ভারতের জরুরি অবস্থা (State emergency in India)

ভারতের জরুরি অবস্থা :
(State emergency in India) :

      বিচ্ছিন্নতাবাদ বা আঞ্চলিকতাবাদ জনিত সমস্যা বহিঃশত্রুর আক্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্য সরকারের হাতে বিশেষ কিছু ক্ষমতা প্রদানের উদ্দেশ্যে জার্মানির সংবিধানের অনুসরণে জরুরি অবস্থা জারি ধারণা গৃহীত হয়েছে ভারতীয় সংবিধানে।

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি মোট তিন ধরনের জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে । এগুলি হল :—

   A. জাতীয় জরুরি অবস্থা ( ৩৫২ নম্বর ধারা ) :-
       রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বহিঃ শত্রুর আক্রমণ , যুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ গোলমালের জন্য দেশের নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে অথবা গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাহলে তিনি সমগ্র দেশের জন্য অথবা দেশের কোন নির্দিষ্ট অংশের জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন । জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করার আগে রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ করতে বাধ্য থাকবেন ( ৪৪ তম সংবিধান সংশোধনী ) ।

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সেই ঘোষণার এক মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের অনুমোদন লাভ করতে হবে।পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর ঘোষিত জরুরি অবস্থা সর্বাধিক ছয় মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে । জাতীয় জরুরি অবস্থাকে ছয় মাসের পরেও ক্রিয়াশীল রাখার জন্য পুনরায় পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন । এইভাবে নির্দিষ্ট সময় পরপর পার্লামেন্ট অনুমোদন করলে জাতীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে পারে ।

আজ পর্যন্ত জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে মোট তিনবার ।

   1. ১৯৬২ সালে চীনের ভারত আক্রমণের সময় ।
   2. ১৯৭২ সালে ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ।
  3. ১৯৭৫ সালে প্রথমবার দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য ।


     জাতীয় জরুরি অবস্থা চলাকালীন পার্লামেন্টের অনুমোদনক্রমে বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা যেতে পারে ।

  B. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ( ৩৫৬ নম্বর ধারা ) :-
    কোন অঙ্গ রাজ্যের রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে সেই রাজ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যাতে সংবিধান অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে এই মর্মে তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখিত সুপারিশ পেশ করতে পারেন । রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ৩৫৬ ধারা বা জরুরি অবস্থা জারি হয় ।

       ৩৫৬ ধারা জারি হওয়ার পর ঘোষণা টিকে দু'মাসের মধ্যে সংসদের উভয় পক্ষের অনুমোদন লাভ করতে হবে । এই অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হলে জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে ঘোষণাটি বাতিল হয়ে যায় । পার্লামেন্টের অনুমোদন লাভ করলে এই ঘোষণা ছয় মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে । পার্লামেন্ট চাইলে ছয় মাসের জন্য এর মেয়াদ বাড়াতে পারে ।


নির্বাচন কমিশন যদি মনে করেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি তাহলে পার্লামেন্টের মাধ্যমে বারবার ৬ মাসের জন্য জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বাধিক তিন বছর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার ঘোষণা কে কার্যকর করে রাখা যায় ।

 আজ পর্যন্ত ৩৫৬ নং ধারা জারি হয়েছে ৭৫ বারেরও বেশি ।


  C. আর্থিক জরুরি অবস্থা ( ৩৬০ নম্বর ধারা ) :-
                  ৩৬০ নম্বর ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন দেশের কোন অংশে বা সমগ্র অংশে আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম নষ্ট হতে চলেছে বা এরকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন । আর্থিক জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদন লাভের প্রয়োজন আছে । পার্লামেন্টের দ্বারা নির্দিষ্ট সময় পরপর বারংবার অনুমোদিত হওয়ার পর জরুরি অবস্থার ঘোষণাটি অনির্দিষ্টকাল কার্যকর থাকতে পারে ।

    আজ পর্যন্ত ৩৬০ নম্বর ধারা একবারও জারি হয়নি ।

 জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে লোকসভা এবং রাজ্যসভা ক্ষমতা ভোগ করে । তবে লোকসভায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা তুলে নিতে বাধ্য থাকেন ।



 🌍 জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারা ও তাদের আলোচ্য বিষয় :

        ৩৫২ নং ধারা : জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা ।

        ৩৫৩ নং ধারা : জাতীয় জরুরি অবস্থার ফলাফল ।

        ৩৫৪ নং ধারা : জরুরী অবস্থাকালীন পর্বে রাষ্ট্রপতি বিশেষ আদেশবলে কেন্দ্র - রাজ্য রাজস্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারেন ।

        ৩৫৫ নং ধারা : জরুরী অবস্থাকালীন পর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য রাজ্যগুলিকে বহিরাক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ গোল -যোগের হাত থেকে রক্ষা করা ।

        ৩৫৬ নং ধারা : রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা বা রাষ্ট্রপতির শাসন ।

        ৩৫৭ নং ধারা : রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হলে পার্লামেন্ট উক্ত রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারবে ।

        ৩৫৮ নং ধারা : সংসদ আইন জারি করে জরুরী অবস্থাকালীন পর্বে ১৯ ধারায় বর্ণিত ছয়টি স্বাধীনতার অধিকার স্থগিত রাখতে বা খর্ব করতে পারেন ।

         ৩৫৯ নং ধারা : রাষ্ট্রপতি বিশেষ ঘোষণা বলে সামগ্রিকভাবে মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখতে বা বাতিল করে দিতে পারেন ।

         ৩৬০ নং ধারা : আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা ।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.