শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল" - কার কথা বলা হয়েছে ? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেনো ?

 

 ☀  "শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল" - কার কথা বলা হয়েছে ? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেনো ?

 


 

 👉 সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা " ভারতবর্ষ " গল্পে বর্ণিত প্রধান চরিত্র বৃদ্ধার কথা বলা হয়েছে ।

      সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই গল্পে এক বৃদ্ধার চরিত্র তুলে ধরেছেন । এই বৃদ্ধার নাম পদবি- সামাজিক কোনো পরিচয় নেই । ভিক্ষা করেই তার জীবন কাটে । পৌষের বাদলা মাথায় করে সে চায়ের দোকানে উপস্থিত হয় । তাকে নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন তোলে কিন্তু , বৃদ্ধা নিরুত্তর থাকে । তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে , সে বিরক্তিতে জানায় – ‘ সে কথায় তোদের কাজ কী বাছারা ?? বুড়ি কারোর কথায় কান না দিয়ে পৌষের বাদলায় রাস্তার নেমে পড়ে ।

      তারপর যখন সূর্যের আলো ফুটল তখন দেখা গেল বুড়ির নিঃসাড় দেহটি পড়ে রয়েছে । এর থেকে ধারনা হয় , - বুড়ি নির্ঘাত মারা গেছে । সুতরাং , বুড়িকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই । কারন , শ্যালকুকুরে ছিঁড়ে থাবে যে ! গন্ধে টেকা যাবে !

    চৌকিদারের পরামর্শ মতো বৃদ্ধার দেহটি নদীর চড়ায় ফেলে দেওয়া হয় । এমন সময় হঠাৎ দেখা যায় , মুসলমান পাড়ার লোকেরা বৃদ্ধাকে তুলে নিয়ে আসছে । কেননা অনেকেই দেখেছে বৃদ্ধাকে আল্লা বা বিসমিল্লাবলতে শুনেছিলেন । এই প্রসঙ্গে হিন্দুরা জানায় বুড়ির মুখে তারা বলতে শুনেছে শ্রীহরির নাম ।

     এই বিতর্ক নিয়ে মার মুখী জনতা যখন সংঘর্ষে , সেই সময় বুড়ি উঠে বসে । তখনই প্রশ্নো আসে , - ‘ বুড়ি তুমি মি হিন্দু না মুসলমান ?? এর উত্তরে বুড়ি খেপে গিয়ে বলল - চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা ? দেখতে পাচ্ছিস নে ? ওরে নরকথেকোরা ওরে শকুনচোথোরা । আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? চোখ গেলে দেবো- যা , যা , পালা

     এই কথা বলে সে নড়বড় করে রাস্তা ধরে চলতে থাকল ভিড় সরে তাকে পথ দিল । শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল । 


 “ তুমি হিন্দু না মুসলমান " - কারা কাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ? এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যক্তি কী বলেছিল ? এই জিজ্ঞাসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । 

 👉  উদ্ধৃত লাইনটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ' ভারতবর্ষ ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । এই প্রশ্নো দাঙ্গাবাজ , মারমুখী জনতা বৃদ্ধাকে করেছে ।

      উত্তরে বৃদ্ধা রেগে গিয়ে বলেছে - ‘ চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা ? দেখতে পাচ্ছিস নে ? ওরে নরকখেকোরা ওরে শকুনচোখোরা । আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? চোখ গেলে দেবো- যা , যা , পালা '  

   জীজ্ঞাসার তাৎপর্য :-

     বৃদ্ধা স্পষ্ট করে জানাতে চেয়েছে যে সে হিন্দু বা মুসলমান জাতির নয় , কোনো সংকীর্ণ চিহ্ন দ্বারা সে নিজেকে চানাতে চায়নি । 

     ‘ হিন্দু না মুসলমান ' এই একটা প্রশ্নে সারা ভারতবর্ষ জ্বলছে । এছাড়া , সব সময় একটা চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে সারা ভারতবর্ষে । কেউ ভাবছে না যে মানুষের আসল পরিচয় – “ সে একজন মানুষ ” । সংকীর্ণ মৌলবাদিয় ধর্মীয় চিন্তা - ভাবনা ভারতবর্ষের এক শ্রেনির মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে আছে । তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে না । মানুষ তাদের কাছে হিন্দু না মুসলমান এর মধ্যে যে কোনো একটি ।

    এই সংকীর্ণ দৃষ্টি ভঙ্গি লাইনটির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে ।



 ☀ " সেই সময় এল এক বুড়ি " - লেখক বুড়ির সম্বন্ধে যা বর্ণনা দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো । 

অথবা ,

     ভারতবর্ষ গল্প অবলম্বনে বৃদ্ধাটির চরিত্র আলোচনা করো ।


 👉 সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ' ভারতবর্ষ ' গল্পের বৃদ্ধাটির মধ্যমদিযে ভারতবর্ষের প্রান প্রতিমাকে তুলে ধরা হয়েছে ।

   বৃদ্ধাটির সম্পর্কে গল্পে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্ণনা করা হলো ।

    বুদ্ধাটির বাহ্যিক বর্ণনা :-

 ১. থুথুড়ে কুঁজো ভিখারি বুড়ি ।

 ২. রাক্ষুসে চেহারা ।

 ৩. এক মাথা সাদা চুল ।

 ৪. পরনে ছেঁড়া , নোংরা একটা কাপড় ।

 ৫. গায়ে জড়ানো তেমনি একটা চিট চিটে তুলোর কম্বল ।

 ৬. এক হাতে বেঁটে লাঠি ।

 ৭. ক্ষয়া থর্কুটে মুখে তার সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন প্রকট ।

 গল্বে বৃদ্ধাটির ভূমিকা :-

   ক . ' ভারতবর্ষ ' গল্পটির মধ্যে দুবার হাজির হয়েছে । একবার বাদলা উপেক্ষা করে ; বাজারে এসে চা খেয়ে গেছে , আর দ্বাবিতীয়বার , মার মুখী জনতাকে উপেক্ষা করে হেঁটে চলে গেছে । দুই বারই আমরা দেখি , মানবিকতার কাছে মৌলবাদ পরাজিত হয়েছে । 

   খ. বৃদ্ধাটি চায়ের পয়সা দিয়েছে । অর্থাৎ , সে ভিখারি নয় । তার আত্ম সম্মান বোধ আছে ।

   গ. এই গল্পে আমরা সর্বদা দেখেছি , মারমুখী জনতাকে বৃদ্ধা সবসময় ব্যাঙ্গ করেছে । কারন , দাঙ্গাবাজ মানুষ গুলোর মৃত্যুই ভালো , যারা ধর্মের নামে মানুষকে খুন করে তাদের মৃত্যুই ভালো বলে বলে বৃদ্ধা মনে করেছেন ।

       এক কথায় , এই গল্পে বর্ণিত বৃদ্ধাটি যেন মানব সভ্যতার ধারক ও মানবিক সরলতায় ভরপুর একপ্রান । তাই বৃদ্ধা ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে প্রকৃত ভারতবর্ষ হয়ে উঠেছে ।


☀ “ তারপর দেখা গেলো এক অদ্ভুত দৃশ্য ” দৃশ্যটি কী ? দৃশ্যটি দেখার পর কী ঘটল ?

 👉  উদ্ধৃত লাইনটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ' ভারতবর্ষ ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে ।

 দৃশ্যটি হল :-

      দাঙ্গাবাজ , মারমুখী জনতা দেখল বুড়ির মরাটা নড়ছে । নড়তে নড়তে উঠে বসার চেষ্টা করছে । দুই দিকে সশস্ত্র জনতা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে , চৌকিদারও হাঁ করে দেখছে । এরপর বুড়ি উঠল , উঠে দু - দিকে তাকাল । ভিড় দুটোকে দেখে তার মুখ বিকৃত হয়ে গেলো । সেই বিকৃত মুখে বুড়ি ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে উঠল ।

      দু - দিকের ভিড় সরে গেলো । বুড়ির মৃত্যুর কথা জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি বলল – ‘ তোরা মর , তোরা মর মুখ পোড়ারা । তোদের চোদ্দোগুষ্টি মরুক ’ ।

      এরপর কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল – ‘ বুড়ি তুমি হিন্দু না মুসলমান ?? - এর প্রশ্নো শুনে বুড়ি আরোও রেগে গিয়ে বলল- ' চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা ? দেখতে পাচ্ছিস নে ? ওরে নরকথেকোরা ওরে শকুনচোখোরা । আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? চোখ গেলে দেবো- যা , যা , পালা ' 

    এই কথা বলার পর বুড়ি নড়বড় করতে করতে দিনের শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল ।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.