বিশ্বায়ন কি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিরোধী ? —তোমার মতামত ব্যক্ত করো ।

বিশ্বায়ন কি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিরোধী ? —তোমার মতামত ব্যক্ত করো ।

  অথবা,

   বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো ।

Ans. বিশ্বায়ন হল এমন এক প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে প্রবাহিত হয়, অর্থ ও পুঁজি এক্ষেত্রে উল্লেখ্য । বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিশ্বব্যাপী যে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো গড়ে ওঠার প্রকিয়া শুরু হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতাকে সংকটের সম্মুখীন করেছে ।

 বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট :-
           যে রাজনৈতিক প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, বিশ্বায়নের ফলে জাতি - রাষ্ট্রগুলির বিনাশ ঘটেছে কি না তা দেখা । রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম ক্ষমতার সংকোচন ঘটেছে । কিন্তু, কার্যত রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম ক্ষমতার বিনাশ ঘটেছে কি না বা বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি আজ আর সত্যিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী কি না সে প্রশ্নটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এ বিষয়ে দুই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিদদের পরস্পর বিরোধী মতামত লক্ষ করা যায় ।


 স্কট বারচিল প্রদত্ত যুক্তিসমূহ :-
      স্কট বারচিল ( Scot Burchill ) রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার সংকটের দিক থেকে বিশ্বায়নের প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেছেন —

   1. বিশ্বায়নের ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়েছে ।

  1970 -এর দশকের গোড়ায় ব্রেটনউডস্ ব্যবস্থার ( Brettonwoods System ) পতনের পর বাজার ও রাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটেছে । এর পরিণতিতে জাতীয় সীমানা অতিক্রান্ত পুঁজির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক সার্বভৌমিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে ।

   2. অর্থনৈতিক বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানের জন্য যথেষ্ট দেশীয় সম্পদ সৃষ্টিতে অক্ষম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই তাদের নিজের দেশে বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ।

   3. মুক্ত বাণিজ্যের অনুকূলে যে সমস্ত পরিবর্তন ঘটেছে তা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা খর্ব করেছে । বিশ্বের চারদিকে পুঁজির চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে ও নিজেদের মুদ্রার ওপর জাতি-রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়েছে ।

   4. বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় রাষ্ট্রের সীমা ও গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায় । এখানে রাষ্ট্রকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাকে লিপ্ত হতে হবে । বহুজাতিক সংস্থা এবং পণ্যসামগ্রীর অবাধ যাতা-য়াতের রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে না । সুতরাং, বিশ্বায়নের সঙ্গে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় ।


 রবার্ট হলটন প্রদত্ত যুক্তিসমূহ :-
     রবার্ট জে হলটন ( Robert J. Holton ) -এর মতে "অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে জাতি - রাষ্ট্রগুলির বিনাশ ঘটেছে বা তাদের সার্বভৌমত্বের বিনাশ ঘটেছে" – এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় । তিনি তাঁর 'Globalisation and the Nation State' গ্রন্থে বিষয়টির উল্লেখ করেছেন ।

   1. অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রভাব সমস্ত দেশের পক্ষে একই রকম নয় । প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবের তারতম্য পরিলক্ষিত হয় ।
.
   2. অতিজাতীয় বা সীমানা অতিক্রান্ত লেনদেনের প্রভাব ও তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার দিক থেকে জাতিগুলির সামর্থ্য সমান নয় । যেমন — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( US ), জাপান ও জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশ, প্রভৃতি রাষ্ট্রের মধ্যে সামর্থ্যের পার্থক্য রয়েছে ।


 উপসংহার :-
     শেষে বলা যেতে পারে যে, জাতি-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিশ্বায়নের প্রভাব সব দেশে সমান নয় । বিশ্বায়িত অর্থনীতির যুগে রাষ্ট্রগুলির চরম ও অসীম সার্বভৌমত্বের ধারণা বাস্তব সম্মত নয় ।

   এক্ষেত্রে অধ্যাপিকা সুশীলা রামস্বামী ( Sushila Ramaswami ) বিশ্ব সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের মিলনসাধনের কথা বলেছেন ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.