📌 ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের পটভূমি কী ছিল ?
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের প্রেক্ষাপট আলোচনা
করো ।
সূচনা :-
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয়রা
ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে । অন্যদিকে সাইমন
কমিশনের রিপোর্ট ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে । ফলে সরকার ১৯২৭
খ্রিস্টাব্দের 'সাইমন কমিশনের রিপোর্ট' এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের
সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ নামে একটি "শ্বেতপত্র" প্রকাশ করে ।
একটি যৌথ নির্বাচন কমিটির বিবেচনার
পর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি বিল পেশ করা
হয় । এই বিলটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আইনে পরিণত হয়, যা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের
ভারতশাসন আইন নামে পরিচিত ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই নতুন ভারতশাসন আইন প্রবর্তনের
ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যগুলি ছিল —
গণ আন্দোলন :-
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু - চেমসফোর্ড
সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা - আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে
সারাভারতে প্রবল গণ আন্দোলন শুরু হয় ।
বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধি :-
এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী
কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ।
জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধি :-
ভারতে ক্রমবর্ধমান
জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধি ব্রিটিশ সরকারকে খুবই ভাবিয়ে তোলে ।
ব্রিটিশ সরকারের লক্ষ্য :-
এই সময়
সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সুরক্ষিত করা এবং ভারতীয়
জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা ।
এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ
পার্লামেন্ট ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইন পাস করলে এই আইন ১৯৩৭
খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয় ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের দুটি মূল কাঠামো ছিল —
সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বায়ত্ত শাসিত
প্রাদেশিক বা প্রাদেশিক সরকার ।
📌 কেন্দ্রীয় সরকার :-
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের মাধ্যমে
কেন্দ্রে একধরনের দ্বৈতশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় । এই আইনের মাধ্যমে যে -
শাসনতান্ত্রিক পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয় তা হল —
( 1 ) ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি ভারতীয়
যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
( 2 ) কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এর নিম্নকক্ষ বা কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠিত হয় ৩৭৫ জন
সদস্য নিয়ে, আর উচ্চকক্ষ গঠিত হয় ২৬০ জন সদস্য নিয়ে ।
( 3 ) মুসলিম সম্প্রদায়, তপশিলি সম্প্রদায়, শিখ, প্রভৃতি
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ।
( 4 ) কেন্দ্রীয় শাসনের বিষয়গুলিকে
‘সংরক্ষিত' এবং 'হস্তান্তরিত' এই দু - ভাগে ভাগ করা হয় ।
( 5 ) গভর্নর জেনারেল শাসন পরিচালনার বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতা
লাভ করেন । তিনি আইনসভা ও মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ উপেক্ষা করার এবং তাদের
কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার পান ।
( 6 ) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের
উদ্দেশ্যে তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয় । এগুলি হল —
( i ) কেন্দ্রীয় তালিকা, ( ii ) প্রাদেশিক তালিকা, ( iii ) যুগ্ম
তালিকা
📌 প্রাদেশিক সরকার :-
গভর্নর শাসিত প্রদেশগুলিতে দ্বৈতশাসনের
পরিবর্তে স্বায়ত্তশাসনের পরিকল্পনা করা হয়, যার উল্লেখযোগ্য দিকগুলি ছিল —
( i ) গভর্নর এবং একটি বা দুটি কক্ষ নিয়ে প্রাদেশিক
আইনসভা গঠিত হবে ।
( ii ) আইনসভাগুলির মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয় ।
( iii ) আইনসভা ও আইন পরিষদ আহ্বান করা বা ভেঙে ফেলার অধিকার
গভর্নরকে দেওয়া হয় ।
( iv ) আইনসভা আইন প্রণয়ন করলেও তা গভর্নরের সম্মতি ছাড়া
আইনে পরিণত হবে না ।
( v ) প্রতিটি প্রদেশে গভর্নরের অধীনে একটি মন্ত্রীসভা গঠন করা
হয় । মন্ত্রীরা তাদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকতেন ।
( vi ) প্রদেশগুলিতেও সম্প্রদায়ভিত্তিক পৃথক নির্বাচনের
ব্যবস্থা করা হয় ।