হায় ছায়াবৃতা,’ – ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী ? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন তা সংক্ষেপে লেখো ।

১২. ‘হায় ছায়াবৃতা,’ – ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী ? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন তা সংক্ষেপে লেখো ।


 উত্তরঃ ‘ছায়াবৃতা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ছায়া দ্বারা আবৃতা বা ছায়াঢাকা । দুর্গম অরণ্যে - ঘেরা আফ্রিকা মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে অবস্থিত । আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞানের আলো থেকে সে বঞ্চিত । দুর্গমতার কারণে উনিশ শতকের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিজস্ব সংস্কৃতি বাকি বিশ্বের কাছে অজানাই রয়ে গেছে তার রহস্যময় অরণ্যের মতোই ।
    সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী মানবতার পূজারি রবীন্দ্রনাথ । তাই মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশকে ধিক্কার জানিয়ে লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানবতার মর্মবাণী ধ্বনিত হবে এটাই স্বাভাবিক । কবিতাটি আফ্রিকার সমাজ ও রাজনৈতিক ইতিহাসের জীবন্ত দলিল ।
   সৃষ্টির আদিতে আফ্রিকা তৈরি হয়েছিল প্রকৃতির খেয়ালে । আদিম প্রকৃতি নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলেছিল তাকে । বাকি পৃথিবীর কাছে সে ছিল অপরিচিত । পরবর্তীকালে সভ্যসমাজের দৃষ্টি পড়ে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের ওপর । ক্রমে ক্রমে আফ্রিকা হয়ে ওঠে পশ্চিমি সভ্য দেশগুলির জন্য ক্রীতদাস জোগানের ক্ষেত্র । এমনকি সেদেশের আদিম প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা সম্পদও তাদের নজর এড়ায় না । পৃথিবীর তথাকথিত সভ্য দেশগুলির লোভ আর অমানবিকতায় লুণ্ঠিত হয় আফ্রিকা । তার ধুলো - মাটি কাদা হয় সেখানকার মানুষদের রক্তে আর কান্নায় । লেখা হয় তার অপমানের ইতিহাস । কিন্তু কবি মানবতার পূজারি । তাই সভ্যতার নামে মানবতার এই অপমান তিনি সহ্য করেননি ।
    দিনবদলের সন্ধিক্ষণে তাই পৃথিবীর সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হয়ে অপমানিত, লাঞ্ছিত আফ্রিকার কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন । সভ্যতার এই সংকটের দিনে ঘৃণা বা হিংসা নয়, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা আর সংবেদনশীলতাকেই আশ্রয় করতে চেয়েছেন তিনি ।














Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.