আলিগড় আন্দোলনে সৈয়দ আহম্মদ খানের ভূমিকা কী ছিল ?

আলিগড় আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

  অথবা,

 মুসলিম সমাজের অগ্রগতিতে স্যার সৈয়দ আহম্মদ খান আলিগড় আন্দোলনের ভূমিকা কী ছিল ?


👉🏼 সূচনা :-
       পাশ্চাত্যের আলোকে মুসলমান সমাজকে আলোকিত করার প্রথম দায়িত্বভার নেন স্যার সৈয়দ আহম্মদ খান । তাঁর নেতৃত্বে আলিগড়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল বলে তা আলিগড় আন্দোলন নামে পরিচিত ।

সমাজ সংস্কার :-
              কুসংস্কারে নিমজ্জিত মুসলিম সমাজে আশার আলো জাগাতে সৈয়দ আহমেদ সমস্ত গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন । তিনি মুসলিম সমাজের উন্নতির উদ্দেশ্যে —
   ১. চিরাচরিত রীতিনীতি, অন্ধবিশ্বাস, মোল্লাতন্ত্রের সকল নির্দেশ অমান্য করে পবিত্র কোরানের যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা তুলে ধরেন ।
   ২. সমাজে বহুবিবাহ, তালাক প্রথা, পর্দাপ্রথার ঘোরতর প্রতিবাদ করেন ।
   ৩. নারীমুক্তি ও নারীশিক্ষার পক্ষে মত প্রচার করেন ।


শিক্ষা সংস্কার :-
      সৈয়দ আহম্মদ খান প্রথম জীবন বাদে সারাটা জীবন ধরেই মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন ।
 তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষাকে একমাত্র মহৌষধি মনে করতেন । তাই তিনি —
  ১. ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে গাজিপুরে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন ।
  ২. ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে গড়ে তোলেন 'Scientific Society.
  ৩. ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন ‘Translation Society.
  ৪. ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন Aligarh Anglo Orienta Mohammedan Colleg, যা ১৯২১ খ্রি. আলিগড় বিশ্ব বিদ্যালয়ে পরিণত হয় ।


রাজনৈতিক সংস্কার :-
            শিক্ষা, সমাজ - সংস্কৃতি ছ রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রচারে সৈয়দ আহম্মদ খান ও আলিগড় আন্দোলন ভিন্নতর ভূমিকা গ্রহণ করে । তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রথমে হিন্দু - মুসলিম সম্প্রীতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করেছিলেন ।
      তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করতে শুরু করেন যে, ভারতবর্ষে হিন্দু - মুসলিম দুটি পৃথক সম্প্রদায় । শুধু তাই নয়, তিনি ভারতে হিন্দু পরিচালিত কংগ্রেসি আন্দোলন -কে জনগণের আস্থাহীন যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন ।


সীমাবন্ধতা :-
      সৈয়দ আহম্মদ খানের সংস্কার প্রচেষ্টা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি । এক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । যেমন –
     ১. মুসলিম গোঁড়া মৌলবী ও মোল্লা শ্রেণি আহম্মদ খানের সংস্কার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করায় তাঁর ধর্ম - সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ ব্যর্থ হয় ।

    ২. শিক্ষিত শহর কেন্দ্রিক বিত্তশালী শ্রেণির মধ্যে এই আন্দলন সীমাবদ্ধ ছিল ।

    ৩. সমিজের গরিষ্ঠ অংশ মুসলমানদের প্রতি কোনো কর্মসূচি না -নেওয়ার আন্দোলন গণমুখী হয়নি ।

    ৪. এক সংকীর্ণ অঞ্ছলে আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকায় সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন প্রভাব  বিস্তার করতে পারেনি ।

 উপসংহার :-
        তা সত্ত্বেও বলা যেতে পারে আলিগড় আন্দোলন মুসলমান সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার এক উজ্জ্বল প্রচেষ্টা । এই আন্দোলন মুসলমানদের আত্মনির্ভর করে তুলেছিল । মুসলিম সমাজ থেকে বহুলাংশে কুসংস্কার ও গোঁড়ানি দূর করে মুসলিমদের আধুনিক করে তোলে ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.