সিরাজ উদদৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের কারনগুলি আলোচনা করো ।

📌 সিরাজ-উদদৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের কারনগুলি আলোচনা করো ।

 সূচনা :-
    ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল নবাব আলিবর্দি খাঁ মারা যাওয়ার পর তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজ - উদদৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন । সিংহাসনে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ বাঁধে ।

 ( ক ) সিরাজকে অপমান :-
           সিরাজ নবাব মনোনীত হওয়ার পর ওলন্দাজ, ফরাসি ও বাংলার জমিদাররা তাঁকে নজরানা দিয়ে তার আনুগত্য স্বীকার করে । কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ অনেক দেরিতে নজরানা পাঠায় । ইংরেজদের এই ব্যবহারে সিরাজ অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন ।

( খ ) দূর্গ সংস্কার :-
            ফরাসি ও ইংরেজরা কলকাতায় বাণিজ্যিক স্বার্থে দুর্গ সংস্কার করতে থাকে । নবাব উভয়কে এই কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলে ফরাসিরা তা মান্য করে, কিন্তু ইংরেজরা এই নির্দেশ অমান্য করে দুর্গের সংস্কার করতে থাকে । ফলে সিরাজ ইংরেজদের প্রতি ক্ষুদ্ধ হন ।

 ( গ ) কৃষ্নদাসকে আশ্রয়দান :-
           সিরাজ ঘসেটি বেগমের প্রিয় পাত্র ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে রাজস্বের সঠিক হিসাব ও নবাবের প্রাপ্য অর্থ - সহ মুরশিদাবাদে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্তু রাজবল্লভ নবাবকে হিসাব ও প্রাপ্য অর্থ না - দিয়ে পুত্র কৃষ্ণদাস - কে ধনরত্ন ও আত্মীয় - স্বজনসহ কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন । কৃষ্ণদাসকে ফেরত পাঠানোর জন্য সিরাজ ইংরেজদের নির্দেশ দিলে ইংরেজরা তা অমান্য করলে সিরাজ এই ঘটনায় প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হন ।

 ( ঘ ) সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র :-
               সিরাজ বাংলার নবাবের সিংহাসনে বসার সময় তাঁর সিংহাসন লাভের বিরোধিতা করে ঘসেটি বেগম, তাঁর পুত্র সৌকং জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । ইংরেজ কোম্পানিও এই ষড়যন্ত্রে তাদের সাহায্য করে ।

 ( ঙ ) নারায়ন দাসকে অপমান :-
                  কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গ সংস্কার বন্ধ করার জন্য সিরাজ তাঁর দূত নারায়ণ দাসকে কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান । কিন্তু ইংরেজরা নারায়ন দাসকে গুপ্তচর ঘোষনা করে অপমান করে কলকাতা থেকে বহিষ্কার করে । এতে নবাব প্রচন্ড অপমানিত হন ।

 ( চ ) দস্তকের অপব্যবহার :-
               ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট ফারুকশিয়ার কোম্পানিকে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার দস্তক প্রদান করে । এর ফলে নবাব রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দস্তক ব্যবহারের বিরোধিতা করেন এবং তাদের কাছে শুল্ক দাবি করেন । এতে কোম্পানির কর্মচারীরা উদাসীন থাকায় সিরাজ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন ।

 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আক্রমন :-
                    উপরিউক্ত, বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিরাজ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন কলকাতা আক্রমণ করেন । কলকাতার ইংরেজ গভর্নর চার্লস ড্রেক এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে অধিকাংশদের নিয়ে ফলতায় পালিয়ে যান । কলকাতা দখলের পর সিরাজ কলকাতার নাম রাখেন 'আলিনগর' । তিনি মানিকচাঁদকে কলকাতার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে মুরশিদাবাদে ফিরে আসেন ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.