রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের তত্ত্ব || Marks 15

☀ রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের তত্ত্ব বা ধারনাটি আলোচনা করো ।


=> মার্কসবাদে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়ে রাষ্ট্র । রাষ্ট্র সম্পর্কে যা কিছু তথ্য গঠিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন এঙ্গেলস ও লেলিন এবং পরবর্তীকালে মার্কসবাদীগণ । এই আপেক্ষিক স্বাধীনতার আলোচনায় রাষ্ট্র সম্পর্কিত মার্কসীয় মতবাদ সুস্পষ্ট ও সম্পূর্ণ করে তোলে । মার্কসের মতে রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের অর্থ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত ধারণা ।

আপেক্ষিক স্বতন্ত্রের ধারনার প্রধান সামর্থক হলেন মিলব্যান্ডে । তাঁর মতে, রাষ্ট্র একটি প্রভাবশালী শ্রেণীর যন্ত্র বা শ্রেণীর রাষ্ট্র হলেও তার নিজস্ব স্বাতন্ত্র বা স্বাধীনতা আছে । সে সর্বদা প্রধান শ্রেণীর নির্দেশ মেনে চলে না । অনেক সময় রাষ্ট্র স্বাধীনতা ভোগ করে । প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আইন রচনা অথবা বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে এই স্বাতন্ত্র রাষ্ট্র রক্ষা করে ।

মার্কসীয় মতবাদ বিশ্লেষণ করে মার্কসবাদী তাত্ত্বিকেরা রাষ্ট্রের প্রধান দুটি মডেলের সন্ধান পান । একটি হল, শ্রেণী শোষণের যন্ত্র হিসেবে হাতিয়ার বাদী ধারণা এবং অপরটি হল রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের তত্ত্ব । মার্কসের মতবাদ সম্পর্কিত রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্র বা স্বাধীনতা সম্পর্কে মার্কস ফ্রান্সের স্বৈরতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের উদাহরণ দিয়েছেন ।

বিপ্লবের ফলে আইন সভার ক্ষমতা শাসকের হাতে হস্তান্তরিত হয় । অর্থাৎ, প্রথমে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে কৃষক ও সাধারণ মানুষের নেতা হলেন সর্বময়কর্তা । তারপর সামরিক বাহিনী, আমলা বৃন্দ এবং দক্ষ প্রশাসকের সাহায্যে তিনি হয়ে গেলেন একনায়ক । মার্কসের ভাষায়, ফ্রান্স একটি শ্রেণীর শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে একক শাসকের ( স্বৈরতন্ত্র ) অধীনে চলে গেল । এই একক শাসকের বিরুদ্ধে কোন শ্রেণী বা গোষ্ঠী প্রতিরোধ গড়া তো দূরের কথা প্রতিবাদ জানাতেও পারেনা । মার্কস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “বোনা পার্টের অধীনে রাষ্ট্র তার চরম স্বাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে । এমন কি সমগ্র সমাজকেও নিজের হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হয় এবং শাসক শ্রেণীর বাইরে রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়” ।
রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্র সম্পর্কে এঙ্গেলস এর মতে, পরস্পর বিরোধী শ্রেণীর মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হলে রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বতন্ত্রে বিশ্বাসই মার্কসবাদীরা মনে করেন যে, শুধুমাত্র পেশাদারিত্ব বা প্রযুক্তি নয় এই ধারণা দাবির পিছনে রাজনৈতিক, সামাজিক, সর্বোপরি আর্থিক কারণের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে । বিশেষ করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র গুলির আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে । যেমন – আগে একচেটিয়া রাষ্ট্র পুঁজিবাদে পরিণত হয়েছে ফলে রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র সত্তার প্রতিষ্ঠা হয়েছে ।

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত রাষ্ট্রগুলিতে রাষ্ট্রের স্বতন্ত্রের রূপটি ভিন্ন ধরনের । বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বের আপেক্ষিক স্বাধীনতা ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশগুলির থেকে বেশি । এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার মতো দেশগুলিতে একাধিক শ্রেণী অধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট থাকায় রাষ্ট্র কিছু থেকে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকে । ফলে অনেকটাই পরিমাণে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহনের মাধ্যমে আপেক্ষিক স্বাধীনতা ভোগ করে ।

রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের আপেক্ষিক তত্ত্বটি যথেষ্ট পরিমাণে সমালোচিত হয়েছে । মিলিব্যান্ডে বলেছেন, “রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্র শিকার করলে, রাষ্ট্র যে শ্রেণি শোষণ ও শাসনের যন্ত্র, সেই তত্ত্ব টেকে না । আবার শ্রেণি শাসনের তত্ত্ব স্বীকার করলে রাষ্ট্রর সাতন্ত্র থাকে না । যদিও পরিশেষে মার্কসবাদীরা মনে করেন, রাষ্ট্র শ্রেণী শাসনের হাতিয়ার এবং আপেক্ষিক স্বাতন্ত্রের মধ্যে কোন বিরোধ নেই ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.