☀
বিশ্বায়ন কি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিরোধী ? —তোমার মতামত ব্যক্ত
করো ।
অথবা,
বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো ।
Ans. বিশ্বায়ন হল এমন এক
প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে প্রবাহিত
হয়, অর্থ ও পুঁজি এক্ষেত্রে উল্লেখ্য । বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয়
সার্বভৌমিকতার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । বিশ্বায়নের
পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিশ্বব্যাপী যে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও
সাংস্কৃতিক কাঠামো গড়ে ওঠার প্রকিয়া শুরু হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয়
সার্বভৌমিকতাকে সংকটের সম্মুখীন করেছে ।
বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট :-
যে রাজনৈতিক প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ
তা হল, বিশ্বায়নের ফলে জাতি - রাষ্ট্রগুলির বিনাশ ঘটেছে কি না তা দেখা ।
রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাষ্ট্রগুলির
সার্বভৌম ক্ষমতার সংকোচন ঘটেছে । কিন্তু,
কার্যত রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম ক্ষমতার বিনাশ ঘটেছে কি না বা বিশ্বায়নের
যুগে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি আজ আর সত্যিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী কি না সে
প্রশ্নটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
। এ বিষয়ে দুই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিদদের পরস্পর বিরোধী মতামত লক্ষ করা যায় ।
স্কট বারচিল প্রদত্ত যুক্তিসমূহ
:-
স্কট বারচিল ( Scot Burchill ) রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার
সংকটের দিক থেকে বিশ্বায়নের প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেছেন —
1. বিশ্বায়নের ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব খর্ব
হয়েছে ।
1970 -এর দশকের গোড়ায় ব্রেটনউডস্ ব্যবস্থার ( Brettonwoods System )
পতনের পর বাজার ও রাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটেছে । এর পরিণতিতে জাতীয়
সীমানা অতিক্রান্ত পুঁজির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাষ্ট্রের জাতীয়
অর্থনৈতিক সার্বভৌমিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে ।
2. অর্থনৈতিক বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের
জোগানের জন্য যথেষ্ট দেশীয় সম্পদ সৃষ্টিতে অক্ষম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই
তাদের নিজের দেশে বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ।
3. মুক্ত বাণিজ্যের অনুকূলে যে সমস্ত পরিবর্তন ঘটেছে তা
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা খর্ব করেছে । বিশ্বের চারদিকে পুঁজির চলাচল বৃদ্ধি
পেয়েছে ও নিজেদের মুদ্রার ওপর জাতি-রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়েছে ।
4. বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় রাষ্ট্রের সীমা ও গুরুত্ব
অনেকাংশে হ্রাস পায় । এখানে রাষ্ট্রকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আন্তর্জাতিক
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাকে লিপ্ত হতে হবে । বহুজাতিক সংস্থা এবং
পণ্যসামগ্রীর অবাধ যাতা-য়াতের রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে না । সুতরাং,
বিশ্বায়নের সঙ্গে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় ।
রবার্ট হলটন প্রদত্ত যুক্তিসমূহ :-
রবার্ট জে হলটন ( Robert J. Holton ) -এর মতে
"অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে জাতি - রাষ্ট্রগুলির বিনাশ ঘটেছে বা তাদের
সার্বভৌমত্বের বিনাশ ঘটেছে" – এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় । তিনি তাঁর
'Globalisation and the Nation State'
গ্রন্থে বিষয়টির উল্লেখ করেছেন ।
1. অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রভাব সমস্ত দেশের পক্ষে একই
রকম নয় । প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবের তারতম্য পরিলক্ষিত
হয় ।
.
2. অতিজাতীয় বা সীমানা অতিক্রান্ত লেনদেনের প্রভাব ও তা
নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার দিক থেকে জাতিগুলির সামর্থ্য সমান নয় । যেমন — মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র ( US ), জাপান ও জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশ, প্রভৃতি রাষ্ট্রের
মধ্যে সামর্থ্যের পার্থক্য রয়েছে ।
উপসংহার :-
শেষে বলা যেতে পারে যে, জাতি-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে
বিশ্বায়নের প্রভাব সব দেশে সমান নয় ।
বিশ্বায়িত অর্থনীতির যুগে রাষ্ট্রগুলির চরম ও অসীম সার্বভৌমত্বের ধারণা
বাস্তব সম্মত নয় ।
এক্ষেত্রে অধ্যাপিকা সুশীলা রামস্বামী ( Sushila Ramaswami )
বিশ্ব সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের মিলনসাধনের কথা বলেছেন ।