.jpeg)
উত্তরঃ সূচনা জাতিত্ব এক ধরনের বিশ্বাস, প্রচলিত চর্চা, এক ধরনের ব্যবস্থাপনা যা
কখনো কখনো সামাজিক ও রাজনৈতিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে মনুষ্য প্রজাতিকে গুণ,
কর্ম, সক্ষমতা ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকে । উন্নত জাতিগুলি এই পার্থক্য
নিজেদের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার, জাতীয় গৌরবগাথা রচনা
জাতিকে হীন বলে মনে করে তাদের ওপর আধিপত্য অন্য প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতির মাধ্যমে বারংবার প্রকাশ করত । যেমন —
(১) জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার : ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী
জাতিগুলি তাদের অধিকৃত উপনিবেশে নিজেদের সীমাহীন জাতিগত গৌরবের কথা প্রচার করে ।
যেমন, জেমস মিল মনে করতেন ব্রিটিশ শাসনে অনুন্নত ভারতীয়দের মঙ্গল হচ্ছে ।
(২) অভিভাবকত্বের মানসিকতা : সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির কিছু
মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলির বাসিন্দাদের স্বঘোষিত অভিভাবক হিসেবে
নিজেদের তুলে ধরেন । এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লর্ড ক্রোমার, লর্ড মিলার
লুগার্ড প্রমুখ ।
(৩) জাতির শ্রেষ্ঠত্ব : সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলি চার্লস
ডারউইনের যোগ্যতম জাতির শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা-র তত্ত্ব প্রচার করে । তারা বলে
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনধারণের উপকরণে ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন জাতির
মধ্যে সংঘাত অনিবার্য ।
(৪) শ্বেতাঙ্গদের উন্নাসিকতা : সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলির
বন্ধমূল ধারণা ছিল যে, কৃয়াঙ্গ জাতির চেয়ে শ্বেতাঙ্গ জাতির মানুষ অনেক বেশি
উন্নত সভ্যতার অধিকারী । সাম্রাজ্যবাদী নীতির মাধ্যমে তাদের উন্নত সভ্যতার রূপটি
প্রকাশিত হয় বলে শ্বেতাঙ্গরা মনে করত ।
(৫) জাতিগত ব্যবধান : উপনিবেশগুলিতে শাসক জাতি ও শাসিত
জাতির মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান সহজেই চোখে পড়ে । সাম্রাজ্যবাদী দেশের আইন, শাসন
ও বিচার বিভাগের যাবতীয় বিশেষ সুযোগসুবিধা শাসক জাতি ভোগ করলেও শাসিত জাতি তা
থেকে বঞ্চিত হয় ।
(৬) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা : ঔপনিবেশিক শাসক জাতি
সর্বদাই নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শ্রেষ্ঠতর এবং উপনিবেশে বসবাসকারী শাসিত জাতির
সংস্কৃতিকে নিকৃষ্ট বলে মনে করত ।
(৭) বিকৃত জাতীয়তাবাদ : ঊনবিংশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের
প্রথমার্ধে ইউরোপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদের
প্রসার ঘটে । এ ধরনের রাষ্ট্রের শাসকেরা নিজেদের দেশ ও জাতিকে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে
করে এশিয়া ও আফ্রিকার অনগ্রসর দেশগুলিকে পদানত করার উদ্যোগ নেয় । যেমন জার্মান
ঐতিহাসিক ট্রিটস্কে , বার্নহার্ডি প্রমুখ প্রচার করেন যে , জার্মানির টিউটনিক
জাতি হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি ।
(৮) সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ : ইউরোপের ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদী
রাষ্ট্রগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি নিজেদের লক্ষ্য ও স্বার্থকে জাতীয় লক্ষ্য
স্বার্থের সমর্থক বলে প্রচার করে । এইরূপ জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ নামে
পরিচিত । এরুপ পুঁজিপতিরা পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্ধ দেশপ্রেম ও
সংকীর্ণ আত্মগৌরবের কথা প্রচার করে ।
উপসংহার :–
দেখা যায়, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শাসনাধীনে
বিভিন্ন উপনিবেশের অনগ্রসর জাতিগুলি নানান শোষণ - পীড়ন ও দুর্দশার শিকার হয় ।
ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসনকে উপনিবেশের
বাসিন্দারা কোনোদিনই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি ।