📌মৃত্তিকা সৃষ্টি বা গঠনের বিশেষ প্রক্রিয়া সমূহ গুলি আলোচনা করো
🖋🖋
মৃত্তিকা গঠনের বিশেষ প্রক্রিয়াসমূহ হল :-
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু ও
স্বাভাবিক উদ্ভিসের পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে মৃত্তিকা
সৃষ্টির স্ব প্রক্রিয়া কার্যকরী হয় । এদের বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বলা
হয় । এগুলি হল
—
① ল্যাটেরাইজেশন, ② পডসলাইজেশন, ③ গ্লেইজেশন, ④
ক্যালসিফিকেশন, ⑤ স্যালিনাইজেশন, ⑥ অ্যালকালাইজেশন ।
① ল্যাটেরাইজেশন :-
যে প্রক্রিয়ায় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গঠিত
হয় তাকে, ল্যাটেরাইজেশন বলে । অধিক উন্নতা ( গড়ে 25 ° সে ) ও অধিক
বৃষ্টিপাতযুক্ত ( 200 থেকে 250 সেমি ) অঞ্ছল এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ
জনক শিলার ওপরে ল্যাটেরাইজেশন প্রক্রিয়া সহজ ও হয় । ক্যালশিয়াম,
ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ক্ষারকীয় প্রাধ্য পদার্থ এবং সিলিকা (
SIO2 ) মুক্তিকার ওপরের স্তর
থেকে নীচে চলে যায় । ফলে মৃত্তিকার ওপরের অংশে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের জারিত
অক্সাইড রূপে থেকে যায় । এই পদ্ধতিতে
লাল রঙের কঠিন ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গড়ে ওঠে ।
② পডসলাইজেশন :-
পড়সল মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে
পাসলাইজেশন বলা হয় । স্বল্প বৃষ্টি পাত যুক্ত শীতল নাতিশীতোর জলবায়ু
অঞ্চলে ( যেখানে বিস্তৃত সরলবর্গীয় অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে ) সেখানে এই ধরনের
মৃত্তিকা গড়ে ওঠে । এই অঞ্ছলে কম তাপমাত্রার জন্য বাষ্পীভবনের হার খুব কম থাকে
ফলে এই মৃত্তিকা সারাবছর আর্দ্র থাকে এবং মুক্তিকায় সারাবছরই
অনুরবণ ও ধৌত প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে ।
ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ধাতব ক্যাটায়নগুলি
এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইডগুলি ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয়ে নীচের
স্তরে সঞ্ছিত হয় । ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরে সাদা ও ধূসর রঙের বালি থেকে যায় ।
এভাবে পডসল মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।
③ গ্লেইজেশন :-
জলমগ্ন অঞ্ছল বা যেসব স্থানে জল জমে থাকে সেখানে
মৃত্তিকায় অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে । তাই মৃত্তিকায় জৈব বিজারণ প্রক্রিয়া
সক্রিয় হয় । এর ফলে মৃত্তিকায় জৈব অম্ল উৎপন্ন হয় ও মৃত্তিকার স্বাভাবিক রং
বাদামি হওয়ার পরিবর্তে ধূসর বা সবুজ বা নীলাভ হয় । মৃত্তিকা সৃষ্টির এই
প্রক্রিয়াটিকে গ্লেইজেশন বলে ।
④ ক্যালসিফিকেশন :-
মৃত্তিকার স্তরে
চুনজাতীয় পদার্থ সঞ্ছিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্যালসিফিকেশন বলে ।
নাতিশীতোয় তৃণভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাত কম সেখানে এই প্রক্রিয়া
বিশেষভাবে কার্যকরী ।
শিলা থেকে নির্গত ক্যালশিয়াম বায়ুমণ্ডলের কার্বন
ডাইঅক্সাইডের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম কার্বনেট সৃষ্টি করে । এই
ক্যালশিয়াম কার্বনেট মৃত্তিকা স্তরের মধ্যে অধঃক্ষিপ্ত ও সঞ্ছিত হয় । ফলে
চুনজাতীয় মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় ।
⑤ স্যালিনাইজেশন :-
যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্তরের মধ্যে ক্যালশিয়াম,
ম্যাগনেশিয়াম ও সোডিয়ামের লবণ সালফেট বা ক্লোরাইড রূপে সঞ্ছিত হয় তাকে
স্যালিনাইজেশন বলে ।
মরু, মরুপ্রায় অঞ্চল, সমুদ্রতীর ও বিভিন্ন শুষ্ক
এলাকায় এই প্রক্রিয়া সক্রিয় । কৈশিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রবীভূত লবণ
মৃত্তিকার ওপরের স্তরে উঠে আসে ।
⑥ অ্যালকালাইজেশন :-
মৃত্তিকার স্তরে ক্যালশিয়াম , পটাশিয়াম ,
ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি আয়নের তুলনায় সোডিয়াম আয়ন অধিক সঞ্ছিত হলে সেই
প্রক্রিয়াকে অ্যালকালাইজেশন বলে । উত্তর মরুভূমি অঞ্ছলে এই প্রক্রিয়া
অধিক কার্যকরী । এই প্রক্রিয়ায় তীব্র ক্ষারধর্মী মাটির সৃষ্টি হয় ।
মৃত্তিকার pH- এর মান 8.5 এর বেশি হয় । এই প্রক্রিয়ায়
কালো ক্ষার মৃত্তিকা বা ব্ল্যাক অ্যালকালি বা সোলোনেৎজ মৃত্তিকার সৃষ্টি
হয় ।