জালিওনাবাগ হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট বা সম্পূর্ন আলোচনা class 12 2022-23

 ঃ জালিওনাবাগ হত্যাকান্ড ঃ



সূচনা :-
    ১৯১৯ সালে দমনমূলক রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারতের সর্বত্র রাওলাট সত্যাগ্রহ আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয় । এই আন্দোলন পাঞ্জাবে ব্যাপক আকার ধারণ করলে, দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটিয়েছিল ।

অত্যাচারের তীব্রতা বৃদ্ধি :-
         পাঞ্জাবের প্রশাসক গভর্নর জেনারেল মাইকেল ও জায়ের এর অত্যাচারের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের মানুষ সমবেত হয়েছিল ।

বল প্রয়োগ :-
         সরকার ভারতীয়দের যাবতীয় স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে নিষ্ঠুর দমনমূলক আইন প্রবর্তন করে । যার ফলে সমগ্র দেশবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে ।

নেতৃত্ব বদ্ধ গ্রেপ্তার :-
       সরকার ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল অমৃতসরের স্থানীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে । এই গ্রেফতারের ফলে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে ।

সামরিক শাসন জারি :-
         আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করলে মাইকেল ও জায়রের নেতৃত্বে সামরিক আকার ধারণ করে । ফলে অমৃতসর সভার সমাবেশ নিষিদ্ধ হয় ।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ :-
        ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল জালিওনাবাগ সভায় প্রায় ১০ হাজার জনতার সমাবেশ হয়েছিল । মাইকেল ও জিয়রের নির্দেশে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী দশ মিনিট ধরে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে প্রায় কয়েক হাজার জনতা কে হত্যা করেছিল । ইতিহাসে সেই ঘটনা জালিয়ানাবাগ হত্যাকান্ড নামে পরিচিত ।


গুরুত্ব বা প্রতিক্রিয়া :-
        এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত নগ্নরূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে । দেশ ও বিদেশে সর্বত্রই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ।

ক্ষোভ :-
    জালিওনাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে উত্তর - দক্ষিণ - পূর্ব - পশ্চিম ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয় কে আন্দোলিত করেছে ।

উপাধি ত্যাগ :-
     হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া "নাইট উপাধি" ত্যাগ করেন । ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করার জন্য তিনি তাঁর বইয়ের পাতায় লেখেন – 'মর্যাদা থেকে মুক্ত হয়ে আমার দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে চাই' ।

কংগ্রেসের প্রতিবাদ :-
        সেই সময়কার কংগ্রেস নেতা এই ঘটনাকে কসাই খানার হত্যাকাণ্ডের সাথে তুলনা করে তিনি তীব্র নিন্দা করেছেন । গান্ধীজী তাঁর ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকার লিখেছেন – এই শয়তান সরকারকে অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে ।

ইংরেজদের প্রতিবাদ :-
        ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন যে তার মতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনও ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না ।


উপসংহার:-
       জালিওনাবাগ হত্যাকাণ্ডের ভারতীয়দের তীব্র বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হয়েছিল । যার প্রভাব দেখা গিয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনেও ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.