দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলতে কী বোঝো ?

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলতে কী বোঝো ? মার্কসবাদের অন্যতম সূত্র হিসাবে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল বক্তব্য আলোচনা করো ।


Ans.  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ন মতাদর্শ হিসাবে মার্কসবাদ পরিচিত । মার্কস ও এঙ্গেলস ইতিহাসের ধারাকে ব্যাখ্যা করার জন্য দান্দ্বিক পদ্ধতি গ্রহন করেছিলেন । দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হল মার্কস বাদের দার্শনিক ভিত্তি । জার্মান দার্শনিক হেগেলের পরিপেক্ষিতে মার্কস- বাদের  দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ধারনাটি গড়ে উঠেছিল । মানব সমাজের উদ্ভব ও বিকাশ বিশ্লেষন করার জন্য মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবারের ধারনাটি বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ হিসাবেও পরিচিত ।

   দ্বন্দ্ব -বাদের ইংরাজী প্রতিশব্দ Dialitics, এই শব্দটি গ্রিক থেকে এসেছে । এর অর্থ হল বিতর্কর মধ্যে দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো । দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল বক্তব্য হল জগতবস্তুময় । বাস্তু জগতের বস্তুগুলি সর্বদা পরিবর্তনশীল ও গতিময় । এই বস্তুর পরিবর্তন আছে । বস্তুর অন্তর্নিহিত স্ববিরোধের ফলে বস্তুর পরিবর্তন পরিমানগত দিক থেকে গুনগত দিকে পরিচালিত হয় । আবার, বস্তুর আত্মসংস্কার করে নতুন বস্তুর আকার ধারন করে ফিরে আসতে পারে । একে নেতির নেতিকরন বলে ।

   মার্কস ও এঙ্গেলস দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তিনটি মূল সূত্রের কথা বলেছেন । সেগুলি হল – (ক) পরিমানগত দিক থেকে গুনগত পরিবর্তন, (খ) বৈপরিত্যের ঐক্য ও সংগ্রাম, (গ) নেতির নেতিকরন বা অস্বীকৃতির অস্বীকৃতি ।


(ক) পরিমানগত দিক থেকে গুনগত পরিবর্তন :-  দ্বন্দ্ব -মূলক বস্তুবাদের মূল কথা হল পরিমানগত দিক থেকে গুনগত পরিবর্তন । বস্তু জগতের পরিমান গত পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটে । কিন্তু, পরিবর্তন একটি নিদিষ্ট পর্যায়ে এসে হঠাৎ করে বস্তুটির গুনগত পরিবর্তন হয় । এই পরিবর্তন এক পর্যায় হতে অন্য পর্যায়ে উল্লম্ফের আকার হয় । তাই এই প্রক্রিয়েকে উলম্ফন প্রক্রিয়া বলা হয় ।


(খ) বৈপরিত্যের ঐক্য ও সংগ্রাম :-  দ্বন্দ্ব -মূলক বস্তুবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন সূত্র হল বৈপরিত্যের ঐক্য ও সংগ্রাম । দ্বন্দ্ব -মূলক বস্তুবাদ অনুসারে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে স্ববিরোধ বা অন্তদ্বন্দ্ব থাকে । এই দ্বন্দ্বের কারনে বস্তুর পরিবর্তন ঘটে, সমাজ দ্বন্দ্বহীন হতে পারেনা ।  বস্তুবাদ অনুসারে বৈপরিত্যের ঐক্য বা সংগ্রাম ভিন্ন ধরনের হতে পারে ।


(গ) নেতির নেতিকরন বা অস্বীকৃতির অস্বীকৃতি :-  দ্বন্দ্ব -মূলক বস্তুবাদ অনুসারে মনে করা হয় যে – পুরাতন অস্বীকার নতুনকে আপন করে নেওয়া । এক্ষেত্রে পুরাতন হল - নেতি । আবার, এই নতুন একদিন পুরাতন হয়ে যায় । ফলে ওই নতুনকে অস্বীকার করে অধিকতর আরেক নতুনের জন্ম হয় । জি নতুনই হল নেতির নেতিকরন বা অস্বীকৃতির অস্বীকৃতি । মার্কস উদাসরন হিসাবে বলেন, বীজ থেকে গাছ - গাছ থেকে ফুল - ফুল থেকে ফল - ফল থেক বীজ । অর্থাৎ, প্রতিটি পর্যায়ে পূর্বাকার বৈশিষ্ট লক্ষ করা যায় ।


সমালোচনাঃ
মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে ।

  প্রথমত,
সমালোচকদের মতে, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে একমাত্র বস্তুর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় । কিন্তু বাস্তু ছাড়া ধর্ম, স্নেহ - ভালবাসা ইত্যাদির প্রভাব আছে । ক্ষমতা, লোভ, মহাপুরুষের আবির্ভাব প্রভৃতি ঘটনা ইতিহাসের ধারাকে প্রভাবিত করেছে । মার্কস এগুলিকে উপেক্ষা করেছেন ।

  দ্বিতীয়ত,
সমালোচকদের মতে, মার্কসের বক্তব্য অনুসারে দ্বন্দ্বিক প্রক্রিয়ার পুঁজিবাদী সমাজে অবশ্যই বিপ্লব হবে ।

  তৃতীয়ত,
সমালোচকদের মতে, মানব সমাজের বিভিন্ন রকম জটিল সমস্যাকে বাস্তু জগতের নিয়মাবলি দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । কারন, বাস্তু জগতের নিয়ম আর মানব সমাজের বিকাশের নিয়ম এক নয় ।

  চতুর্থত,
সমালোচকদের মতে, মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্ব কেবল মাত্র ভাব জগতে প্রয়োগ করা সম্ভব । প্রকৃতি জগতে প্রয়োগ করা সম্ভব নয় ।


মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত সমালোচনার সত্ত্বেও মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের গুরুত্ব কোনো ভাবেই অস্বীকার করা যায় না । এই বস্তুবাদ বাস্তু জগতের বিকাশ ও পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার জন্য এক নতুন পন্থার নির্দেশ দেয় । এ প্রসঙ্গে বার্নস বলছেন, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হল এমন একটি তত্ব যার মাধ্যমে বিজ্ঞানের সমস্ত তথ্য গুলিকে পরিস্কার ভাবে জানা যায় বা বোঝা যায় ।

Label Name

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.