আফ্রিকাবাসীর মূল অশান্তির কারণ আলোচনা করো

☀ আফ্রিকাবাসীর মূল অশান্তির কারণ আলোচনা করো ।

আফ্রিকাবাসীর মূল অশান্তির কারণ :–
          প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মানি ইউরোপীয় দেশগুলিকে একটি প্রস্তাব দেয় যে আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে নিজেদের বা সাদা চামড়ার লোকদের আধিপত্য বজায় রাখতে হলে নিজেদের নিরপেক্ষভাব অবলম্বন করতে হবে । কিন্তু বাস্তবে লক্ষ করা গেল যে এই প্রস্তাব উপেক্ষা করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই শক্তি শিবিরেরই দেশগুলি আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রসারিত করতে সচেষ্ট ও ফলে মরক্কো থেকে শুরু করে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়ে । তা ছাড়াও আফ্রিকানদের অশান্তির অন্যান্য কারণগুলি ছিল —

 (১) বিদেশি শাসন :–  আফ্রিকা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশিদের দ্বারা শোষিত বঞ্চিত ও শাসিত ছিল । বিদেশিদের অত্যাচার ও শাসনে তারা দৈহিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টে ছিল ।

 (২) ধর্মান্তরিতকরণ :–  অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিরা আফ্রিকানদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করলে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে । কারণ, সেখানকার স্থানীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী লোকেদের কাছে এটি ছিল একটি আঘাতস্বরূপ ।

 (৩) আগ্নেয়াস্ত্র ও নেশাজাত বস্তু বিক্রি :–  বার্লিন সম্মেলনে (১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ) নেশাজাত বস্তু ও আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির নিষিদ্ধকরণ করা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ ঘটেনি ।

 (৪) বেতন বৈষম্য :–  ইউরোপীয় উপনিবেশ গুলিতে গায়ের রঙের ভিত্তিতে কর্ম বা কর্মপদ্ধতি স্থির হতে থাকে । সাদা চামড়ার শ্রমিকদের কম কাজে বেশি মজুরি দেওয়া হত । আর কালো চামড়ার আফ্রিকান শ্রমিকদের তাদের তুলনায় ৫-৬ গুণ বেতন কম দেওয়া হত । ফলস্বরূপ আফ্রিকানদের জীবনযাত্রার মানের ভীষণভাবে অবনতি হয়েছিল ।

 (৫) আফ্রিকাবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধি :–  উপনিবেশগুলিতে কালো চামড়ার মানুষেরা নিজেদের স্বার্থ ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে । যেমন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে সাদা চামড়ার শাসকগোষ্ঠী কালো চামড়ার শ্রমিকদের মজুরি ১\৩ অংশ কমিয়ে দেয় । তখন নিরুপায় শ্রমিকরা হ্যারি টুকু নামে এক নেতার অধীনে “East Africa Native Association” স্থাপন করে নানা মিটিং ও মিছিলের মাধ্যমে উপরিউক্ত সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করে । ফলে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে একটি চাপা প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায় ।



উপনিবেশিবাদের প্রভাবঃ–
    ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুললে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এর একটা ব্যাপক প্রভাব পড়ে । আফ্রিকায় ইউরোপীয় সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে । অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকা ধীরে ধীরে আধুনিক সভ্যতা - সংস্কৃতির আলোক স্পর্শ করে । সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলি হল— 

 (১) আফ্রিকাবাসীর স্বাধীনতা হরণ :–  ইউরোপীয় দেশগুলি আফ্রিকাকে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিয়ে আধিপত্য স্থাপন করলে আফ্রিকার কালো মানুষেরা স্বাধীনতা হারায় ।

 (২) ঔপনিবেশিক জাতির শোষণ ও অত্যাচার :–  ঔপনিবেশিক ইউরোপীয় জাতিগুলি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পর কালো মানুষদের উপর শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে ।

 (৩ ) চেতনার সঞ্চার :–  ঔপনিবেশিক শক্তির দমন, পীড়নমুলক নীতি, আর্থিক শোষণ, বৈষম্যমূলক শাসননীতি আফ্রিকাবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার ঘটায় । আর এই জাতীয়তাবাদী চেতনাই উপনিবেশবাদের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা লাভের অনুপ্রেরণা জোগায় ।

 (৪) বিশ্বে পরিচিতি লাভ :–  আফ্রিকা মহাদেশ ছিল প্রধানত অনাবিস্তৃত অঞ্চল । বহির্বিশ্বের সঙ্গে আফ্রিকার কোনো যোগাযোগ ছিল না । ইউরোপীয়রা আফ্রিকা মহাদেশ দখল করার পর বিশ্বের মানুষ আফ্রিকার সভ্যতা - সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে ।

 (৫) নবজাগরণের সূচনা :–  ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে আফ্রিকার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসে । ফলে সূচনা হয় নবজাগরণের ।







Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.