👉যে নির্দিষ্ট গতিতে সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অনবরত ঘুরে চলেছে, তাকে আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতি বলা হয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতি চোখে দেখা না গেলেও পৃথিবীপৃষ্ঠে এই গতির বিশেষ কতকগুলি প্রভাব বা ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে পৃথিবীর আহ্নিক গতির বা আবর্তন গতির ফলাফল গুলি আলোচনা করা হলো-
১)দিন-রাত্রি সংঘটন-আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে দিন-রাত্রি সংঘটিত হয়।আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের সামনে আসে তা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় এবং সেখানে হয় দিন। আবার এর ঠিক বিপরীত অংশে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না বলে সেখানে হয় রাত্রি। এইভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠে পর্যায় ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হয়।
২)নিয়ত বায়ুপ্রবাহের গতি বিক্ষেপ-পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে উদ্ভূত কোরিওলিস বলের প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠে নিয়ত বায়ু প্রবাহের গতি বিক্ষেপ ঘটে। এক্ষেত্রে বায়ু সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। Future Point
৩)সমুদ্র স্রোতের দিক পরিবর্তন-পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে উদ্ভূত কোরিওলিস বলের প্রভাবে নিয়ত বায়ু প্রবাহের মতো পৃথিবীপৃষ্ঠে সমুদ্র স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে সমুদ্রস্রোতগুলিও উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
৪)সময় গণনা-পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমাদের সময় গণনার সুবিধা হয়েছে। পৃথিবীর মোট আবর্তন কালকে 24টি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে 1 ঘন্টা ধরা হয়। আবার এই 1 ঘন্টাকে 60টি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে 1 মিনিট এবং এই 1 মিনিটকে 60টি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে 1 সেকেন্ড ধরা। এইভাবে ঘন্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের দ্বারা সময় নি করা হয়। Future Point
৫)স্থানীয় সময়ের পার্থক্য-পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সময়ের পার্থক্য ঘটে। আবর্তন গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে বলে পূর্ব দিকের দেশগুলিতে আগে সূর্যোদয় হয় এবং সেখানকার দেশগুলির স্থানীয় সময় এগিয়ে থাকে। আবার পশ্চিম দিকের দেশগুলিতে সূর্যোদয় পরে হয় বলে সেখানকার দেশগুলির স্থানীয় সময় পিছিয়ে থাকে।
৬)জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি-প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে যে স্থান যে সময়ে চাঁদের সামনে আসে তখন সেখানকার জলরাশি ফুলে ওঠে ও জোয়ার সৃষ্টি হয় এবং তার সমকোণে অবস্থিত জলরাশি জোয়ারের টানে সরে যাওয়ার কারণে ভাটার সৃষ্টি হয়।
৭)উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সৃষ্টি-আবর্তন গতির প্রভাবে পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। কারণ আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীতে দিনরাত্রি হয়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। আবর্তন গতি না থাকলে পৃথিবীর সূর্যের সম্মুখের অংশ চির আলোকিত এবং সূর্যের বিপরীত দিকের অংশ চির অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতো। ফলে পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্ম ও বৃদ্ধি সম্ভব হতো না।
৮)বায়ু চাপ বলয় সৃষ্টি-পৃথিবীতে মোট ৭ টি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় আছে। এইসব বায়ুচাপ বলয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে আবর্তন গতির পরোক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন-আবর্তন গতির প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ বিক্ষিপ্ত হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলে, সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরু বৃত্তেের সন্নিকটে নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে এবং কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখা, সুমেরু ও কুমেরু বিন্দুর সন্নিকটে উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে। Future Point
৯)পৃথিবীর চুম্বকত্ব সৃষ্টি-আবর্তন গতির জন্য পৃথিবী একটি অতিকায় চুম্বক হিসেবে কাজ করে এবং পৃথিবীর উপরিস্থিত যাবতীয় বস্তুকে পৃথিবী তার নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে।
১০)সৌরতাপের বন্টন-পৃথিবী তার কক্ষ তলের সঙ্গে 66½° কোণে হেলে থেকে আবর্তন করার জন্য ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সূর্যকিরণ সমান ভাবে পড়েনা। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সৌরতাপের বন্টন গত তারতম্যের কারণে উষ্ণতার পার্থক্যয লক্ষ্য করা যায়।