নতুন বিশ্ব কাকে বলা হয় ? নতুন বিশ্বে বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির অভিযানের পরিচয় দাও ।

☀ ‘নতুন বিশ্ব’ কাকে বলা হয় ? নতুন বিশ্বে বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির অভিযানের পরিচয় দাও ।

উত্তরঃ– 
     ‘নতুন বিশ্ব’ বা ‘New World’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ইতালীয় নাবিক ও স্পেনীয় অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি । তিনি ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে নৌ - অভিযান করে ব্রাজিলে পৌঁছোন । তিনি কলম্বাসের আবিষ্কারের সংশয় কাটিয়ে ঘোষণা করেন যে, আটলান্টিক পারের এই ভূখণ্ডটি 'A New World' একটি নতুন মহাদেশের অস্তিত্ব তাঁর আবিষ্কারের মাধ্যমে জানা যায় জার্মান অধ্যাপক মার্টিন ওয়ার্ল্ড সিমুলার, ভেসপুচির নামানুসারে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করেন আমেরিকা ।



নতুন বিশ্বে বিভিন্ন উপনিবেশ :–
                ভৌগোলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের যুগ শুরু হয় । নতুন বিশ্বের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর পরিমাণে সোনা - রুপোর সঞ্চিত সম্ভাবনা, জীবন - জীবিকার সুবিধা প্রভৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা থাকার জমিজায়গা, বিপুল দলে দলে নতুন বিশ্বে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে । তারা নতুন বিশ্বে উপনিবেশ গড়ে বসবাস করতে তৎপর হয় ।

  (১) স্পেন :–  স্পেন সবার আগে আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনে অগ্রসর হয় । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের মধ্যেই স্পেন নতুন বিশ্বের' বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল । এদের মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, পেরু, বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, প্যরাগুয়ে ইত্যাদি ।

 (২) ব্রিটেন :–  সামুদ্রিক অভিযান ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রথম দিকে স্পেন ও পোর্তুগালের তুলনায় ব্রিটেন পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে তারা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে । বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৩ টি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে । এই উপনিবেশগুলি একত্রে ত্রয়োদশ উপনিবেশ নামে পরিচিত । এই ১৩ টি উপনিবেশ হল –
 ( ১ ) নিউ হ্যাম্পশায়ার
 ( ২ ) ম্যাসাচুসেটস
 ( ৩ ) কানেকটিকাট
 ( ৪ ) রোড দ্বীপ
 ( ৫ ) নিউইয়র্ক
 ( ৬ ) নিউ জার্সি
 ( ৭ ) পেনসিলভেনিয়া
 ( ৮ ) ডেলাওয়ারস
 ( ৯ ) মেরিল্যান্ড
 ( ১০ ) ভার্জিনিয়া
 ( ১১ ) উত্তর ক্যারোলিনা
 ( ১২ ) দক্ষিণ ক্যারোলিনা এবং
 ( ১৩ ) জর্জিয়া ।

      এ ছাড়া ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী কানাডা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হলে সমগ্র উত্তর আমেরিকা কার্যত ব্রিটেনের দখলে চলে আসে ।

 (৩) পোর্তুগাল :–  পোর্তুগিজ নাবিক পেড্রো কেৱাল ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে পদার্পণ করেন । তাঁর সুপারিশে পোর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলে উপনিবেশ স্থাপন করে ।

 (8) ফ্রান্স :–  ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পরে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রসারের কাজে যোগ দেয় । এক্ষেত্রে জ্যাক কার্টিয়ার - এর প্রচেষ্টায় ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে কুইবেক - এ একটি ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে । ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ইস্ট - ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ফরাসি বণিক স্যামুয়েল দ্য সাম্পলেন্ত - এর উদ্যোগে এবং ফরাসি রাজা চতুর্থ হেনরির সহযোগিতায় ফরাসিরা কানাডায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে ।

 (৫) ওলন্দাজ :–  সপ্তদশ শতকে স্পেনের অধীনতা ছিন্ন করার পর হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডের ওলন্দাজ বা ডাচরা অতিদ্রুত সামুদ্রিক অভিযানে সাফল্য দেখায় । সপ্তদশ শতকে নতুন বিশ্বে স্পেনীয়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয় ওলন্দাজরা এবং ক্রমে নতুন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা উপনিবেশ স্থাপন করে ।


 উপসংহারঃ
          ১৫শতকে ইউরোপীয়দের মনে ভারত, চিন আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ সম্পর্কে মোটমুটি ভালো জ্ঞান থাকলেও তারা কিন্তু এ সময় আমেরিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে একেবারেই অবহিত ছিল না । অথচ, ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলই ইউরোপীয়দের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল, যা সত্যিই এক অবাক করার মতো ঘটনা ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.