জাতীয় জনসমাজ গঠনের মূল উপাদানগুলি আলোচনা করো ।

জাতীয় জনসমাজ গঠনের মূল উপাদানগুলি আলোচনা করো ।


👉 উঃ– যেসব উপাদানের সাহায্যে একটি জনসমষ্টি জাতীয় জনসমাজে উন্নীত হয় তাকে জাতীয় জনসমাজের উপাদান বলা হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা জাতীয় জনসমাজ গঠনের উপাদানগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।

সেগুলি হল ১)বাহ্যিক উপাদান ২)ভাবগত উপাদান।

১) বাহ্যিক উপাদান : -

        ক) ভৌগোলিক ঐক্য : একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে কোন জনসমষ্টি দীর্ঘকাল একত্রে বসবাস করলে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও এক গভীর একাত্মবোধের জন্ম দেয়।

কিন্তু জনসমাজ গঠনে এটি অপরিহার্য উপাদান নয়।

দীর্ঘকাল একত্রে বসবাস করেও ঐক্যবোধ গড়ে ওঠেনি এমন বহু উদাহরণ আছে, যেমন ভারতবর্ষ।

আবার ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে হহুদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে সমজাতীয়ত্ব বোধ কাজ করত।

খ) ভাষাগত ঐক্য : একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় একই ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী থাকলে ভাষাগত ঐক্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে এক ধরনের সহজাত একাত্মবোধের জন্ম হয়।

কিন্তু ভাষাগত ঐক্য জাতীয় জনসমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদান নয়, উদাহরণ হিসাবে সুইজারল্যান্ডের কথা বলা যায়।

সুইজারল্যান্ডে ফরাসি, জার্মানি ও ইতালি ভাষা প্রচলিত থাকলেও সুইজারল্যান্ডে জাতীয় জনসমাজ গঠনে অসুবিধা হয়নি।

গ) বংশগত ঐক্য : যখন কোন জনসমাজের অন্তর্গত প্রতিটি ব্যক্তি নিজেকে একই বংশোদ্ভুত বলে মনে করে, তখন তাদের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে ওঠে।

কিন্তু বংশগত ঐক্য জাতীয় জনসমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদান নয়।

ঘ) ধর্মগত ঐক্য : একই ধর্মের মানুষের মধ্যে সমজাতীয় ধর্মীয় আচার অণুষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনা ইত্যাদি প্রচলিত থাকলে গভীর একাত্মবোধের উদ্ভব হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের সৃষ্টি প্রমাণ করেছে যে, শুধু ধর্ম দিয়ে বিভিন্ন জাতিসত্তাকে একসঙ্গে ধরে রাখা যায় না।

ঙ) অর্থনৈতিক সমস্বার্থ : অর্থনৈতিক বন্ধন জাতীয় জনসমাজ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

অর্থনৈতিক স্বার্থ এক বা অভিন্ন না হলে একটি জাতির বিভিন্ন অংশের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

ইংরেজ ও আমেরিকানদের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থের বন্ধন না থাকায় তারা স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে।

২) ভাবগত উপাদান : জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে শুধু বাহ্যিক উপাদানই যথেষ্ট নয়। ভাবগত ঐক্য অপরিহার্য।

ফরাসি অধ্যাপক রেঁনার মতে, জাতীয় জনসমাজ সম্পর্কে ধারণা হল মূলত ভাববাদ।

কোনো জনসমাজ যখন ভাবে যে তাদের সুধ-দুঃখ, ব্যাথ্যা-বেদনা, আশা-আকাঙ্খা, গৌরব-গ্লানি সব এক, তখন সেই জনসমাজের চেতনায় জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটে।

এইভাবে গৌরবময় স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস, ভ্যবিষ্যতের স্বপ্ন এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ইত্যাদির ফলে যে আত্মীয়তার বোধ গড়ে ওঠে তা জাতীয় জনসমাজ ও পরবর্তী পর্যায়ে জাতি গঠনের সহায়ক উপাদান রূপে কাজ করে।

পরিশেষে বরা যায়, জাতীয় জনসমাজ গঠনের জন্য বাহ্যিক উপাদান ও ভাবগত উপাদানের মধ্যে কোনো একটিমাত্র উপাদান জাতিগঠনের অপরিহার্য নাও হতে পারে, উভয় উপাদানের মিলিত ভূমিকা অনেক সময় সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.