সূচনা :-
উচ্চবিত্ত অভিজাত মুসলিম সম্প্রদায় ও ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের যৌথ প্রচেষ্টার ফল ছিল সিমলা বৈঠক । গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো সিমলা বৈঠক চলা কালীন মুসলিম প্রতিনিধি মহসিন-উল-মুলককে পরামর্শ দেন যে, হিন্দুদের সঙ্গে তাল রেখে চলতে হলে মুসলিমদের একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন ।
অতি অল্পকালের মধ্যে মুসলিম লিগ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয় । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর শাখা গড়ে ওঠে । লিগের দাবির ভিত্তিতে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়, যার ফলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ আরও বৃদ্ধি পায় ।
গুরুত্ব :-
মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক অশনি সংকেত বয়ে নিয়ে আসে ।
(১) মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার ফলে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলার কাজ কেবল ব্যাহত হয়নি, তা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে ।
(২) মুসলিম লিগ প্রমাণ করেছিল যে, ভারতবর্ষে হিন্দু -মুসলিম দুটি পৃথক জাতি । তাদের স্বার্থ কখনও এক হতে পারে না ।
জিন্নাহর চোদ্দো দফা দাবি :-
ভারতে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে দিল্লিতে মুসলিম লিগের অধিবেশন বসে । এই অধিবেশনে জিন্নাহ্ ভারতের মুসলিমদের স্বার্থে তার বিখ্যাত "চোদ্দো দফা দাবি"
( Fourteen Points ) পেশ করেন । এগুলি হল —
১. ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা ।
২. প্রদেশগুলিতে একই ধরনের স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা ।
৩. আইনসভাগুলিতে মুসলিমদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধির নির্বাচনের সুযোগদান ।
৪. মুসলিমদের জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভায় অংশ আসন সংরক্ষণ ।
৫. মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ।
৬. বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখে ভারতের প্রদেশ গুলি পুনর্গঠন করা ।
৭. সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া ।
৮. কোনও আইনসভার যে-কোনো সম্প্রদায়েরই ৩/৪ অংশ সদস্য কোনও বিলের বিরোধিতা করলে সেই বিল প্রত্যাহার করা ।
৯. প্রাদেশিক আইনসভার অনুমতি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন না করা ।
১০. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ১/৩ অংশ মুসলিম সদস্য গ্রহণ করা ।
১১. রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থাগুলিতে মুসলিমদের জন্য পদ সংরক্ষণ করা ।
১২. সিন্ধু প্রদেশকে বোম্বাই প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন প্রদেশ গঠন করা ।
১৩. বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সাংবিধানিক সংস্কার ঘটানো ।
১৪. মুসলিম শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ঘটানো ।
উপসংহার :-
জিন্নাহর এই চোদ্দো দফা দাবির অধিকাংশ প্রস্তাবই ছিল রিপোর্টের প্রস্তাবগুলির একেবারে বিপরীত এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী । কিন্তু এই দাবিগুলি মুসলিমদের কাছে খুবই সমর্থনযোগ্য বলে মনে হতে থাকে । ফলে মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির সম্ভাবনা বিনষ্ট হয় ।