উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন' কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত ।
পাঠ্য কবিতায় 'আমি' বলতে কবিকে বোঝানো হয়েছে । কবি এখানে
কথকের ভূমিকায় স্মৃতিচারণার মাধ্যমে বর্তমানে এসে উপস্থিত হয়েছেন ।
কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়া পড়েছে কবিতাটিতে । কখনও কর্মসূত্রে কখনও বা রাজনৈতিক
কারণে তাঁকে জীবনে বহুবার স্বদেশভূমি ছেড়ে আত্মগোপন করতে, কিংবা নির্বাসিত হতে
হয়েছে । সেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যন্ত্রণা ও অনুভূতি পাঠ্য কবিতার কাব্যগুণে
একটা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে ।
কবি জীবিকা কিংবা জীবনের তাগিদে স্বদেশভূমি ত্যাগ করে প্রিয়তমাকে
অপেক্ষায় রেখে বহুদূরে চলে যান । কবি যে ফিরে আসবেন না তা অপেক্ষারতা প্রিয়তমার
জানা ছিল না । কবি দেশত্যাগ করা সত্ত্বেও প্রিয়তমার জীবন আপন গতিতেই চলে ।
এভাবেই সপ্তাহ থেকে বছর কেটে যায় । কবির পদচিহ্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, সেখানে
ঘাস জন্মায় । বিচ্ছেদের বছরগুলো একটার পর একটা পাথরের মতো মাথায় নেমে আসে ।
এরপর যুদ্ধ শুরু হয়, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, মৃত্যু হয় শিশুদেরও ।
ক্রমে ধ্বংসের সেই আগুনে দেবালয়, কবির স্বপ্নের বাড়ি এবং শহর সব কিছু ছারখার
হয়ে যায় । তবু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকে মেয়েটির ভালোবাসা । তার
অপেক্ষা, চিরন্তন ভালোবাসা অবিনাশী যা ধ্বংসস্তূপে আলোর মতো মানবহৃদয়ের
বিশুদ্ধতাকে জ্বালিয়ে রাখে ।