📌 ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো ।
ভূমিকা :-
রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতী রাষ্ট্র প্রশাসনের প্রধান । সংবিধানের
৫৪ থেকে ৫৫ নং ধারিয় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান । সংশোদীয় শাসন
ব্যবস্থায় রিষ্ট্রপতী হলেন "নামসর্বস্ব" শাসক ।
সংশোদীয় শাসন ব্যবস্থা দুই প্রকার । সেগুলি হল —
"নামসর্বস্ব" শাসক এবং "প্রকৃত" শাসক । ভারতের রাষ্ট্রপতী হলেন
"নামসর্বস্ব" শাসক । তিনি মন্ত্রী সভার পরামর্শ অনুযায়ী সকল ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা :-
ভারতের রাষ্ট্রপতির ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে । তার
ক্ষমতাকে নিম্ন লিখিত ভাবে ভাগ করা যেতে পারে ।
ক. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
সংবিধানের ৫৩ নং ধারায় বলা
হয়েছে, কেন্দ্রের যাবতীয় শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে । এই অধিকার বলে
তিনি নীম্ন লিখিত শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন ।
A. নিয়োগ ও অপসারন :-
রাষ্ট্রপতি প্রধান মন্ত্রী সহ
অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন । এছাড়াও তিনি
'অ্যার্টনি জেনারেল', 'নির্বাচন কমিশানার', 'রাজ্যপাল', 'সুপ্রিম কোর্ট ও হাই
কোর্টের' বিচার পতিদের নিয়োগ এবং অপসারন করতে পারেন
।
B. সামরিক ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ক্ষমতা
রয়েছে । রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় সেনাবাহীনির সর্বাধিনায়ক । তিনি
যুদ্ধ ও শান্তি ঘোষনার দ্বায়িত্ব পালন করে থাকেন ।
খ. পররাষ্ট্র সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতি, বিদেশে কূটনৈতিক
প্রতিনিধি প্রেরন করার পাশাপাশি বিদেশি প্রতিনিধিদেরও গ্রহন করেন । আন্তর্জাতিক
চুক্তি বা সন্ধি তাঁর নামে সাক্ষরিত হয় ।
গ. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রের মধ্যে আইন সংক্রান্ত
কিছু ক্ষমতার অধিকারী তাঁর দ্বারা পরীচালিত ক্ষমতা গুলি হল —
A. অধিবেশন আহ্বান :-
রাষ্ট্রপতি
পার্লামেন্টর অধিবেশনে আহ্বান এবং অধিবেশনে উদ্ভোদনী ভাষন দেন । সংবিধান অনুসারে
পার্লামেন্টে অধিবেশন ডাকা, স্থগিত রাখা ও পার্লামেন্টের অধিবেশন ভেঙে দেওয়ার
অধিকারী হলেন রাষ্ট্রপতি । এছাড়া পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের মধ্যে বিরোধ বাধলে
যৌথ অধিবেশন ডাকতে পারেন ।
B. বিলের অনুমোদন :-
রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়া কোনো
বিল আইনে পরিনত হতে পারে না । তিনি কোনো বিলে সাক্ষর না করে পুর্নবিবেচনার
জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন । তবে, রাষ্ট্রপতি অর্থ বিলের ক্ষেত্রে সম্মতি দিতে
বাধ্য ।
C. অর্ডিনান্স জারি :-
"অর্ডিনান্স" - কথার অর্থ হল 'বিশেষ আদেশ' । পার্লামেন্টর অধিবেশন
বন্ধ থাকা কালীন রাষ্ট্রপতি অর্ডনান্স বা জরুরি আইন জারি করতে পারেন । এই
অর্ডনান্স সাধারন আইনের মতো কার্যকর হয় ।
D. সংবিধান সংশোধন :-
সংবিধান
সংশোধন সংক্রান্ত বিলে রাষ্ট্রপতির সাক্ষর ছাড়া ওই বিলটি সংশোধন করা যায় না ।
ঘ. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতি
সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্ট -এর বিচার পতিদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করতে পিরেন । এছাড়া
তিনি কোনো দ্ন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা এবং মৃত্যু দন্ড রোধ করতে পারেন ।
ঙ. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ছাড়া
ব্যয়-মঞ্জুরির প্রস্তাব সংসদে পেশ করা যায় না । আকস্মিক তহবিলের দায়িত্ব এবং হঠাৎ
দরকারে খরচ তার উপর নির্ভরশীল । রাষ্ট্রপতি কেন্দ্র ও রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থ
বন্টনের নীতি নির্ধারনের জন্য তিনি কমিশন গঠন করেন ।
চ. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা :-
রাষ্ট্রপতি তিন ( 3/৩ )
ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষনা করতে পারেন । সেগুলি হল –
১. জাতীয় অবস্থা ঘোষনা ( ৩৫২ নং ধারা ), ২. রাজ্যের শাসন তান্ত্রিক
আচারন ঘোষনা ( ৩৫৬ নং ধারা ), ৩. আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষনা ( ৩৬০ নং
ধারা ) ।
রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা :-
কোনো কোনো রাজনীতি বিদ রাষ্ট্রপতিকে প্রকৃত
ক্ষমতার অধিকারী বলেছেন । আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতিকে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী
বলেলনি ।
যারা বলেছেন, তাদের মতে —
১. সংবিধানের ৫৩ নং ধারায় বলা হয়েছে কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে ।
২. রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছে মতো রাষ্ট্রর প্রধান মন্ত্রীকে নিয়োগ
করেন ।
৩. রাষ্ট্রপতি অর্ডনান্স বা জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন ।
৪. সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন ।
যারা রাষ্ট্রপতিকে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী বলেননি, তাদের মতে —
১. রাষ্ট্রপতিকে প্রধান মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হয় ।
২. মন্ত্রী সভার পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা বা অর্ডনান্স
জিরি করতে পারেন না ।
৩. মন্ত্রীসভা - লোক সভার কাছে দায়ী থাকে, রাষ্ট্রপতির কাছে নয় ।
৪. রাষ্ট্রপতি যদি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হতেন তাহলে, মন্ত্রীসভা
তার কাছে দায়ী থাকত ।
মূল্যায়ন :-
একথা সত্য যে, রাষ্ট্রপতি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নয় ।
কেনোনা, তাকে প্রধান মন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হয়
। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্ব বৃত্তি পাচ্ছে । তবে রাষ্ট্রপতির প্রভাব ও
পদমর্যাদা ও তার দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে ।