হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।

১৯. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।







উত্তরঃ  সাহিত্যে নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । নামকরণ চরিত্রকেন্দ্রিক, বিষয়প্রধান কিংবা ব্যঞ্ছনাবাহী হয়ে থাকে । এখন আমাদের বিচার্য বিষয় হল ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ নামকরণটি কতদূর সার্থক ও সংগত ।

     প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ পাঠ্য প্রবন্ধে কলমের ঐতিহাসিক যাত্রাপথের এক প্রাণবন্ত বিবরণ পেশ করেছেন । সুমেরীয়দের নলখাগড়া , ফিনিসীয়দের হাড় কিংবা চিনাদের তুলির হাত ধরে খ্রিস্টের জন্মেরও কত আগে জন্মেছিল কলম । আবার রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার কলম হিসেবে ব্যবহার করতেন স্টাইলাস । পরে এই ‘জ্ঞানাল্গুন-শলাকা’ -ই বিবর্তনের পথ ধরে লেখকদের ছোটোবেলায় হয়ে উঠেছিল বাঁশের কঞ্চির কলম । রান্নার কড়াইয়ের তলার কালি লাউ পাতা দিয়ে তুলে; জলে গুলে গরম খুস্তির ছ্যাঁকা দিয়ে কালি তৈরি হত । সেসময় কলম - কালি ও দোয়াতের নানাবিধ এসব আয়োজনে লেখালেখি যেন একটা ছোটোখাটো অনুষ্ঠান হয়ে উঠত ।

     এরপর ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব ঘটাল । ক্রমে বল -পেন বা ডট -পেনের প্রচলনে তা এত সস্তা আর সর্বজনভোগ্য হয়ে উঠল যে, সর্বত্র ও সর্বস্তরে কলমের একপ্রকার বিস্ফোরণ ঘটল । কিন্তু বর্তমানে লেখক দেখেন দোয়াত-কলম-ব্লটিং পেপারের সঙ্গে ফাউন্টেন পেনও আজ অবলুপ্তির পথে । সংবাদপত্রের অফিসে তাঁর সহকর্মীদের কারও কাছেই আর কলম মেলে না । কম্পিউটার যেন তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে সংকল্প করে বসে আছে । কেবল তিনি কলমের সঙ্গে তাঁর আবেগ ভালোবাসা ও মানবিকতার সম্পর্কটুকু আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চান ।

 আসলে যন্ত্রযুগের নিষ্ঠুর আগ্রাসনে কালিকলমের হারিয়ে যাওয়া একপ্রকার নিশ্চিত; এই আক্ষেপ ও বিষাদে ভর করেই তিনি রচনাটির ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ নামকরণ করেন এবং এই নামকরণ নিঃসন্দেহে যথাযথ এবং তাৎপর্যবাহী হয়ে ওঠে ।













Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.