সংবিধানের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাজন class 11 2021 - 2022

 ঃ সংবিধানের সংজ্ঞা এবং শ্রেণিবিভাজন ঃ
( Definition of Constitution and
Classification of Constitution )



📌 সংজ্ঞা :-
       সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় মৌলিক নিয়মকানুনের সমষ্টিকে সংবিধান বা শাসনতন্ত্র বলা হয় ।

কিন্তু সংবিধানের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নির্দেশ করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পক্ষে অদ্যাবধি সম্ভব হয়নি । গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টলের মতে, সংবিধান হল রাষ্ট্রের চরম কর্তৃত্বের শৃঙ্খলাবদকরণ । উলসে ( Woolsey ) -র ভাষায় সংবিধান হল সেইসব নীতির একত্রীকরণ, যেগুলি অনুসারে সরকারের ক্ষমতা, জনসাধারণের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্কের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়ে থাকে । লর্ড ব্রাইস বলেছেন সংবিধান হল সেইসব আইনকানুন ও রীতিনীতির সমষ্টি, যেগুলি রাষ্ট্রের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে । কুলি ( Cooley ) সংবিধানকে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন বলে বর্ণনা করেছেন । সি. এফ. স্ট্রং ( C. F. Strong ) -র দৃষ্টিতে সংবিধান হল সেইসব নিয়মনীতির সমষ্টি, যার দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের আধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নীর্ধারিত হয় ।

 কিন্তু, মার্কসবাদীরা সংবিধানকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে বলেছেন যে, ধনবৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থায় ধনিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে সৃষ্ট কতকগুলি নিয়মকানুনই হল রাষ্ট্রের সংবিধান । এইসব নিয়মকানুন রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগের কার্যক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে এবং কীভাবে এই বিভাগগুলি পরিচালিত হবে তার নির্দেশ দেয় ।


🖇 সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন( Classification of Constitution ) :

 মতবিরোধ :-
      সংবিধানের শ্রেণিবিভাজনের প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে । অনেকে গতানুগতিকভাবে সংবিধানকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন, যথা — (১) লিখিত ও অলিখিত সংবিধান এবং (২) সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান । কিন্তু, লোয়েনস্টাইন সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করে সংবিধানকে তিনভাগে ভাগ করেছেন । যথা — (১) মৌলিক ও মৌলিকতাবিহীন সংবিধান, (২) নীতিসংবদ্ধ ও আদর্শ - নিরপেক্ষ সংবিধান এবং (৩)আদর্শনিষ্ঠ, নামীয় ও শব্দগত বিচারে উত্তীর্ণ সংবিধান ।

(১) লিখিত সংবিধান :-
            কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত মৌলিক নীতিগুলির অধিকাংশ বা সবগুলি একটি বা কয়েকটি দলিলে লিপিবদ্ধ করা থাকে, তাকে লিখিত সংবিধান ( Written Constitution ) বলে । এই পরিষদ বা কনভেনশন সংবিধান প্রস্তুত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি ঘোষণা করে । উল্লেখযোগ্য যে, লিখিত সংবিধানের বিধানগুলি প্রথা, রীতিনীতি, আচার - ব্যবহার প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশের সংবিধান লিখিত সংবিধানের উদাহরণ ।

 অলিখিত সংবিধান :-
      অপরদিকে , শাসন - সংক্রান্ত মৌলিক নীতিগুলি যখন প্রথা, আচার - ব্যবহার, রীতিনীতি ও বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তখন তাকে অলিখিত সংবিধান ( Unwritten Constitution ) বলা হয় । অলিখিত সংবিধানের শাসন - সংক্রান্ত মৌলিক নীতিগুলিকে কোনো সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে না । ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত সংবিধানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।

         লর্ড ব্রাইস প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সংবিধানকে লিখিত ও অলিখিত — এই দু ভাগে ভাগ করাকে অবৈজ্ঞানিক অযৌক্তিক বলে মনে করেন । তাঁদের মতে, সংশোধন পদ্ধতির পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে সংবিধানকে – (১) সুপরিবর্তনীয় সংবিধান ( A changeable constitution ) এবং (২) দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান ( A Rigid constitution ) – এই দু - ভাগে ভাগ করাই বিজ্ঞানসম্মত ।

(১) সুপরিবর্তনীয় সংবিধান ( A changeable constitution ) :-
                      অধ্যাপক ডাইসিকে অনুসরণ করে বলা যায়, আইনসভা যে - পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের সাধারণ আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তন করে, সেই পদ্ধতি অনুসারে যদি সংবিধান পরিবর্তিত বা সংশোধিত হয়, তবে সেই সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয় । এরূপ সংবিধানের ধারাগুলি পরিবর্তনের জন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতি ( Special Procedure ) অবলম্বন করার প্রয়োজন হয় না ।

(২) দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান ( A Rigid constitution ):-
              সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতি অনুসারে যে - সংবিধানকে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয় । এরূপ সংবিধানের যে কোনো অংশের পরিবর্তনের জন্য 'বিশেষ পদ্ধতি' অনুসরণ করা হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.