১০. ‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে ; / বলো ‘ক্ষমা করো’ – হিংস্র প্রলাপের মধ্যে / সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী ।’ –উদ্ধৃত পঙক্তিগুলির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তার - পরিচয় মেলে, তা আলোচনা করো ।
অথবা,
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে ; – কবি কোন্ মানহারা মানবীর দ্বারে
দাঁড়াতে বলেছেন তা ‘আফ্রিকা’ কবিতার বিষয়বস্তু অবলম্বনে আলোচনা করো ।

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদী সত্তার প্রতীক ।
সাম্রাজ্যবাদী শাসনের নগ্ন চেহারা কবি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন । তাই তিনি ছিলেন
ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদ - বিরোধী । কবির ‘মানহারা মানবী’ হল ‘আফ্রিকা’ । সে যেন
আমাদের রূপকথার দুয়োরানি । তাকে নিজের অধিকার পেতে হাজারো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে
হয় । পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক সভ্যতা ‘মানবী’ আফ্রিকার বুকের মধ্য থেকে ছিনিয়ে নেয়
সম্পদের ভাণ্ডারকে আর স্থাপন করে উপনিবেশ । এরপর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তার
সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে; কিন্তু স্বীকৃতি দেয় না তার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও
কৃষ্টিকে । তাই আফ্রিকাকে ডুবে থাকতে হয় উপেক্ষার আবিল অন্ধকারে । ‘ক্ষমা করো’
উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন ।
কবি - সাহিত্যিকেরা সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতা । তাই শোষণ
- লাঞ্ছনার স্বীকার আফ্রিকার মর্মবাণী যেন সংবেদনশীল কবিহৃদয় দিয়ে অনুভব
করেছিলেন । ‘আফ্রিকা’ কবিতার রচনার সময় গোটা ইউরোপে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক,
সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা । শুরু হয় ঔপনিবেশিক ও ফ্যাসিস্ট শক্তির স্বার্থের
টানাপোড়েন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পালা । বিশ্বব্যাপী এই হিংস্র প্রলাপের মাঝে
কবির দৃষ্টিভঙ্গিতে আফ্রিকা ওঠে নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতীক ।