লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করো । এই চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা করো ।

📌 লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করো । এই চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা করো ।

ভূমিকা :-
         ভারতে হিন্দু - মুসলিম ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল জাতীয় কংগ্রেস আয়োজিত লক্ষ্ণৌ অধিবেশন । এই অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতারা নিজেদের মধ্যে সমস্ত বিবাদ ভুলে গিয়ে বালগঙ্গাধর তিলকের সভাপতিত্বে মুসলিম লিগের নেতা আলি জিন্নাহ -র সঙ্গে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা "লক্ষ্ণৌ চুক্তি" নামে পরিচিত ।

ফলাফল :-
      রাজনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধিবাদী রাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলে । মুসলিমদের পক্ষ থেকেও আলিগড় আন্দোলন অদ্ভুত ভাবধারা সুরে সরিয়ে রেখে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি সহাযোগিতার মনোভাব গ্রহণ করে ।


 লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলী :-
     ১. কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যুগ্মভাবে সরকারের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার দাবি করবে ।

      ২. মুসলিম লিগ কংগ্রেসের ‘স্বরাজ’ বা স্বায়ত্তশাসনের নীতি মেনে নেবে ।

        ৩. কংগ্রেসেও মুসলিম লিগের পৃথক নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি জানাবে ।

       ৪. প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে এবং কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য -দের মধ্যে 1/3 ভাগ হবে মুসলিম প্রতিনিধি ।

        ৫. কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের আলাদা নির্বাচন নীতি স্বীকৃতি পাবে ।

       ৬. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার 4/5 অংশ নির্বাচিত ও 1/5 অংশ মনোনয়নের দাবি সরকারকে মানতে হবে বলে উভয়পক্ষের মধ্যে ঠিক হয় ।

       ৭. ইন্ডিয়া কাউন্সিল তুলে দেওয়ার জন্য উভয়ই ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাবে ।

       ৮. প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতি ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলি ভারতীয়রাই নিয়ন্ত্রণ করবে । এটি কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যৌথভাবে সরকারের কাছে দাবি জানাবে ।



গুরুত্ব :-
     নানা কারণে এই লক্ষ্ণৌ চুক্তি ভারতের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ —

  a. এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে সুরাট অধিবেশনের পর আবার ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী উভয় গোষ্ঠীর পুনর্মিলন হয় ।

   b. জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ মিলিত হওয়ায় জাতীয় আন্দোলনের পথ প্রশস্ত হয় ।

  c. এই চুক্তির ফলে পাঞ্জাব লিগ ভেঙে যায় ।

  d.পরোক্ষভাবে কংগ্রেস দ্বি - জাতিতত্ত্ব মেনে নেয় ।


মন্তব্য :-
    লক্ষ্ণৌ চুক্তি ছিল জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের জোড়াতালি মাত্র । সাধারণ হিন্দু ও মুসলমানের ওপর এই চুক্তির কোনো প্রভাব পড়েনি । যে কারণে বহু রাজনীতিবিদ এবং ঐতিহাসিকরা লক্ষ্ণৌ চুক্তিকে নানাভাবে সমালোচনা করেছেন ।

   1. ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন , লক্ষ্ণৌ কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ এই চুক্তি স্বাক্ষর করে চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন ।

  2.  গান্ধিজির মতে, এই চুক্তি সাধারণ হিন্দু ও মুসলিমদের ৩ মধ্যে যোগ সূত্র স্থাপন করতে পারেনি ।

  3. অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে , ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ প্রসারে লক্ষ্ণৌ চুক্তি আদৌ সহায়ক ছিল না ।

        তবুও একথা অনস্বীকার্য যে, সাময়িকভাবে জাতীয় আন্দোলনে এই চুক্তির প্রভাব ছিল ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.