মার্কসের গনতন্ত্র সম্পর্কিত তত্বটি আলোচনা করো ।

মার্কসের গনতন্ত্র সম্পর্কিত তত্বটি আলোচনা করো ।


Ans.  গনতন্ত্র সম্পর্কে মার্কবাদীদের ধারনা বুর্জ্যোয়াদের ধারনা থেকে অনেকটাই আলাদা । বুর্জ্যোয়া গনতন্ত্রের চরিত্র পুঁজিবাদী অর্থসমাজিক বিন্যাসের মধ্যে নিহিত । বুর্জ্যোয়া শ্রেনির গনতান্ত্রিক অধিকার ও জনগনের সার্বোভৌমত্বকে স্বীকার করেছে । কিন্তু গনতন্ত্র সার্বিক প্রসারে কোনো উৎসাহ দেখায়নি । পুঁজিবাদী সমাজে ভিত্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বুর্জ্যোয়া শ্রেণি গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটিয়েছিল । দরিদ্র ও শোষিত শ্রণিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে রাখাই বুর্জ্যোয়া গনতন্ত্রের লক্ষ ।

   বুর্জ্যোয়া গনতন্ত্রের সার্থে মার্কসীয় গনতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না । সমাজ তান্ত্রিক বিপ্লব ও সর্বহারা একনায়ক-তন্ত্র মার্কস বাদীদের কাছে গনতন্ত্রের এক নতুন রূপ দিয়েছে ।  মার্কস বাদীদের কাছে গনতন্ত্র বলতে বোঝায়, সমাজ তান্ত্রিক গনতন্ত্র । সমাজ তান্ত্রিক গনতন্ত্র হল শ্রমিক শ্রণী সহ সমগ্র শ্রমজীবি মানুষের গনতন্ত্র ।

   লেলিন তাঁর, রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থে বলেছেন – “মার্কস বাদীরা গনতন্ত্র বলতে সমাজ তান্ত্রিক গনতন্ত্রকে বোঝায় । এই গনতন্ত্র শোষক শ্রণীদের গনতন্ত্র থেকে চির বিচ্ছিন্ন রাখে ।” সমাজতান্ত্রিক, গনতান্ত্রিক -গনতন্ত্রকে লেলিন নতুন ও উচ্চধরনের গনতন্ত্র বলেছেন । কারন, এই গনতন্ত্রে শ্রমজীবি মানুষের রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না । মার্কসীয় গনতন্ত্র শ্রমিক শ্রণীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় । মার্কসীয় গনতন্ত্র শ্রমজীবি জনগনের উপর নির্ভরশীল ।

   মার্কসীয় বা সমাজতান্ত্রি সংজ্ঞা বিশ্লেষন করলে উহাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ করা যায় ।

    প্রথমত,
সমাজতান্ত্রি গনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ক্ষমতা জনগনের হাতে থাকে । জনগন প্রকৃত সার্বোভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয় । জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সমাজতান্ত্রি রাষ্ট্রে জনগনের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় । সার্বিক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকল রাষ্ট্রিয় সংস্থার সদস্যরা নির্বাচিত হয় ।

   দ্বিতীয়ত,
গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির উপর সমাজতান্ত্রি গনতন্ত্র প্রতীষ্ঠিত । গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিক -তার নীতি তিনটি মৌলিক বৈশিষ্টের উপর নীহিত । যথা —
    ১. নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সকল ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সংস্থায় নির্বাচিত হবে ।
    ২. উচ্চতর কর্তী পক্ষের সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলা বাধ্যতা মূলক ।
    ৩. সংস্থা গুলিকে জনগনের কাছে জবাব দিহি করতে হবে ।

   তৃতীয়ত,
সমাজতান্ত্রি গনতন্ত্রে সমাজতান্ত্রি আইনের সার্বৌভৌম স্বীকৃত । সমাজতান্ত্রি আইনানুবর্তিতা সংবিধানের মৌলিক নীতি । এই গনতন্ত্র আইনের দৃষ্টিতে সাম্য স্বীকৃত হয় । সাম্যের মধ্যেই প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ।

   চতুর্থত,
সমাজতান্ত্রি গনতন্ত্র সংগঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে । কারন, জনগনের ব্যাপক অংশ গ্রহন ছাড়া গনতন্ত্র সপ্রসারিত হতে পারে না ।

   পঞ্চমত,
সমাজতান্ত্রি গনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ক্ষমতা জনগনের হাতে যাওয়ায় প্রকৃত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় । এই গনতন্ত্রে সকলে নির্ভিক ভাবে অংশ গ্রহন করতে পারে, যার জন্য সমাজে সাম্যতা বজায় থাকে ।


 মূল্যায়নঃ-
     উপরের আলোচনা থেকেই এটাই বোঝা যায় যে, মার্কস বাদীদের মতে গনতন্ত্র বলতে বোঝায় - রাষ্ট্র পরিচালনায় জনসাধারনের ব্যাপক অংশ গ্রহন । মার্কসীয় গনতন্ত্রের ধারনা মানব জাতির শৃঙ্খলা মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে । এবং শ্রেণীহীন ও শোষোনহীন সমাজে প্রসারিত করে । অর্থনৈতিক বৈষাম্য দূর হলে তাবেই সমাজে প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে আর গনতন্ত্রের মাধ্যমেই সর্বহারার নেতৃত্বে সাম্যবাদী সমাজ গড়ে উঠবে । যেখানে জনগনই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হবে ।

Label Name

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.