বানিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি class 12 CBSE BORD

 ☀ বানিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি ( Functions of Commercial Banks  ):


                   

 👉

    কোনো দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি নানা ধরনের কাজ করে থাকে । সেই কাজগুলি এখন আমরা বর্ণনা করব ।




  প্রথমত  :  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির কাজ হল জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ আমানত হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি গ্রহণ করে । ব্যাংকের আমানত তিন প্রকারের হতে পারে : চলতি আমানত ( Current Deposit Account ) , মেয়াদি আমানত ( Fixed Deposit Account ) ও সঞ্ছয়ী আমানত ( Savings Deposit Account ) । চলতি আমানতের অর্থ যখন খুশি তোলা যেতে পারে এবং চলতি আমানতের উপর কোনো সুদ পাওয়া যায় না । 

  দ্বিতীয়ত  :  বাণিজ্যিক ব্যাংকে আর একটি কাজ হল ঋণদান । ব্যাংক যে অর্থ আমানত হিসাবে সংগ্রহ করে সেই অর্থ কোনো কাজে না লাগিয়ে ব্যাংক তার সিন্দুকে রেখে দেয় না । আমানতকারীরা যদি হঠাৎ টাকা তুলতে আসে তাহলে আমানতকারীদের প্রয়োজন মেটাতে হবে । সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যাংক তার আমানতের একটা অংশ নগদ হিসাবে হাতে রাখে । বাকি টাকা ব্যাংক ঋণ আকারে জনসাধারণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে থাকে । এই ঋণের জন্য ব্যাংক সুদ পায় এবং এই সুদ থেকেই ব্যাংকের আয় হয় । বস্তুতপক্ষে , ঋণ থেকে ব্যাংক যে সুদ পায় সেটিই ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস ।

  তৃতীয়ত  :  ব্যাংক কিছু কিছু কাজ করে তার গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসাবে । এই কাজগুলি করে দেওয়ার জন্য ব্যাংক তার মক্কেলদের কাছ থেকে কমিশন পায় । এভাবেও ব্যাংকের আয় হয়ে থাকে । প্রতিনিধি হিসাবে ব্যাংক যে কাজগুলি করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ পাঠানো । এজন্য ব্যাংক 'ড্রাফট' ( Bank draft ) ব্যবহৃত হয় । ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানো যায় ।

  চতুর্থত  :   মক্কেলদের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করা ছাড়া ব্যাংক আরও অন্যান্য কাজ করে থাকে । বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের মূল্যবান সম্পত্তি নিরাপত্তার সঙ্গে রক্ষা করে । এইজন্য ব্যাংকের বিশেষ পাহারা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা আছে । ব্যাংকের লকারে এই মূল্যবান সম্পত্তিগুলি রাখা হয় । এজন্য ব্যাংক লকারের ভাড়া আদায় করে । এছাড়া ভ্রমণকারীদের সুবিধার জন্য ব্যাংক ট্রাভেলার্স চেক ইস্যু করে । এই চেকের সাহায্যে দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থানে জিনিসপত্র কেনা যায় । তার জন্য নগদ টাকা বয়ে নিয়ে যেতে হয় না ।

  পঞ্চমত  :   আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাংক সাহায্য করে । বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বিক্রয় হয় । বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত দলিল পত্রাদি যেমন বৈদেশিক হুন্ডি , দ্রব্য চালানের রসিদ , বিমাপত্র ইত্যাদি বাণিজ্যিক ব্যাংক বহন করে আবার এই ধরনের ঋণপত্র জমা রেখে ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে । অনেক সময় ব্যাংকগুলি আমদানিকারকদের জামিনদার হিসাবেও কাজ করে ।

  ষষ্ঠত  :  ব্যাংকগুলি তাদের মক্কেলদের চেকের মাধ্যমে তাদের গচ্ছিত টাকা তোলার এবং চেকের মাধ্যমে লেনদেন করার সুবিধা দিয়ে থাকে ।

  সপ্তমত  :  ব্যাংক দেশের সঞ্জুয়কারীদের অর্থ গচ্ছিত রাখে এবং সেই অর্থ বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেয় । সঞ্জয় এবং বিনিয়োগ , এই দুটি কাজ সাধারণত দুটি পৃথক শ্রেণির লোকেরা করে থাকে । ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে এই দুটি শ্রেণির লোকেদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয় । যারা সঞ্চয় করে তারা তাদের সঞ্চয় ব্যাংকে জমা রাখে । আবার যারা বিনিয়োগ করতে চায় তারা বিনিয়োগের জন্য অর্থ ব্যাংকগুলি থেকে সংগ্রহ করে ।

  অষ্টমত  :   উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি উন্নয়নমূলক কাজও করে থাকে যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে । ভারতের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ণে সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করে । যেমন সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রকে ( Priority Sectors ) ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে ।



অনগ্রসর বা ব্যাংকের সুবিধা নেই এইরকম এলাকায় ব্যাংক শাখা খোলে । সম্ভাবনাপূর্ণ উন্নয়নের এলাকা সমীক্ষা ক'রে সেই এলাকায় উন্নয়নের সুযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করে । এইভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে 

  মূল্যায়ন  :  বর্তমানকালের অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । ব্যাংক ব্যবস্থাই দেশের ব্যাবসা বাণিজ্য, শিল্পক্ষেত্রে শিল্পোন্নতি, ঋণ প্রদান এছাড়া ব্যাংক চেকের মাধ্যমে লেনদেন প্রভৃতির মাধ্যমে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলি তাদের কাজকর্মের দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে যথেষ্ট সাহায্য করে চলেছে ।



  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি ( Functions of Central Banks  ):


 👉   বিভিন্ন দেশের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলির কিছু কিছু পার্থক্য আছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতকগুলি সাধারণ কাজকর্ম করে থাকে । অধ্যাপক ডিকক ( Dekock ) - এর মতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয়টি কাজ প্রায় সব দেশেই লক্ষ করা যায় । সেই ছয়টি কাজ আমরা এখন বর্ণনা করব ।

  প্রথমত  :  কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের নোট প্রচলনের একচ্ছত্র অধিকারী । কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের নোট প্রচলনের অধিকার নেই । ঊনবিংশ শতাব্দীতে অবশ্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির নোট ছাপানোর ক্ষমতা ছিল । কিন্তু সেই ব্যবস্থার কতকগুলি ত্রুটি লক্ষ করা গেল । যেমন , বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন রকমের নোট ইস্যু করত । তার মধ্যে কোনো Uniformity বা একরূপতা ছিল না । তাছাড়া , প্রতিটি ব্যাংকই তার নিজ নিজ রিজার্ভের ভিত্তিতে নোট ইস্যু করতো এবং তাদের রিজার্ভের পরিমাণ কম থাকার জন্য নোট ইস্যুর পরিমাণও কম হতো ।

  দ্বিতীয়ত  :  কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার হিসাবে কাজ করে । সরকারের ব্যাংকার হিসাবে সরকারের যাবতীয় হিসাব নিকাশ করার ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর ন্যস্ত থাকে । আবার,  সরকারের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসাবেও  কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নানা কাজকর্ম করে ।

  তৃতীয়ত  :  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য একটি প্রধান কাজ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির ব্যাংকার হিসাবে কাজ করা । বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির ব্যাংকার হিসাবে কাজ করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি কাজ করে । প্রথমটি হ’ল যে , দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে তাদের আমানতের একটা অংশ আবশ্যিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ আকারে জমা রাখতে হয় এবং প্রয়োজন মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে । দ্বিতীয়টি হ’ল যে , কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের সর্বশেষ স্তরের ঋণদাতা ( Lender of last resort ) হিসাবে কাজ করে ।

  চতুর্থত  :  কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের স্বর্ণভাণ্ডার এবং বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল রক্ষা করে । প্রতিটি দেশই কিছুটা স্বর্ণভাণ্ডার ( Gold Reserve ) জমা রাখে । এই স্বর্ণভাণ্ডার জমা রেখে এরই ভিত্তিতে কাগজি নোট ইস্যু করা হয় । আবার বিদেশের সঙ্গে লেনদেনের জন্যও স্বর্ণের প্রয়োজন হয় । সেইজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি স্বর্ণভাণ্ডার বজায় রাখতে হয় ।

  পঞ্চমত    কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমগ্র দেশের বিভিন্ন বিষয়ে অর্থনৈতিক সংবাদ সংগ্রহ করে এবং এই সংবাদ একত্রিত ক'রে বা সংকলিত ক'রে প্রকাশ করে । বিভিন্ন অর্থনৈতিক চলরাশির ( Variables ) রাশিতথ্য ( Data ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করে থাকে ।

  ষষ্ঠত  :  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর প্রধান উল্লেখযোগ্য কাজ ঋণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডিককের মতে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ । বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি যে আমানত সংগ্রহ করে সেই আমানতের একটি অংশ ঋণ আকারে জনসাধারণকে দেয় । আমরা জানি যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি একযোগে তাদের বাড়তি রিজার্ভের অনেক গুণ পর্যন্ত ঋণ সৃষ্টি করতে পারে । যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি খুব বেশি ঋণ দেয় তাহলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে । আবার প্রয়োজনের সময় যদি ব্যাংকগুলি বেশি ঋণ না দেয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে । সেইজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দেওয়া হয়েছে ।

  মূল্যায়ন  :   এই সমস্ত কাজ ছাড়াও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর একটি আছে । সেই কাজটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা । উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু ঋণের নিয়ন্ত্রক হিসাবেই কাজ করে না । কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজকর্মও করে থাকে । দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা যাতে প্রসার লাভ করতে পারে , অনুন্নত এলাকায় যাতে শিল্প বিস্তার হতে পারে , কৃষির উন্নয়ন , শিল্পের উন্নয়ন , টাকার বাজার এবং মূলধনের বাজার গড়ে তোলা — এই সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্মেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাহায্য করে ।




Label Name

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.