জাদুঘরের প্রকারভেদ আলোচনা করো ।

🗿মিউজিয়াম বা জাদুঘরের প্রকারভেদ আলোচনা করো ।

উত্তরঃ
 জাদুঘরের বিকাশ – 
           সমাজ তার অতীতকে জানতে চায় । তার ঐতিহ্যকে জানতে চায় । এই উদ্দেশ্যে সুদূর অতীত কালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলন হয় বিভিন্ন জাদুঘর প্রতিষ্ঠার । এই বিকাশের ধারায় প্রাচীন জাদুঘর গুলি বর্তমান যুগের আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত জাদুঘরে পরিণত হয়েছে ।


🔶 প্রাচীন জাদুঘরঃ 
            জনগণের প্রবেশাধিকারের ভিত্তিতে প্রাচীন জাদুঘরগুলিকে দু-ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন – ক. ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর এবং খ. ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর ।

✒️ (ক). ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর : এই সময় কালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরগুলিতে সর্বসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল না । এই সমস্ত জাদুঘরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 

  (১). মেসোপটেমিয়ার এননিগালডি-নান্না-র জাদুঘর (সবচেয়ে প্রাচীন, ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত) ।
  (২). আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘর ।
  (৩). রোমের ক্যাপিটোলাইন মিউজিয়াম : এটি পঞ্চদশ শতকে পোপ চতুর্থ সিক্সটাস প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৪৭১ খ্রিস্টাব্দ ) । সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরগুলির মধ্যে এটি ছিল প্রথম । (এটি ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়) । 


✒️ (খ). ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ – ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর :  সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু হয় । এই প্রদর্শনের সমস্ত জাদুঘরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  (ক). ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস প্রতিষ্ঠিত ইটালিতে ভ্যাটিকান মিউজিয়াম ।
  (খ). লন্ডনের রয়াল আরমারিজ (১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতি ।

🔶 আধুনিক জাদুঘরঃ
                    বর্তমান কালে পৃথিবীর সর্বত্রই ছোটো - বড়ো বিভিন্ন আকারের জাদুঘর দেখা যায় । অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘরগুলি বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে অবস্থিত । আধুনিক জাদুঘরগুলিকে দুটি পর্বে বিভক্ত করা যায়, যেমন - 

✒️ (১). প্রথম পর্বের আধুনিক জাদুঘর : এই পর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য জাদুঘরগুলি হল –

  (ক) ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ মিউজিয়াম ।
  (খ) ফ্লোরেন্সের উফ্‌ফিজি গ্যালারি ।
  (গ) ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত বর্তমান কালের সুবৃহৎ ও সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ল্যুভর মিউজিয়াম প্রভৃতি ।

✒️ (২). ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর :  এই সময়কালের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক উদ্যোগ দেখা যায় এবং বহু নতুন নতুন জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় । তাই এই সময়কালকে ‘জাদুঘরের যুগ’ বলে অভিহিত করা হয় । এই কালপর্বে যে - সকল জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা হল –

  (ক) ‘ডালাস মিউজিয়াম অভ্ আর্ট’ (ডালাস ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ) ।
  (খ) ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল’ (কলকাতা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ) ।
  (গ) ‘দ্য মিউজিয়াম অভ্ মডার্ন আর্ট’ (নিউইয়র্ক ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতি ।


 জাদুঘরের প্রকারভেদঃ —  
         বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের জাদুঘর গড়ে উঠেছে । “International Council of Museum's” – এর মতে বর্তমানে বিশ্বের ২০২ টি দেশে প্রায় ৫৫,০০০ -এরও বেশি জাদুঘর গড়ে উঠেছে । প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলির ভিত্তিতে এইসব জাদুঘরকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন –

  [1] বিশ্বকোশ জাদুঘর :– বিশ্বকোশ জাদুঘর বলতে সুবৃহৎ বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরকে বোঝায়, যেখানে বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের সুযোগ থাকে এবং স্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ে অসাধারণ সংগ্রহ থাকে । উদাহরণ – লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম ।


  [২] প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর :– এখানে কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয় । উদাহরণ – রোমান ফোরাম, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম প্রভৃতি ।


  [৩] শিল্প জাদুঘর :– এখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় । উদাহরণ – অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অ্যাসমোলিয়ান জাদুঘর' ।


  [8] ঐতিহাসিক জাদুঘর :– কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় । উদাহরণ – মুরশিদাবাদে অবস্থিত হাজারদুয়ারি ।


  [৫] জীবন্ত জাদুঘর :– প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রা অনুকরণ করে যেসব জাদুঘরে দর্শকদের দেখানো হয় তা জীবন্ত জাদুঘর নামে পরিচিত । উদাহরণ –১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আর্থর হ্যাজেলিয়াস প্রতিষ্ঠিত সুইডেনের ‘স্কানসেন মিউজিয়াম’ ।


  [৬] সমুদ্র জাদুঘর :– প্রাচীন কালের সমুদ্রজীবন - সংক্রান্ত সংগ্রহশালা । এখানে বিশেষ করে জাহাজ - সংক্রান্ত নিদর্শন প্রদর্শন করা হয় । উদাহরণ – ভার্জিনিয়ার মেরিনার্স মিউজিয়াম ।


  [৭] সামরিক জাদুঘর :– কোনো দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধ - সংক্রান্ত নানা নিদর্শন প্রদর্শন করা হয় এখানে । উদাহরণ – ‘দ্য ন্যাশনাল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার মিউজিয়াম’ , কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম প্রভৃতি ।


  [৮] বিজ্ঞান জাদুঘর :– বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন , বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ে নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে এই জাদুঘর । উদাহরণ – শিকাগোর মিউজিয়াম অভ্ সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ।


  [৯] জৈব পার্ক ও বৃক্ষের বাগান :– চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের বাগান এক ধরনের জাদুঘর বলে বিবেচিত হয় । কারণ, জাদুঘরের মতো এগুলিরও লক্ষ্য হল নিদর্শন সংগ্রহ সংরক্ষণ, প্রদর্শন, শিক্ষাদান প্রভৃতি । উদাহরণ – লন্ডন জু, শিকাগো বোটানিক গার্ডেন, কলকাতা চিড়িয়াখানা প্রভৃতি ।


  [১০] শিশুদের জাদুঘর :– সম্পূর্ণভাবে শিশুদের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের জাদুঘর গড়ে তোলা হয় । শিশুদের অপ্রথাগত ভাবে শিক্ষার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত । উদাহরণ – কলকাতার নেহরু চিল্ড্রেন মিউজিয়াম ।


  [১১] চলমান জাদুঘর :– যখন কোনো চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়, তখন তাকে চলমান জাদুঘর বলে । উদাহরণ –২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁর জীবনকাহিনিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল একটি ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.