সিরাজ - উদদৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের কারণগুলি আলোচনা করো ।

সিরাজ - উদদৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের কারণগুলি আলোচনা করো ।

সূচনা :–
     ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল নবাব আলিবর্দি খাঁ মারা যাওয়ার পর তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজ - উদদৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন । সিংহাসনে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ বাঁধে, যার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সংঘটিত পলাশির যুদ্ধ । সিরাজের সঙ্গে কোম্পানির এই বিরোধের কারণগুলি ছিল —

 (১) সিরাজকে অপমান :–  সিরাজ নবাব মনোনীত হওয়ার পর ওলন্দাজ, ফরাসি ও বাংলার জমিদাররা তাঁকে নজরানা দিয়ে তার আনুগত্য স্বীকার করে । কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ অনেক দেরিতে নজরানা পাঠায় । ইংরেজদের এই ব্যবহারে সিরাজ অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন ।

  (২) দুর্গের সংস্কার :–  সংস্কার ও ইংরেজরা কলকাতায় বাণিজ্যিক স্বার্থে দুর্গ সংস্কার থাকে । নবাব উভয়কে এই কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলে ফরাসিরা তা মান্য করে, কিন্তু ইংরেজরা এই নির্দেশ অমান্য করে দুর্গের সংস্কার করতে থাকে । ফলে সিরাজ ইংরেজদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন ।

 (৩) কল্পনাসকে আশ্রয়দান :–  সিরাজ ঘসেটি বেগমের প্রিয় পাত্র ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে রাজস্বের সঠিক হিসাব ও নবাবের প্রাপ্য অর্থ - সহ মুরশিদাবাদে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্তু আর্থিক তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত রাজবল্লভ নবাবকে হিসাব ও প্রাপ্য অর্থ না - দিয়ে পুত্র কৃষ্ণদাস - কে ধনরত্ন ও আত্মীয় - স্বজনসহ কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন । কৃষ্ণদাসকে ফেরত পাঠানোর জন্য সিরাজ ইংরেজদের নির্দেশ দিলে ইংরেজরা তা অমান্য করলে সিরাজ এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন ।

 (৪) সিরাজের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র :–  সিরাজ বাংলার নবাবের সিংহাসনে বসার সময় তাঁর সিংহাসন লাভের বিরোধিতা করে ঘসেটি বেগম, তাঁর পুত্র সৌকং জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । ইংরেজ কোম্পানিও এই ষড়যন্ত্রে তাদের সাহায্য করে । এই খবর জানার পর সিরাজ ইংরেজদের প্রতি অত্যন্ত ঢ়ুষ্ট হন এবং ঘসেটি বেগমের ধনসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন ।

 (৫) নারায়ণ দাসকে অপমান :–  কৃষ্ণদাসকে নবাবের হাতে ফেরত দেওয়া প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সিরাজ তাঁর দূত নারায়ণ দাসকে কলকাতায় ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান । কিন্তু ইংরেজরা নারায়ণ দাসকে গুপ্তচর ঘোষণা করে এবং অপমান করে কলকাতা থেকে বহিষ্কার করে । এতে নবাব প্রচণ্ড অপমানিত হন ।

 (৬) দস্তকের অপব্যবহার :–  ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট ফারুকশিয়ার কোম্পানিকে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার এবং দস্তক প্রদান করে । কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দস্তক ব্যবহার শুরু করেন । এর ফলে নবাব রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দস্তক ব্যবহারের বিরোধিতা করেন এবং তাদের কাছে শুল্ক দাবি করেন । এতে কোম্পানির কর্মচারীরা উদাসীন থাকায় সিরাজ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন । উপরিউক্ত বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিরাজ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন কলকাতা আক্রমণ করেন । কলকাতার ইংরেজ গভর্নর চার্লস ড্রেক এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে অধিকাংশদের নিয়ে ফলতায় পালিয়ে যান । কলকাতা দখলের পর সিরাজ কলকাতার নতুন নাম রাখেন “আলিনগর” । তিনি মানিকচাঁদকে কলকাতার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে মুরশিদাবাদে ফিরে আসেন ।


মূল্যায়নঃ–
    নবাব উভয়কে এই কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলে ফরাসিরা তা মান্য করে । ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল নবাব আলিবর্দি খাঁ মারা যাওয়ার পর তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজ - উদদৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন । সিংহাসনে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ বাঁধে, যার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.