
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার ঘোর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ । ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে
ইটালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশকে ধিক্কার জানান । সেই দমবন্ধ করা হিংসার পরিবেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য
অনুজ কবি অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথকে কবিতা লিখতে অনুরোধ জানান । সেই
অনুরোধে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে রবীন্দ্রনাথ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি
রচনা করেন ।
তিনটি স্তবকে রচিত কবিতাটির
প্রথম স্তবকে কবি আফ্রিকার সুন্দর অতীত ও তার আদিম স্বাতন্ত্র্যতাকে তুলে
ধরেছেন । দ্বিতীয় স্তবকে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে আফ্রিকার
অত্যাচারিত হওয়ার রক্ত ও অশ্রুর কাহিনি । দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের
মাঝখানে একটি সংক্ষিপ্ত স্তবকে কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নগ্ন দ্বিচারিতার ছবি
তুলে ধরেছেন, যেখানে একদিকে আফ্রিকার অবক্ষয়ের মূলচক্রী হিসেবে প্রতিভাত হয় এই
দাস ব্যবসায়ীর দল ।
অন্যদিকে, তাদের নিজেদের দেশে ঠিক একই সময়ে
ধ্বনিত হয় দেবতার আরাধনা, সুন্দরের জয়গান ।
তৃতীয় বা শেষ স্তবকে ধ্বনিত হয় এই শক্তিধর দেশগুলির প্রতি-দ্বন্দ্বিতা
ও প্রতি-হিংসার ‘অশুভ ধ্বনি’, যার ফলশ্রুতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ।
সভ্যতা যখন সংকটাপন্ন ; তখন মানবতার পূজারি কবি ক্ষমার মন্ত্রে আস্থা রেখে
অপমানিত আফ্রিকার কাছে নতজানু হয়েছেন । কারণ, একমাত্র এইভাবেই বাঁচানো যেতে
পারে সভ্যতাকে ।