১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের ত্রুটি ও গুরুত্ব আলোচনা করো



১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের ত্রুটি :-
       ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইন কংগ্রেস - সহ ভারতবর্ষের কোনো রাজনৈতিক দলকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি । কারণ —

   ( 1 ) এই আইনে ভারতীয়দের ভোটাধিকারের প্রসার ঘটানো হয়নি । মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ভোটদানের অধিকার পেয়েছিল ।

   ( 2 ) ভাইসরয় ও গভর্নরদের হাতে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল । ফলে আইনসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল ।

   ( 3 ) অনেক দেশীয় রাজা যুক্তরাষ্ট্র সরকারে যোগদান করেনি । এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি ।

   ( 4 ) সাম্প্রদায়িক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে জাতীয়তাবাদকে আঘাত করা হয় ।

   ( 5 ) এই আইনের দ্বারা ভারতবাসীকে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়নি ।


        তাই জাতীয় কংগ্রেস এই আইনকে 'সম্পূর্ণ হতাশাব্যঞ্জক' বলে অভিহিত করেছে । মুসলিম লিগ এই আইনকে 'গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধ্বংসকারী' বলে অভিহিত করে । জওহরলাল নেহরু এই আইনকে 'দাসত্বের এক নতুন অধ্যায়' বলে অভিহিত করেন । সুভাষচন্দ্র বসুর মতে, "ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের জন্য নয়, ব্রিটিশ শাসনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিই ছিল এর উদ্দেশ্য" ।


গুরুত্ব :-
    বিভিন্ন ত্রুটি ও সীমাবন্ধতা থাকা সত্ত্বেও ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য ।

  ১. এই আইন স্বাধীন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল ।

  ২. প্রদেশগুলিতে স্বায়ওশাসন নীতি কার্যকর হয় ।

  ৩. স্বাধীন ভারতের সংবিধানের কাঠামোটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতশাসন আইনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে ।


মূল্যায়ন :-
      তবে সব দিক থেকে বিচার করে বলা যায় যে, এই আইনে দেশবাসীকে ক্ষমতা দেওয়া অপেক্ষা  ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের  অধিকারই বেশি দেওয়া হয়েছিল ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.