সূচনা :-
পলাশির যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠাযর সূচনা থেকে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক অর্থনীতি অনুসরণ করেছিল তা ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকেই ধ্বংস করে ফেলেছিল । ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের এই দুর্ভিক্ষ সাধারণভাবে "পঞ্চাশের মন্বন্তর" নামে পরিচিত । এই অবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দায়ী ছিল । সেই গুলি হল —
খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস :-
১৯৪৩ – ৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা না দিলেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছিল ।
কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি :-
১৯৪১ – ৪২ খ্রিস্টাব্দে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হয়, যা ১৯৪৩ – ৪৪ খ্রিস্টাব্দে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল । অথচ অন্যদিকে অকৃষিজাত পণ্যের মূল্য এতটাও বাড়েনি । এই সময় কলকাতায় চালের দাম দ্বিগুণ হয় ।
কালোবাজারি মজুমদারি :-
উৎপাদকরা ভয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য মজুদ করতে থাকে, যাতে তারা পরবর্তী সময়ে খাদ্যের অভাব পূরণ করতে পারে । অন্যদিকে ব্যবসায়ী, বড়ো কৃষক বেশি দামের লোভে খদ্য শস্যের মজুতদারী শুরু করে ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় :-
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মেদনীপুর উপকূল অঞ্চলে প্রচন্ড ঝড় ও বন্যা বাংলার অন্যান্য অঞ্চল কে প্রভাবিত করে ।
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা :-
সরকারী উদাসীনতার বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তর অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে ওঠে । এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের যে-সদিচ্ছার অভাব ছিল ।
১. সরকারের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি :-
সরকার মনে করত যে প্রকৃত পক্ষে বাংলায় কোন খাদ্যের সংকট নেই । খাদ্যের মজুতদারিই বাংলার দুর্ভিক্ষের একমাত্র কারণ । এই অজুহাত দেখিয়ে সরকার প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল ।
২. মজুতদারি বন্ধে সরকারি উদ্যোগের অভাব :-
মজুদদারী বন্ধ করতে বা গুদামে মজুত করা খাদ্য বাজারে ছাড়তে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করতে সরকার বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি ।
৩. সুরাবর্দি সরকারের অবস্থা :-
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের খাদ্য বিভাগের একটি প্রতিবেদনে সরকারের কয়েকটি অবস্থা তুলে ধরা হয়েছিল । তাতে বলা হয়েছিল যে —
a. কলকাতায় কালোবাজারি মজুতদের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানের ব্যর্থতা ।
b. সরকার কর্তৃক বিলম্বে রেশন ব্যবস্থা চালু করা ।
c. ইসপাহানি কোম্পানিকে একচেটিয়া খাদ্য সরাবরাহ করনের অধিকারদান মন্বন্তরকে তীব্রতর করে তোলে ।
উপসংহার :-
পঞ্চাশের এই মন্বন্তর বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সকল ক্ষেত্রেই গভীর ক্ষত চিহ্ন রেখে দিয়েছিল । চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল । উদ্ভব হয়েছিল এক নীতি-আদর্শহীন, পার্থিব ভোগসর্বস্ব নতুন প্রজন্মের ।