📖সম্পদের শ্রেণীবিভাগ কর📖

       "সম্পদের শ্রেণীবিভাগ" —»

📖ভূগোলের ভাষায় কোন বস্তু বা পদার্থ সম্পদ নয়, ওই বস্তু বা পদার্থের মধ্যে যে কার্যকরীতা ও উপযোগিতা থাকে তাকে সম্পদ বলা হয়।এই সম্পদকে প্রধানত কার্যকারিতা ও চাহিদা পূরণের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা হয়।
A)সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ👉 সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে সম্পদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১)প্রাকৃতিক সম্পদ 👉 যে সমস্ত সম্পদ প্রকৃতি থেকে স্বাভাবিক ভাবে পাওয়া যায় তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। সমস্ত প্রাকৃতিক জৈবিক ও অপার্থিব প্রকৃতিজাত  উপাদান হলো প্রাকৃতিক সম্পদ।
উদাহরণ-সূর্যকিরণ,বায়ু প্রবাহ, খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি।












২)মানবিক সম্পদ 👉 মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যা বুদ্ধি ও প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে যে সকল সম্পদ সৃষ্টি করে, তাদের মানবিক সম্পদ বলে।
উদাহরণ-শ্রমিকের কর্মদক্ষতা, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ইত্যাদি।
৩)সাংস্কৃতিক সম্পদ 👉যে সমস্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে মানুষ প্রকৃতির নিরপেক্ষ উপাদানগুলিকে সম্পদে পরিণত করে, সেগুলিকে সাংস্কৃতিক সম্পদ বলে।
উদাহরণ-বিজ্ঞানচেতনা, কারিগরি বিদ্যা, শিক্ষা, প্রকৌশল ইত্যাদি।
B)জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভা👉 জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১)জৈব সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ প্রাকৃতিক পরিবেশের সজীব উপাদান থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাদের জৈব সম্পদ বলে।
উদাহরণ-বনভূমির কাঠ, মৎস্য ক্ষেত্রের মাছ, পশম,দুধ বন্যপ্রাণী ইত্যাদি।








২)অজৈব সম্পদ👉মানুষের ব্যবহারের উপযোগী যেসব জড় সম্পদকে প্রাকৃতিক পরিবেশে কঠিন তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পাওয়া যায়, তাদের অজৈব সম্পদ বলে।
উদাহরণ-জল, আকরিক লোহা, মাটি ইত্যাদি।
C)স্থায়িত্ব বা ক্ষয়িষ্ণুতার তারতম্য অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ 👉স্থায়িত্ব বা ক্ষয়িষ্ণুতার তারতম্য অনুসারে সম্পদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা যথা-
১)পুনর্ভব বা পূরনশীল সম্পদ 👉যেসব সম্পদের যোগান সীমিত এবং বারবার ব্যবহারের ফলে সাময়িকভাবে হ্রাস পায়, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পর পুনরায় যোগান বৃদ্ধি পায় ও ক্ষয় পূরণ হয়ে যায়; তাদের পুনর্ভব বা পূরনশীল বা অক্ষয়িষ্ণু সম্পদ বলে।
উদাহরণ-বনভূমি, মাটির উর্বরতা, মৎস্য ক্ষেত্রের মাছ ইত্যাদি।
২)অপুনর্ভব বা ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ 👉 যে সমস্ত সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং ক্রমাগত ব্যবহার করলে এক সময় নিঃশেষ হয়ে যায়, তাদের অপুনর্ভব বা ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ বলে।
উদাহরণ-কয়লা, খনিজ তেল, আকরিক লোহা ইত্যাদি।
৩)অবাধ বা প্রবাহমান সম্পদ 👉 যে সমস্ত সম্পদ পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করার পরেও ফুরিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই  অর্থাৎ ক্রমাগত ব্যবহার করার পরেও  যাদের জোগানো অবিরত থাকে, তাদের প্রবাহমান বা অফুরন্ত বা মুক্ত গতি বা অবাধ সম্পদ বলে।


উদাহরণ-সূর্যকিরণ, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত থেকে উৎপন্ন জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি।











৪)রুদ্ধ প্রবাহমান সম্পদ 👉 অবাধ্ ও পূরনশীল সম্পদগুলি কখনোই ফুরিয়ে যায় না। কিন্তু এমন অনেক পুনর্ভব সম্পদ আছে যেগুলি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে একসময় নিঃশেষিত হয়ে অপুনর্ভব সম্পদেে পরিণত হতে পারে। এদের রুদ্ধ প্রবাহমান সম্পদ বলে।
উদাহরণ-নির্বিচারে অরণ্যবিনাশের  ফলে একসময় ওই অরণ্য বা বনভূমি অপুনর্ভব সম্পদে পরিণত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বনভূমি হলো রুদ্ধ প্রবাহমান সম্পদ।
৫)আবর্তনীয় গচ্ছিত সম্পদ👉যে সমস্ত অপুনর্ভব সম্পদকে সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায়, তাদের আবর্তনীয় গচ্ছিত সম্পদ বলে।
উদাহরণ-ছাঁট লোহাকে গলিয়ে পুনরায় লোহাতে পরিণত করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। তাই ছাঁট লোহা হলো আবর্তনীয় গচ্ছিত সম্পদ।

D)অবস্থান বা বন্টন অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ👉অবস্থান বা বন্টন অনুসারে সম্পদকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।যথা-

১)একমাত্র লভ্য সম্পদ বা অদ্বিতীয় সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ পৃথিবীর একটিমাত্র জায়গায় পাওয়া যায়, তাদের একমাত্র লভ্য সম্পদ বা অনন্য সম্পদ বা অদ্বিতীয় সম্পদ বলে।
উদাহরণ-গ্রীনল্যান্ডের ক্রায়োলাইট।

২)দুষ্প্রাপ্য সম্পদ👉যেসব সম্পদ সহজে পাওয়া যায় না, পৃথিবীর নামমাত্র কয়েকটি স্থানে পাওয়া যায়; তাদের দুষ্প্রাপ্য সম্পদ বলে।
উদাহরণ-ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার টিন, ভারত ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্র ইত্যাদি।

৩)সহজলভ্য সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া না গেলেও বেশিরভাগ জায়গায় পাওয়া যায়, তাদের সহজলভ্য সম্পদ বলে।
উদাহরণ-কৃষিজমি, বনভূমি ইত্যাদি।

৪)সর্বত্র লভ্য সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া যায়, তাদের সর্বত্র লভ্য সম্পদ বলে।
উদাহরণ-সূর্যালোক, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি।

E)মালিকানার ভিত্তিতে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ👉মালিকানার ভিত্তিতে সম্পদকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১)ব্যক্তিগত সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ মানুষের নিজের অধিকারে থাকে, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে।
উদাহরণ-জমি, বাড়ী, গাড়ি ইত্যাদি।
২)সামাজিক সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ মানুষের সামাজিক চাহিদা মেটায় এবং যাদের মালিকানা সমাজের অধীনে থাকে, তাদের সামাজিক সম্পদ বলে।
উদাহরণ-বিদ্যালয়, পাঠাগার, হাসপাতাল ইত্যাদি।
৩)জাতীয় সম্পদ👉দেশ বা রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সম্পদগুলিকে জাতীয় সম্পদ বলে। এই সম্পদগুলির উপর দেশের সব মানুষের অধিকার আছে।
উদাহরণ-রেলপথ, জাতীয় সড়কপথ, সরকারি অফিস- আদালত ইত্যাদি।
৪)আন্তর্জাতিক সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ নির্দিষ্ট কোন দেশ বা ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতির নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানব জাতির কল্যাণে নিয়োজিত; তাদের আন্তর্জাতিক সম্পদ বা সার্বজনীন সম্পদ বলা হয়।
উদাহরণ-সূর্যালোক, মহাসাগর, বায়ুমণ্ডল ইত্যাদি।
F)অনুভব বা উপলব্ধি অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ👉অনুভব বা উপলব্ধি অনুসারে সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-

১)বস্তুগত সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ স্পর্শযোগ্য এবং পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় যেকোনো একটি অবস্থার অধীন, তাদের বস্তুগত সম্পদ বলে।
উদাহরণ-আকরিক লোহা, কয়লা ইত্যাদি।
২)অবস্তুগত সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ স্পর্শযোগ্য নয় এবং যাদের কোন বস্তুগত অস্তিত্ব নেই, তাদের অবস্তুগত সম্পদ বলে।এই সম্পদগুলি মানুষের সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে পাওয়া যায়।
উদাহরণ-শিক্ষাগত যোগ্যতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, কর্মদক্ষতা ইত্যাদি।
G)প্রাপ্যতা অনুসারে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ👉 প্রাপ্যতা অনুসারে সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১)বিকশিত সম্পদ বা প্রকৃত সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদ শুধুমাত্র গচ্ছিত বা আবদ্ধ অবস্থায় নেই, প্রয়োজন মতো ক্রমাগত ব্যবহার করা হচ্ছে; তাদের বিকশিত বা প্রকৃত বা সমৃদ্ধ সম্পদ বলে।
উদাহরণ-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জলবিদ্যুৎ।
২)সম্ভাব্য সম্পদ👉যে সমস্ত সম্পদের ভৌগোলিক অস্তিত্ব ও ব্যবহারযোগ্যতা থাকা সত্বেও কোন আর্থসামাজিক বা প্রাকৃতিক বাধার কারণে তাদের পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়নি; কিন্তু ভবিষ্যতে ব্যবহার বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে, তাদের সম্ভাব্য সম্পদ বলে।
উদাহরণ-কেনিয়া ও কঙ্গোর সম্ভাব্য জলবিদ্যুৎ, ভারতের সম্ভাব্য সৌরবিদ্যুৎ ইত্যাদি।
Label Name

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.