প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগঃ
প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে
বাজারের শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব । প্রত্যেক দ্রব্যের বাজারেই ক্রেতা এবং
বিবিক্রেতা এই দুটি পক্ষ থাকে । ক্রেতা এবং বিক্রেতার সংখ্যা অনুযায়ী
দ্রব্যটির চাহিদা এবং জোগানের তারতম্য ঘটে থাকে । ক্রেতা এবং বিক্রেতার
সংখ্যা এবং দ্রব্যের প্রকৃতি অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন ধরনের বাজার পেতে পারি ।
প্রধান প্রধান কয়েকটি বাজারের রূপ এখানে বর্ণনা করা হল :—
এইরূপ বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা
থাকে । প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রত্যেক ক্রেতা ও বিক্রেতা বাজারের একটি
ক্ষুদ্র অংশ দখল করে থাকে । ফলে কোনো বিক্রেতা বা ক্রেতার পক্ষে বাজারকে
প্রভাবিত করা সম্ভব হয় না । এই বাজারের অপর বৈশিষ্ট্য এই যে, সকল বিক্রেতাই
এক জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করে এবং যে - কোনো ক্রেতা বা যে - কোনো বিক্রেতা
ইচ্ছামতো বাজারে প্রবেশ করতে পারে বা বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে । পূর্ণ
প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অবস্থা সম্পর্কে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা পূর্ণ সচেতন
থাকে । উৎপাদনের উপাদানগুলি সম্পূর্ণভাবে গতিশীল হয় এবং উৎপাদন ব্যয় ব্যতীত
অন্য কোন ব্যয় থাকে না ।
এই ধরনের বাজারে একজন মাত্র
বিক্রেতা এবং অনেক কেতা থাকে । বাজারে একজন বিক্রেতা থাকায় বিক্রেতার পক্ষে
দাম বা দ্রব্যের পরিমাণ প্রভাবিত করা সম্ভব । বিক্রেতা কম পরিমান
দ্রব্য বিক্রি করে বেশি দাম আদায় করতে পারে বা বেশি
বিক্রি করে কম দাম আদায় করতে পারে ।
❸একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার ( Monopoliatic competition ) :-
এই বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও
বিক্রেতা থাকে । তাছাড়া এখানেও বাজারে প্রবেশ করার বা বাজার থেকে বের হয়ে
যাবার স্বাধীনতা থাকে কিন্তু পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ন্যায় সকল
বিক্রেতা এখানে সমজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করে না । প্রতিটি বিক্রেতা এমন একটি
প্রব্য বিক্রয় করে যা অপরের দ্রব্য থেকে পৃথক । ওই বিশেষ দ্রব্য আর কেউ
বিক্রি করছে না কিন্তু একচেটিয়া বিক্রেতার কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্তিত দ্রব্য
বাজারে থাকে না । তবে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিটি বিক্রেতার
বিক্রিত দ্রব্যের ঘনিষ্ঠ পরিবর্তিত দ্রব্য থাকে । একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক
বাজারে প্রতিটি বিক্রেতাকেই উৎপাদন ব্যয় ছাড়া কিছুটা বিজ্ঞাপন ব্যয়ও করতে
হয় ।
যে বাজারে অনেক ক্রেতা
কিন্তু স্বল্প সংখ্যক বিক্রেতা থাকে তাকে অলিগোপলি বলে । প্রত্যেক বিক্রেতা
একটি সমজাতীয় দ্রব্য বা পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে । যদি সকলেই
একজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করে তবে সেই বাজারকে বলে বিশুদ্ধ অলিগোপলি ( Pure
Oligopoly ) । আর যদি সকলে পৃথকীকৃত দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে তবে সেই
বাজারকে বলে পৃথকীকৃত অলিগোপলি ( Differentiated Oligopoly ) ।
স্বল্পসংখ্যক বিক্রেতা থাকার ফলে এই
বাজারে বিক্রেতাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থাকে । একজনের কাজকর্ম
অন্যকে প্রভাবিত করে থাকে । স্বল্পসংখ্যক বিক্রেতা বলতে ঠিক কতজন বিক্রেতা
বোঝায় তার কোনো বাঁধা - ধরা নিয়ম নেই । তবে বিক্রেতার সংখ্যা একের বেশি,
কিন্তু অসীম নয় । যদি বিক্রেতার সংখ্যা দুই হয় , তাহলে সেটি অলিগোপলি
বাজারের একটি বিশেষ রূপ । একে বলে ডুয়োপলি বাজার ( Duopoly Market ) ।
যে বাজারে একজন মাত্র
বিক্রেতা এবং একজন মাত্র ক্রেতা থাকে তাকে বলে দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া । এরূপ
বাজারে দাম নির্ধারণে বিক্রেতা ও ক্রেতার যৌথ দর কষাকষি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ
করে ।
❻
একচেটিয়া ক্রেতা ( Monopsony ) :-
এই বাজার একচেটিয়া বিক্রেতার
পরিপুরক রূপ । অন্যান্য সকল অবস্থা একচেটিয়া বিক্রেতাযুদ্ধ বাজারের মতোই বজায়
থাকে । বিক্রেতারা যদি পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রি করে তবে এই বাজারকে একচেটিয়া
ক্রেতার প্রতিযোগিতামূলক বাজার ( Monopsonistic Competition ) বলে ।
❼ অলিগোপসিন ( Oligopsony ) :-
এই বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্রেতা এবং অনেক বিক্রেতা থাকে । অন্যান্য শর্তাদি অলিগোপলি বাজারের অনুরূপ । এটি অলিগোপলির পরিপুরক রূপ ।