
উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । নামকরণের মাধ্যমে
সাহিত্যিক যেমন তাঁর সৃষ্টিকে পূর্ণতা দেন, তেমনি পাঠককে সাহিত্যকর্মের রসগ্রহণে
সহায়তা করার চেষ্টাও করেন । নামকরণের বিভিন্ন আঙ্গিক থাকে । যেমন–
চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক, ভাব - ব্যঞ্ছনার্থক ইত্যাদি । স্বাধীনতা-পরবর্তী
সময়ের কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতায় সমকালীন সমাজ সর্বদা প্রতিফলিত হয় । তিনি বিপন্ন
প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও খুঁজে পান আশার উজ্জীবনী মন্ত্র ।
কবিতাটিতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি । বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ - দাঙ্গা,
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে মানুষ নিঃসঙ্গ, কোণঠাসা এবং বিধ্বস্ত । কবি যেন
বর্তমান সময়ের অন্ধকার কানাগলি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে ব্যস্ত । আজকে
মানুষের চলার পথের দু - দিকে ধস ও গিরিখাতের মতো বিপদ আর প্রতিকূলতা । তার মাথার
উপরে ছাদ নেই, প্রতি মুহূর্তে হানাদারি শত্রুর ভয়ে সে ভীত ।
কাছে - দূরে অর্থাৎ, হিংসাশ্রয়ী এ পৃথিবীর যত্রতত্র ছড়িয়ে
থাকা শিশুদের শব সাধারণ মানুষকে আজ অনুতপ্ত ও বিধ্বস্ত করে তোলে । ইতিহাসে ঠাঁই
না - পাওয়া এইসব মানুষের কাছে সমগ্র পৃথিবীটাই এখন জীবস্মৃত, বাঁচা - মরার
ভেদরেখা ভুলে তারা দিশাহীনতায় হয়েছে পরমুখাপেক্ষী । কিন্তু কবি চান ইতিহাসে
উপেক্ষিত এই মানুষগুলি নৈরাশ্য - ক্লান্তি ভুলে একবার সংঘবদ্ধ হোক । তিনি তাদের
নিয়েই আরও একবার বেঁধে থাকার স্বপ্ন দেখেন । কারণ বিবেকবান শান্তিকামী, ঐক্যবদ্ধ
শক্তিই সাম্রাজ্যবাদীকে প্রতিহত করতে পারে । তাই ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ নামকরণটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনুষ্যত্বের অঙ্গীকারকেই উজ্জ্বল
আর সার্থক করে তোলে ।