📌 মর্লে - মিন্টো সংস্কার আইনের শর্ত এবং গুরুত্ব ও এই আইনের ত্রুটি
আলোচনা করো ।
👉🏼 সূচনা :-
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ভারতের শাসন সংস্কারের জন্য
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি খসড়া আইন পেশ করেন । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এই
খসড়া আইনের রূপ পায় । এই আইন ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
‘কাউন্সিল আইন’ বা ‘মর্লে-মিন্টো শাসন
সংস্কার আইন'
নামে পরিচিত ।
আইনের বিভিন্ন দিক :-
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত মর্লে - মিন্টো সংস্কার আইনের
দুটি প্রধান দিক ছিল । দিক গুলি হল —
( ক ) কার্যনির্বাহক পরিষদ, ( খ ) আইন পরিষদ ।
( ক ) কার্যনির্বাহক পরিষদ :-
কেন্দ্র ও বিভিন্ন প্রদেশে কার্যনির্বাহক পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে কয়েকটি
পদক্ষেপ গ্রহন করে —
১. বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে এই প্রথম একজন ভারতীয় সদস্য
স্থান পায় এবং পরিষদের প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন
সিংহ ।
২. বোম্বাই ও মাদ্ররাজের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি
করে ২ থেকে ৪ করা হয় ।
( খ ) আইন পরিষদ :-
আইন পরিষদের গঠন ও ক্ষমতা
বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয় ।
১. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করি
হয় ।
২. প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৩০ জন থেকে বাড়িয়ে ৫০ জনের
মধ্যে রাখা হয় ।
৩. মুসলিম সম্প্রদায়কে পৃথক ভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার
দেওয়া হয় ।
আইনের ত্রুটি :-
মর্লে - মিন্টো সংস্কার
আইনের বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে । সেগুলি হল —
১. এই শাসন সংস্কার আইন দ্বারা কেন্দ্র কিংবা প্রদেশে কোনো
দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি ।
২. এই আইনের দ্বারা জনসাধারণের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের কোনো
ক্ষমতা বা মতামতের গুরুত্ব ছিল না ।
৩. দেশীয় রাজ্য, সামরিক বিভাগ, বৈদেশিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনো
প্রস্তাব আনার অধিকার আইনসভার ছিল না ।
এছাড়া, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে
জাতীয় কংগ্রেস এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে । সম্প্রদায়
ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে নরমপন্থীরা 'মারাত্মক' ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেন ।
গুরুত্ব :-
মর্লে - মিন্টো সংস্কার আইনের বেশ কিছু গুরুত্ব রয়েছে ।
১. মর্লে - মিন্টো আইনের দ্বারাই ভারতে প্রথম
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে বেসরকারি সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় ।
২. এই আইনের দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয়
সদস্য গ্রহণ করে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয় ।
৩. এই আইনের দ্বারা ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র
প্রস্তুত হয় ।
উপসংহার :-
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আর কুপল্যান্ড -এর মতে, ইংরেজ
শাসনে ভারতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে যে -সাংবিধানিক শক্তিশালী সংস্কারের ইতিহাস
শুরু হয়েছিল, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এসে তা কিছু পরিমাণে হলেও প্রতিনিধি মূলক শাসন
কাঠামোর রূপ পেয়েছিল ।