নৌ - বিদ্রোহের সূচনা ও প্রসার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা

১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো :
 ১.১ ) রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়
      - ১৮১৩ খ্রীঃ / ১৭৯৩ খ্রীঃ / ১৮৩৩ খ্রীঃ / ১৭৭৩ খ্রীঃ । 

 ১২ ) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন
      - উইলিয়াম বেন্টিক / উইলিয়াম পিট / লর্ড ওয়েলেসলি / ওয়ারেন হেষ্টিংস ।

 ১৩ ) সিমনোসেকির চুক্তি কবে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ?
          - ১৮৯৫ খ্রীঃ / ১৭৯৩ খ্রীঃ / ১৮৩৩ খ্রীঃ / ১৭৭৩ খ্রীঃ । 

 ১.৪ ) ভারতে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেণ
          - রাখালদাস বন্ধ্যেপাধ্যায় / উইলিয়াম জোন্স / ওয়ারেন হেষ্টিংস / জোনাথান জানকান ।

১.৫ ) ' যত মত তত পথ ' আদর্শের প্রবর্তক ছিলেন
    - শ্রী রামকৃষ্ণ / বিদ্যাসাগর / ডিরোজিও / আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ ।


 ১৬ ) পুনা চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল
     - ১৯২৮ খ্রীঃ / ১৯৩০ খ্রীঃ / ১৯৩২ খ্রীঃ / ১৯৩৬ খ্রীঃ ।


 ১.৭ ) রাওলাট কমিশনের অপর নাম
        - সিডিশন কমিটি / সাইমন কমিশন / অ্যাথওয়ার্থ কমিশন / হুইটলি কমিশন ।

 ১.৮ ) ‘ রশিদ আলি দিবস ' পালিত হয় 
       - চিন- জাপান / রুশ - চিন / ইন্দ - চিন ।

 ১.৯ ) ‘ লৌহমানব ’ রূপে পরিচিত 
      - জওহর লাল নেহেরু /আবুল কালাম আজাদ / সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল / সুভাষচন্দ্র বসু ।



 ২. নিম্ন লিখিত প্রশ্লগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও ।  

1. নীম্ন বর্গের ইতিহাস চরচার জনক কে ?
 👉 রনজিৎ গুহ্ ।

 2. সত্যশোধক শোধক সমাজ কে প্রতিষ্টা করেন ?
 👉 দয়ানন্দ সরসতী ।

 3. চীনে কবে টাইপিং বিদ্রোহ হয়েছিল ?
 👉 ১৮৫০ - ৫৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ।

4. আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক কে ?
👉 ইবন খালদুন ।

5. বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান কে ?
👉 ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ ।

6. চিনে ইউরোপীয় বানিজ্যের সূত্রপাত হয় কোন বন্দরের মাধ্যমে ?
 👉 ক্যান্টন বন্দর দিয়ে ।

7. বক্সারের যুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ?
👉 ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর তাদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনীর সাথে বক্সার নামক স্থানে ইংরেজ সৈন্যদের ঘোরতর যুদ্ধ হয় তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত ।

8. পলাশির যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ?
👉 ১৭৫৭ সালের জুন ২৩ তারিখে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ও ফরাসি মিত্রদের সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী নামক স্থানে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাই পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

9. আজাদ হিন্দ ফৌজ এর অ্যানথেম কি ছিল ?
 👉 "কদম কদম বাঢ়ায়ে যা" ।

 10. আজাদ হিন্দ ফৌজ এর মহিলা ব্রিগেডের নাম কি ছিল ?
 👉 ঝাঁসি রানী ব্রিগেড ।

 11. সুভাষচন্দ্র বসু ছদ্মবেশে বিদেশে পলায়নের সময় পাসপোর্টে কোন নাম ব্যবহার করেছিলেন ?
 👉 মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ।

 12. সুভাষচন্দ্র বসুকে যখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় তখন কংগ্রেসের সভাপতি কে ছিলেন ?
 👉 রাজেন্দ্র প্রসাদ ।

 13. ' সুভাষচন্দ্ৰ ' বাঙালি কবি আমি , বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি " সুভাষচন্দ্র বসুকে আশীর্বাদ করে এ কথা কে বলেছিলেন ?
 👉 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

 14. কোন শহরে সুভাষচন্দ্র বসু গঠন করেছিলেন ' ফ্রী ইন্ডিয়ান লিজিয়ন ' ?
 👉 বার্লিন শহরে ।

 15. কোন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় আজাদ হিন্দ সরকার ?
 👉 সিঙ্গাপুর ।

 16. আজাদ হিন্দ ফৌজ মোট কয়টি ব্রিগেড এ বিভক্ত ছিল ?
 👉 5 টি ।

 17. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম কি ?
 👉 'তরুণের স্বপ্ন' ।


 3)
 3.1)  নৌ - বিদ্রোহের সূচনা ও প্রসার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো ৷ এই বিদ্রোহে জাতীয় নেতাদের ভূমিকা কী ছিল ?
 👉 সূচনা :- 
    ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্তিম লগ্নে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮-২৩ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত নৌ - বিদ্রোহ বা Royal Navy- বিদ্রোহ । আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের পর ভারতের তলোয়ার জাহাজ ২ যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই নৌ - বিদ্রোহ যার মধ্য দিয়ে ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধে নাবিকদের অভ্যুত্থান ও প্রতিবাদ ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে । ড . সুমিত সরকারের মতে ‘ যা ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপাখ্যানগুলির মধ্যে সবচেয়ে বীরোচিত । ' মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্তের মতে , ' নৌ - বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে , ( Signal of the new era opening in India ) ।

 বর্ণ বৈষম্য :- ভারতীয় নাবিক তথা নৌ - সেনারা ইংরেজ অফিসারদের কাছে সর্বদাই লাঞ্ছিত হতেন । শ্বেতাঙ্গ নৌসেনারা আচারণ করত । কৃয়াঙ্গ ভারতীয় সেনাদের জাতিগত কারণে ঘৃণা , অভদ্রতা অশালীন ।

বেতন বৈষম্য :- ভারতীয় নৌসেনাদের একই যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ইউরোপীয় নৌসেনাদের তুলনায় অনেক কম বেতন দেওয়া হত , যা ছিল সম্পূর্ণ বে - আইনি ।

নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ :-  ইউরোপীয় নৌসেনারা উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য সামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণে পেলেও , ভারতীয় নৌসেনাদের নিকৃষ্ট ও যথেষ্ট কম পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হত ।

পদোন্নতির অভাব :-  যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় নৌসেনাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগই ছিল না । অন্যদিকে ইউরোপীয় নৌসেনাদের দ্রুত পদোন্নতি হত ।

নৌসেনাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিপজ্জনক জায়গায় যুদ্ধে পাঠানো :-  বেছে বেছে ভারতীয় সেনাদেরই সেই বিপদজনক কেন্দ্রে যুদ্ধে পাঠানো হত যেখানে প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিল বেশি , যে কারণে ভারতীয় সেনাদের ক্ষোভ বৃদ্ধি পায় ।

 বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব :-  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ব্রিটিশ সরকার রাজকীয় নৌবাহিনীতে প্রচুর ভারতীয়দের নিয়োগ করেন । কিন্তু যুদ্ধের পর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ব্রিটিশ সরকার ব্যাপকভাবে ভারতীয় সেনাদের ছাঁটাই করা শুরু করে । 

অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির প্রভাব :-  ভারতের অভ্যন্তরে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন , কলকাতায় পুলিশের গুলিতে রামেশ্বর হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন , পুলিশ বাহিনীর ধর্মঘট , বিমান বাহিনীর ধর্মঘট ইত্যাদি ঘটনা ভারতীয় নাবিকদের প্রভাবিত করে ।

 আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রভাব :-  আজাদ হিন্দ বাহিনীর দেশপ্রেম আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতীয় নৌ - বাহিনীর দেশীয় নাবিকরা ।

প্রত্যক্ষ কারণ :-  নৌ অধ্যক্ষ এডমিরাল গডফ্রে,  ‘ তলোয়ার ’ নামক যুদ্ধ জাহাজটি পরিদর্শনে এলে জাহাজের বেতারকর্মী বলাই চন্দ্র দত্ত - এর নেতৃত্বে কয়েকজন ভারতীয় নৌকর্মচারী তাদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য জাহাজের গায়ে ইংরেজ ভারত ছাড়ো ’ , ‘ জয়হিন্দ ’ প্রভৃতি দেশপ্রেমমূলক ধ্বনি লিখে রাখেন ।

উপসংহার :-
  যাই - হোক সমালোচনা ও প্রশংসার উর্ধ্বে উঠে বলা যায় যে - মৌবিদ্রোহ ছিল সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের যাত্রাপথের শেষ প্ল্যাটফর্ম , যা অতিক্রম করে ভারতবাসী পায় স্বাধীনতার স্বাদ ।


3.2 )  সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো ।

 👉 সূচনা :-

      ঊনবিংশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় যে সমস্ত ব্যক্তি প্রচলিত ধারনা ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী হয়ে ওঠেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন  রাজা রামমোহন রায় । আধুনিক ভারতের নির্মাতা হিসেবে তাঁ অবদান অনস্বীকার্য ।


সমাজ সংস্কার ::--

      হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কূপ্রথাগুলি দূর করে সামাজিক সংস্কারের লক্ষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দোগ, তিনি গ্রহন করেন ।

  ( ক )  সংস্কার বীরোধিতা ::--

      হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথা, বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ, পণ প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কুসংস্কার প্রথার বীরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান ।

 ( খ )  সতীদাহ প্রথার উদ্দোগ ::--

      রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বীরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন মত প্রকাশ করে জনমত গঠন করতে থাকেন । তাঁর এই আবেদনে সড়াদেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং, ১৮২৯ খ্রিঃ ১৭ নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথাকে বেআইনি বলে ঘোষনা করেন ।

 ( গ )  নারীর মর্যাদার প্রচেষ্টা ::--

     নারী-পুরুষের সমানাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, নারী শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট তৎপরতা দেখান ।


 শিক্ষা সংস্কার ::--

     ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রেও রামমোহন রায় বিশেষ উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করেন । এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য হল –

  ( i )  তিনি নিজ ব্যয়ে ১৮৪২ খ্রিঃ একটি অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের প্রতিষ্টা করেন ।

  ( ii )  ডেভিড হেয়ার এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সাহায্য করেন ।

  ( iii )  ১৮৬২ খ্রিঃ বেদান্ত শিক্ষা প্রসারের উদ্দোগে 'বেদান্ত' কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন ।

  ( iv )  ১৮৩০ খ্রিঃ আলেকজান্ডার জাফের উদ্দোগে সমবাদ কৌমুদি, মিবাৎ-উল-আকবর প্রভৃতি সংবাদ প্ত্র প্রকাশ করেন ।


 মূল্যায়ন :-- 

    রাজা রামমোহন রায়ের আবদানকে নিয়ে বহু পন্ডিতদের মধ্যে মতবীরোধ আছে । তাঁ প্রসংসার সাথে সাথে অনেকেই কঠোর সমালোচনাও করেছেন । সমালোচনার সর্তেও তাঁকে নিঃসন্দেহে নব্য ভারতের অগ্রদূত হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । "রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'ভরত পথিক' বলে চিহ্নিত করেছেন ।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.