৫. “পাঠ্য কবিতাটি অতৃপ্ত মানব হৃদয়ের একান্ত আর্তির প্রকাশক” – অসুখী একজন
কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো ।
অথবা,
‘অসুখী একজন’ কবিতায় বিশ্বশান্তির বার্তা নিহিত – আলোচনা করো
।
অথবা,
‘অসুখী একজন' কবিতাটিকে যুদ্ধবিরোধী কবিতা বলা যায় কিনা তা বিশ্লেষণ করো
।
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার লেখা কবিতা 'অসুখী একজন' –এই ব্যঞ্জনাময় নামকরণ
থেকেই বোঝা যায় যে, কবিতাটি অতৃপ্ত কোনো বাসনার প্রতিচ্ছবি । অনেক সময়
কবি-সাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি যা সর্বজনের ভাবনার সঙ্গে মিলে
যায় তা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয় । আমাদের পাঠ্য কবিতাটিতেও তা ঘটেছে এ বিষয়ে
কোনো সন্দেহ নেই ।
কবিতার কথক অর্থাৎ, কবি চরম অতৃপ্তি নিয়ে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে
দেশ ছাড়তে বাধ্য হন । কিন্তু তাঁর প্রিয় নারী তাঁর অপেক্ষায় থাকে, কেননা সে
জানে না যে, তার প্রিয়তম আর ফিরে আসবে না । কবিতার শেষ পর্যন্ত এই অপেক্ষাকেই
আমরা দেখেছি । সময় অতিক্রান্ত হয় আবছা হয় স্মৃতি, অপেক্ষার বছরগুলো ভারী হয়
। প্রাণ-ঘাতী যুদ্ধের বীভৎসতা তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ।
দেবালয়, শহর সব কিছু ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও অতৃপ্ত হৃদয়ে সেই
মেয়েটি অপেক্ষার আলোকশিখা দু-হাত দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে । অন্যদিকে
কবিও অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ফিরে আসতে চান তাঁর প্রতীক্ষমান ভালোবাসার কাছে । সব
কিছু ধ্বংসের মাঝেও কবির হৃদয়ে অপেক্ষারতা নারীটির মৃত্যু নেই । চিরায়ত
অতৃপ্ত মানবাৰ্তিই এই নারী ।
কবির অতৃপ্ত মন তার কাছে বার বার ফিরে যেতে চায় বলেই
তিনি বলে ওঠেন, ›আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়’ । স্পষ্টতই কবিতাটিতে কবি
যুদ্ধবিরোধী মনোভাব নিয়ে বিশ্বশান্তির বার্তা প্রেরণ করেছেন পাঠকের কাছে ।