👉 ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের এই দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর সাধারণভাবে ‘পঞ্চাশের
মন্বন্তর' নামে পরিচিত । বাংলায় এই দুর্ভিক্ষের চিত্রটি ছিল অত্যন্ত করুণ ও
মর্মভেদী । যার উল্লেখযোগ্য ফলাফলগুলি ছিল —
(১) ব্যাপক প্রাণহানি :-
পঞ্চাশের মন্বন্তরের
ফলে বাংলা দেশে প্রায় ৪৭-৭০ লক্ষ বা তার বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এই সময়
বাংলার রাস্তাঘাটে, বনেবাদাড়ে অনাহারে মৃত মানুষের দেহ স্তূপাকারে পড়ে থাকতে
দেখা যেত । মৃতদেহ সৎকারের মানুষ ছিল না ।
(২) মানবিক বিপর্যয় :-
খিদের জ্বালায় মানুষ
অখাদ্য - কুখাদ্য খেতে শুরু করে । কুকুরের সঙ্গে লড়াই করে অভুক্ত মানুষ শহরের
ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে । স্বামী স্ত্রী - কে বিক্রি
করে, পিতা - মাতা সন্তানদের বিক্রি করে । বাঁচার তাগিদে মানুষ প্রিয়জনকে ফেলে
রেখে অন্যত্র চলে যায় । বাংলার পারিবারিক জীবন ভেঙে পড়ে ।
(৩) খাদ্য সরবরাহ :-
বাইরে থেকে বাংলায় ২৬৪
হাজার টন চাল, ২৮ হাজার টন গম এবং ৫৫ হাজার টন মিলেট বাংলায় আমদানি করে
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার চেষ্টা করা হয় ।
(৪) কমিশন গঠন :-
দুর্ভিক্ষের পর সরকার
মন্বন্তরের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করে । এই কমিশন তার রিপোর্টে
দুর্ভিক্ষের সময় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক, পৌর ও সামরিক নীতি ব্যর্থতার কথা
উল্লেখ করে ।
(৫) অর্থনীতিতে প্রভাব :-
দরিদ্র
পরিবারগুলি দীর্ঘকাল ধরে যে - ধন যক্ষের মতো সযত্নে রক্ষা করে আসছিল
খাদ্যসংকটের শুরুতেই তা দিয়ে খাদ্য ক্রয় করেছিল । সঞ্ছিত সামান্য অর্থসম্পদ
শীঘ্রই তা ফুরিয়ে গেলে নিঃস্ব - রিক্ত অভুক্ত মানুষগুলি থালা - বাটি হাতে
রাস্তায় ভিক্ষে করতে বেরিয়ে পড়ে ।
উপসংহার :-
যে কারণে সরকার দুর্ভিক্ষের পর প্রশাসনিক পুনর্গঠনের কথা
ভাবে । কৃষি উন্নয়নের ওপর জোর দেয় । অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য আন্দোলন গড়ে
তোলে । এই বিরাট প্রশাসনিক ব্যর্থতা ব্রিটিশ শাসনের রাজনৈতিক পরাজয়ের সূচনা
করেছিল ।