স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান

স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ।


সূচনা :-
    ভারতের রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর আবির্ভাব উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো । শিক্ষাগুরু বেণিমাধব দাশ, রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ও সর্বোপরি আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুরু স্বামী বিবেকান্দের অনুপ্রেরণাতেই ICS পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেও লোভনীয় চাকুরি ত্যাগ করে দেশমাতার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেন । ছাত্রাবস্থাতেই সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশ - বিরোধী মন্ত্রে দীক্ষিত হন । এবং জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন ।

কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধিতা এবং ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন :-
        ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধিপন্থী ব্যক্তিবর্গ তাঁর কাজে চরম অসহযোগিতা করলে তিনি ওই পদ স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেন এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে 'ফরওয়ার্ড ব্লক' নামে একটি নতুন দল গঠন করেন । এই ঘটনায় গান্ধীজী দারুণভাবে ক্ষুদ্ধ হন এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সুভাষচন্দ্র বসুকে তিন বছরের জন্য কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করেন ।

সুভাষচন্দ্র বসুর দেশত্যাগ :-
       দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই 'ভারত সুরক্ষা' আইনে সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করেন । কয়েক মাস পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে তাঁর বাসভবনে নজরবন্দি করে রাখা হয় । সেখান থেকে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি গৃহত্যাগ করেন । পুলিশের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু গিয়াসউদ্দিনের ছদ্মবেশে কাবুল হয়ে সন্ধেবেলায় মস্কোয় উপস্থিত হন ।

 জার্মানিতে সুভাষচন্দ্ৰ :-
       সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান হিটলার ও ইটালির রাষ্ট্রপ্রধান মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । উভয় রাষ্ট্রপ্রধান তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বতোভাবে সহায়তাদানের প্রতিশ্রুতি দেন । সুভাষচন্দ্র বসু জার্মান সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় —
 ① বার্লিনে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে 'আজাদ হিন্দুস্তান' বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন 'নাম্বিয়ার' নামে একজন দেশপ্রেমিক ।
জার্মানির হাতে বন্দি ৪০০ ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে 'স্বাধীন ভারতীয় লিজন' ( Free India Legion ) নামে এক সেনাদল গঠন করেন ।

         এই সেনাদল সুভাষচন্দ্র বসুর দেশপ্রেম ও বিপ্লবী আদর্শের প্রতি অন্ধাশীল হয়ে সর্বপ্রথম তাঁকে 'নেতাজি' অভিধায় ভূষিত করে এবং ‘জয় হিন্দ' ধ্বনি দিয়ে অভিবাদন জানায় ।

জাপানে সুভাষ বসু :-
       এখানে জাপানের হাতে বন্দি প্রায় ৪০,০০০ ব্রিটিশ - ভারতীয় সেনাদের নিয়ে রাসবিহারী বসু ও ক্যাপটেন মোহন সিং যে - আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেছিলেন ।  তাদের আত্মত্যাগ, আত্মবিশ্বাস ঐক্যের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে কতগুলি ব্রিগেডে বিভক্ত করেন । যেমন— ( ক ) গান্ধি ব্রিগেড, ( খ ) আজাদ ব্রিগেড, ( গ ) নেহরু ব্রিগেড, ( ঘ ) ঝাঁসি রানি ব্রিগেড ইত্যাদি ।

আজাদ হিন্দ সরকার গঠন :-
       ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে সুভাষ বসুর নেতৃত্বে 'আজাদ হিন্দ সরকার' স্থাপিত হয় । জাপান জার্মানি, ইটালিসহ দশ - টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় ।
      জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তুলে দেন । এই দুটি দ্বীপের নাম রাখেন 'শহিদ' ও 'স্বরাজ' দ্বীপ ।

       এই সময় নেতাজি দেশবাসীকে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আবেদন জানিয়ে ঘোষণা করেন , - "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব । ( Give me Blood, I shall give you freedom ) ।"

 দিল্লি চলো অভিযান :-
      নেতাজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি রেঙ্গুনে পৌঁছে তিনি তার বাহিনীর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন ।

      এরপর শুরু হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান । নেতাজি তাঁর বাহিনীকে আহ্বান জানান— "দিল্লি চলো" , "দিল্লির পথ স্বাধীনতার পথ" , "কদম কদম বাঢ়ায়ে যা ।"

আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মসমর্পণ :-
     ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয় । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে । স্বদেশ রক্ষার জন্য জাপান ব্রহ্মদেশ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয় ও জাপান মিত্র শক্তির নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় । জাপানের সহযোগিতা না - পাওয়ায় আজাদ হিন্দ ফৌজও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ।

      নেতাজি আরও একবার শক্তি পরীক্ষার আশায় বিমানে উঠলেন । কিন্তু সেই আশা দুরাশায় পরিণত হল । প্রচারিত হল "তাইহোকু বিমান" বন্দরে নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.