিলেন বিহারের সহজানন্দ ও বোম্বাইয়ের নরিম্যান । নেতাজির লেখা একটি গ্রন্থ হল " তরুনের স্বপ্ন " ।

 নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দবাহিনী যোগদান :-

         1940 খ্রিস্টাব্দের 2 জুলাই সুভাষচন্দ্র বসু কে বন্দি করা হয় । 2 ডিসেম্বর অসুস্থতার জন্য কলকাতায় এলগিন রোডে নিজ গৃহে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় । 1941 খ্রিস্টাব্দের 17 জানুয়ারি তিনি কলকাতা ত্যাগ করেন । জিয়াউদ্দিন ছদ্মনামে তার ভাইপো শিশির বসুর সঙ্গে । বিহারের গোমো স্টেশন থেকে তিনি পেশোয়ার যান । আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়া রান । 1941 খ্রিস্টাব্দের 24 মার্চ তিনি জার্মানিতে হাজির হন । তিনি হিটলার ও মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করেন । 1942 খ্রিস্টাব্দে বার্লিনে আজাদ হিন্দুস্তান বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন । 1942 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জার্মানীর হাতে বন্দী 400 ভারতীয় সেনা নিয়ে তিনি একটি সেনাদল গঠন করেন । জার্মানিতে বন্দি সেনাদল তাকে প্রথম " নেতাজি " আখ্যায় ভূষিত করেন । 1942 খ্রিস্টাব্দে 15 জুলাই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গঠিত হয় প্রায় 40,000 ভারতীয়দের নিয়ে পাঞ্জাবের 14 নং রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন মোহন সিং এই বাহিনী গড়ে তোলেন । 1942 খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে রাজবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ গঠন করেন জাপানে এবং সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন 1942 খ্রিস্টাব্দে । 1943 খ্রিস্টাব্দে মোহন সিং ও নিরঞ্জন সিং গিল কে বন্দি করা হয় ।

        1943 খ্রিস্টাব্দের 21 অক্টোবর নেতাজি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন । 23 শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকার ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । জাপান , থাইল্যান্ড , জার্মানি , ইতালি প্রভৃতি 7 টি দেশ দিয়ে এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় । 6 নভেম্বর তোজো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দুটি আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেন । 31 ডিসেম্বর নেতাজি এই দুটি দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন " শহীদ ও স্বরাজ " দ্বীপ । 1944 খ্রিস্টাব্দের 4 জানুয়ারি নেতাজি রেঙ্গুন এ প্রধান সামরিক দপ্তর স্থাপন করেন । আজাদ হিন্দ সরকার এর মূলধনী ছিল " জয়হিন্দ দিল্ল চলো "(৫,জুলাই) । 1944 খ্রিস্টাব্দে যে মাসে আজাদ হিন্দবাহিনী কোহিমা দখল করে । 1944 খ্রিস্টাব্দে মওডকে ভারতীয় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয় ভারতের মাটিতে । 1945 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট জাপান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে । রটনা করা হয় যে 1945 খ্রিস্টাব্দের 18 আগস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে ।

  মূল্যায়ন :-

   সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নকে একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে উন্নীত করে । আজাদি সেনাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও আত্মবলিদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতবাসীকে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । গান্ধীজী বলেছেন তাঁরা একই পতাকাতলে ভারতের সব ধর্ম ও জাতির মানুষকে একত্রিত করেছিলেন ধর্মীয় ভেদ বুদ্ধির উর্ধ্বে তাঁরা একতা ও সংহতির আদর্শ সঞ্চারিত করেছেন ।


 9 ) মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা মূল বিষয় কি ছিল ? এই পরিকল্পনার ফল কি হয়েছিল ?

 👉 মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা মূল বিষয় ছিল দেশভাগ ।জিন্নার পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি এবং তাতে জওহরলাল ও প্যাটেলের সম্মতি থাকায় ভারত ও পকিস্তান দুটি পৃথক রাজ্যে বিভক্ত করা হয় । পাকিস্তানে থাকবে কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায় এবং ভারত পাঞ্জাবের সাথে যুক্ত হয়ে একটি ডোমেনিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন । যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন গভর্নর-জেনারেল ওই ডােমিনিয়নের শাসনে থাকবেন।

  এই পরিকল্পনার ফলাফল :-

(১) মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় আবহমানকাল ধরে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য বন্ধনে আবদ্ধ এই উপমহাদেশকে কৃত্রিম রাজনৈতিক সীমান্তরেখায় বাঁধা হয় ।

  (২) এই পরিকল্পনায় ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগকে উৎসাহ দেওয়া হয়, যার ফলশ্রুতিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয় ।


 10 ) রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ? গান্ধীজী কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন ?

 👉 

 রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্য :-

    রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদীদের দমনকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই আইনে বিনাবিচারে যে-কোনাে সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটক করা, তাদের বাসস্থানের ওপর নজর রাখা ও ঘর তল্লাশি করা, সম্পত্তি দখল করা, জুরি ছাড়া রুদ্ধদ্বার আদালতে বিচার করা, মােটা টাকার জামানত আদায় করা প্রভৃতি দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ।

 গান্ধীজীর বিরোধিতা :

   ১। আইনের আপত্তিকর দিক :- রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্যে হিসাবে বিল্পবী ও সন্ত্রাসবাদের দমনকে উল্লেখ করা হয় । কিন্তু বিনা বিচারে যে কোনো ব্যাক্তিকে আটক করা বাসস্থানের উপর নজর রাখা ও ঘর তল্লাসি করা মোট টাকার জামানত আদায় করা প্রভৃতি দমন মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল । তাই ভারতীয়দের স্বার্থে গান্ধিজি এই আইনের বিরোধিতা করেন । 

  ২। জাতীয় আন্দোলনের রূপ বদল :- জাতীয়কংগ্রেস প্রথম দিকে আবেদন নিবেদনের রাজনীতি করে ভারতবাসির স্বার্থরক্ষা করতে পারেনি । তাই সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি হয় । এই পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে গান্ধিজি ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন ।

  ৩। সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়োগ :1- গান্ধিজির রাজনৈতিক আদশর্ ছিল সত্যাগ্রহ । সত্যাগ্রহের মূল কথাই হল অন্যায়ের সাথে অসহযোগীতা করা । গান্ধিজি মনে করেন রাওলাট আইন জারি করে ব্রিটিশরা অন্যায় করেছে । তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন ।


 11 ) পঞ্চাশের মন্বন্তর তৎকালীন ভারতীয় অর্থনীতি ও শিল্প সাহিত্যে কী রকম প্রভাব ফেলেছিল ?

 👉 সূচনা :-

     ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম প্রত্যক্ষ ফল ছিল ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষ যা পঞ্চাশের মন্বন্তর ' নামে বেশি পরিচিত । সরকারি শোষণ , প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানি , বাইরে থেকে বাংলায় খাদ্য আমদানিতে বাধা , খাদ্যের মজুতদারি , মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটনা পঞ্চাশের মন্বন্তরকে ভয়াবহ করে তালে ।

   ঃ পঞ্চাশের মন্বন্তরের ফলাফল ঃ

  ব্যাপক প্রাণহানি :- পঞ্চাশের মন্বন্তরে অনাহার ও বিভিন্ন রোগের প্রকোপে বাংলায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় । মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান ব্রিটিশ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ না করলেও দুর্ভিক্ষে অন্তত ৪০ লক্ষ থেকে ৭০ লক্ষ বা আরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় । মৃতদেহগুলি রাস্তাঘাটে , বনেবাদাড়ে স্তূপাকারে পড়ে থাকতে দেখা যেত । মৃতদেহ সৎকারের মানুষ ছিল না । রাস্তার ধারে পড়ে থাকা মৃতদেহের দখল নিয়ে শিয়াল আর কুকুরের মধ্যে লড়াই চলত । দিনে দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে মৃতদেহের মাংসের প্রতি শিয়াল , কুকুর , শকুনেরও অরুচি ধরে । পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলায় যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তত মানুষের মৃত্যু হয়নি । এই মন্বন্তরের ভয়াবহতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি ছিল ।

  অর্থনৈতিক বিপর্যয় :-  মন্বন্তরের সময় বাংলায় চূড়ান্ত অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে । দরিদ্র মানুষের দীর্ঘদিন ধরে জমানো অর্থসম্পদ দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য কিনতে গিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় । এরপর নিঃস্ব , রিক্ত , অভুক্ত মানুষগুলি থালা - বাটি হাতে রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তিতে বেড়িয়ে পড়ে । " মা , একটু ফ্যান দাও " বলে কাতরাতে কাতরাতে কলকাতার বুভুক্ষু মানুষের দল দিশাহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এবং পরে অভুক্ত , শীর্ণ , কঙ্কালসার এই মানুষগুলি রাস্তার ধারে মরে পড়ে থাকছে — এই দৃশ্য কলকাতা - সহ বাংলার সর্বত্র দেখা যেত ।

  মানবিক বিপর্যয় :-  ভয়াবহ পঞ্চাশের মন্বন্তর বাংলায় চূড়ান্ত মানবিক বিপর্যয় ঘটায় । খিদের জ্বালায় মানুষ অখাদ্য পশু ও কীটপতঙ্গ , লতাপাতা , এমনকি দুর্বাঘাস প্রভৃতি অখাদ্য কুখাদ্য খেতে শুরু করেছিল । কুকুরের সঙ্গে লড়াই করে অভুক্ত মানুষ শহরের ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে । মানুষ তার প্রিয়জনকে মৃত্যুমুখে ফেলে রেখে নিজে বাঁচার তাগিদে অন্যত্র চলে যায় । অভাবের তাড়নায় অনেকে স্ত্রী সন্তানদের বিক্রি করে দেয় । কুকুরের সঙ্গে লড়াই করে অভুক্ত মানুষ শহরের ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে । মানুষ তার প্রিয়জনকে মৃত্যুমুখে ফেলে রেখে নিজে বাঁচার তাগিদে অন্যত্র চলে যায় । অভাবের তাড়নায় অনেকে স্ত্রী সন্তানদের বিক্রি করে দেয় ।

  খাদ্য সরবরাহ :-  দেরিতে হলেও সরকার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মধ্যে খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয় । শহরে কয়েকটি ন্যায্য মূল্যের দোকান খুলে মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার সামান্য প্রয়াস দেখা যায় । বাইরে থেকে বাংলায় ২৬৪ হাজার টন চাল , ২৫৮ হাজার টন গম এবং ৫৫ হাজার টন মিলেট বাংলায় আমদানি করা হয় । অবশ্য খাদ্য আমদানির আগেই বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে গেছে ।

  কমিশন গঠন :-  দুর্ভিক্ষের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সরকার দুর্ভিক্ষের পর দুর্ভিক্ষ অনুসন্ধান কমিশন গঠন করে । এই কমিশন দীর্ঘ তদন্ত করে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ সরকারকে তার রিপোর্ট জমা দেয় । এই কমিশনের রিপোর্ট মন্বন্তরের সময় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক , পৌর ও সামরিক নীতির ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে । তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল যে , অন্য কোনো দুর্ভিক্ষ - পীড়িত দেশের সরকার নিজের বিরুদ্ধে এরূপ সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেনি ।

  শিল্প - সাহিত্য সৃষ্টি :-  পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিভিন্ন সাহিত্য ও শিল্প সৃষ্টি হয়েছে । চিত্তপ্রসাদ তাঁর ' ক্ষুধার্ত বাংলা ' ১৯৪৩ - এর নভেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় ভ্রমণ ' - এ , বিজন ভট্টাচার্য তাঁর ' নবান্ন ' নাটকে , বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ' অশনি সংকেত ' উপন্যাসে পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহ কাহিনি তুলে ধরেন । উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপ দেন বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় । এ ছাড়া ভবানী ভট্টাচার্যের ' So Many Hungers ' , অমলেন্দু চক্রবর্তীর ' আকালের সন্ধানে ' ( যা পরে চলচ্চিত্রে রূপ দেন মৃণাল সেন ) , কে . এ . আবৃাস পরিচালিত ' ধরতি কে লাল ' ও বিমল রায় পরিচালিত ' Bengal Famine ' চলচ্চিত্র , জয়নুল আবেদিনের আঁকা বিভিন্ন চিত্র প্রভৃতিতে পঞ্চাশের মন্বন্তরের করুণ কাহিনি ধরা পড়েছে ।

  গ্রন্থ নিষিদ্ধকরণ :-  চিত্তপ্রসাদ তাঁর ' ক্ষুধার্ত বাংলা ' ১৯৪৩ - এর নভেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় ভ্রমণ গ্রন্থে দুর্ভিক্ষের সময় তার মেদিনীপুর সফরের একটি অসামান্য বিবরণ তুলে ধরেন । তাঁর বর্ণিত জীবন্ত করুণ চিত্রে সরকারের মুখোশ খুলে যায় । এতে সরকার যথেষ্ট বিব্রত হয় এবং সরকারকে বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়তে হয় । সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে এর ৫০০০ কপি বাজেয়াপ্ত করে । এই বইয়ের একটি কপি লুকোনো অবস্থায় চিত্তপ্রসাদের পারিবারিক সংগ্রহে থেকে গিয়েছিল , যেটি বর্তমানে দিল্লির আর্ট গ্যালারিতে রাখা আছে ।

   উপসংহার :-  পঞ্চাশের ভয়াবহ মন্বন্তর সম্পর্কে চর্চা ও গবেষণা আজও চলছে । মেদিনীপুর সফরের সময় চিত্তপ্রসাদ ও তার সঙ্গীরা ধানখেত থেকে বছর ছয়েকের এক শিশুকে উদ্ধার করেন — চিত্তপ্রসাদের ভাষায় : ' হাড়ের তৈরি কালো পুতুল ! ’ এ চিত্র শুধু মেদিনীপুরের নয়, এ ছিল দুর্ভিক্ষের সময় সারা বাংলার চিত্রের প্রতীক ।










Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.